দিল্লি, ৮ নভেম্বর– শত চেষ্টা করেও বাগে আনা যাচ্ছে না নজরে ডি-কোম্পানি। সেই ডি কোম্পানি ফের ভারতে বড়সড় সন্ত্রাসবাদী হামলার ছক কষছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এর এই সতর্কবার্তায় ঘুম ছুটেছে নিরাপত্তা সংস্থার কর্তাদের।
গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, মুম্বই, সুরাত সহ দেশের নানা জায়গায় সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য টাকা জোগাড় করছে দাউদের ডি-কোম্পানি। সেই টাকা পাকিস্তান থেকে হাওয়ালা মারফৎদুবাই হয়ে সেই টাকা মুম্বই ও সুরাতে পৌঁছেছে। এই কাজে দাউদ ইব্রাহিম, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোটা শাকিল, মহম্মদ সালিম কুরেশি ওরফে সালিম ফ্রুট ও ওই গোষ্ঠীর আরও দুই সদস্য লেগে পড়েছে জানিয়ে চার্জশিট জমা দিয়েছে এনআইএ ।
এনআইএ জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে প্রথম দফায় ২৫ লাখ টাকা দুবাই হয়ে সুরাত ও মুম্বইয়ে জঙ্গি গোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক অপারেটরদের কাছে পৌঁছে গেছে। এপ্রিল মাস থেকেই টাকাপয়সার লেনদেন চলছে। সুরাত ও মুম্বইয়ের দুই অপারেটর সাব্বির শেখ ও আরিফ শেখের কাছে ২৫ লাখ টাকা পৌঁছে গেছে। সাব্বির ও আরিফ জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে টাকাপয়সার লেনদেন করে। তারা ডি-কোম্পানির দুই অপারেটর যাদের কাছে হাওয়ালা মারফৎ টাকা এসে পৌঁছয়। তার সেই টাকা অন্যান্য অপারেটরদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই দুজনের নামেও চার্জশিট ফাইল করেছে এনআইএ।
তদন্তকারীরা বলছেন, গত চার বছরে হাওয়ালা মারফৎ মোট ১২-১৩ কোটি টাকা পাঠিয়েছে দাউদ। তার ডি-কোম্পানি সন্ত্রাসমূলক কাজ চালানোর জন্য কোটি কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে। তদন্তে আরও জানা গেছে, পাকিস্তানে দাউদের ডি-কোম্পানির থেকে টাকা প্রথমে দুবাইয়ের রশিদ মারফানি ওরফে রশিদ ভাইয়ের কাছে গিয়ে পৌঁছয়। রশিদ ভাই তার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেই টাকা ভারতে পৌঁছে দেয়। মুম্বইয়ের পূর্ব মালাডে এপ্রিল মাসেই ডি-কোম্পানির পাঠানো টাকা রশিদ ভাইয়ের নেটওয়ার্ক হয়ে আরিফের কাছে পৌঁছে গেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে দাউদ এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে এনআইএ। অভিযোগ, পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ীদের নিশানা করছে দাউদের ‘ডি-কোম্পানি’। এনআইএ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, দাউদ ও তাঁর সঙ্গীরা ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং আল কায়েদা সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে।
মুম্বইয়ে ১৯৯৩ সালে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্যান্য সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে অন্যতম অভিযুক্ত ছিল দাউদ ইব্রাহিম। তখন থেকেই ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় সে। পরবর্তী কালে তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান কখনওই স্বীকার করেনি যে দাউদকে তারা আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। বরং ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নয়াদিল্লি অতীতে যতবার দাউদের প্রসঙ্গ তুলেছে, ততবারই ইসলামাবাদ জানিয়েছে এই তথ্য ভ্রান্ত। দাউদ পাকিস্তানে থাকেই না।
লস্কর-এ-তইবা প্রধান হাফিজ সইদ, জইশ-এ-মহম্মদ প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহার, হিজবুল মুজাহিদিন প্রধান সৈয়দ সালাউদ্দিনের সঙ্গেই ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর তালিকায় রয়েছেন দাউদ। ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অভিযুক্ত দাউদের মাথার দাম গত অগস্টে ২৫ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল এনআইএ। এর আগে ২০০৩ সালে দাউদের মাথার দাম ২৫ মিলিয়ন ডলার ধার্য করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ, ভারতীয় টাকায় যা প্রায় ২০০ কোটি টাকা।