রাজ্যপাল নিযুক্ত উপাচার্যদের বৈধতা দিল আদালত, উপাচার্যদের বেতন-সহ বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ

 কলকাতা, ২৮ জুন – রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নিযুক্ত উপাচার্যদের বৈধতা দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।  উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়েছিল শিক্ষা দফতরের। তার জেরে বেতন–সহ অন্যান্য সুবিধা বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার। এই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। উপাচার্যদের বেতন বন্ধ করা যাবে না এবং বকেয়া–সহ সমস্ত বেতন মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা। রাজ্যের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের মামলায় এই নির্দেশ দেয় আদালত।

গত ৫ জুন রাজ্যপালের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। মামলা দায়ের করেন এক অধ্যাপক। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। শুনানি শেষে বুধবার এই রায় দিয়েছে আদালত। অবিলম্বে বেতন বন্ধ করা ১০ উপাচার্যের বেতন চালু করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার উত্তরবঙ্গে রাজ্যপাল এই অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে যোগ দেন। তার পরেই এই রায়  তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যদিকে বুধবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালকে কালো পতাকা দেখানো হয়। 

রাজ্যপালের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সনৎকুমার ঘোষ। আদালতে তাঁর বক্তব্য, রাজ্যপাল যে উপাচার্যদের নিয়োগ করেছেন সেখানে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োগের যে সময়সীমা তা অগ্রাহ্য করেই রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজ্যের সঙ্গে পরমর্শ করার বিষয়টি আইনসভার অন্তর্ভুক্ত একটি আইন। সেই আইনকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। রাজ্য এই উপাচার্যদের বেতন দেয়। সে ক্ষেত্রে নিয়োগ যদি বেআইনি হয়, তাহলে সরকার টাকা দেবে কীভাবে? সেই প্রশ্ন তোলেন মামলাকারী। যদিও কলকাতা হাইকোর্ট এসব বক্তব্য খারিজ করে দিয়ে রাজ্যপালের নিয়োগকেই বৈধ বলে সিলমোহর দিয়েছে।
রাজ্যপাল এই নিয়োগের পর থেকেই সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে।‌ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়, কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাবাসাহেব আম্বেদকর এডুকেশন বিশ্ববিদ্যালয়, ডায়মন্ডহারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন রাজ্যপাল।  কিন্তু রাজ্যপালের এই নিয়োগে সায় ছিল না রাজ্যের। শিক্ষা দফতরের তরফে দাবি করা হয়, রাজ্যপাল রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ না করেই উপাচার্যদের নিয়োগ করেছেন। ‘একতরফা’ নিয়োগের অভিযোগ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
ব্রাত্য বসু ঘোষণা করেছিলেন, শিক্ষা দফতরের তরফে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তিনি ওই ১১ জনের কাছে উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে ‘সসম্মান অনুরোধ’ জানিয়ে বলেন যে, তাঁরা যেন পদ প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই আচার্যের দেওয়া পদ গ্রহণ করেছিলেন। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নিয়োগ নেননি।

রাজ্যের তরফে বলা হয়েছিল, যে হেতু রাজ্যপাল নিযুক্ত অস্থায়ী উপাচার্যদের তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে না, তাই তাঁরা বেতনও পাবেন না। এরপর জনস্বার্থ মামলা হয় হাই কোর্টে। বুধবার সেই মামলায় আচার্য রাজ্যপালের পক্ষে রায় দিল হাই কোর্টে।