• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

চান্ডি ঝড়ে পুথুপাল্লি হাতের কব্জায়, হারল কেরল সিপিএম

তিরুবন্তপুরম, ৮ সেপ্টেম্বর– এ যেন ইন্দিরা গান্ধিকে স্মরণ। কেরলের পুথুপাল্লি আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল মনে করিয়ে দিয়েছে ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যুর পর ৪০৪ আসনে কংগ্রেসের জেতার ইতিহাসকে। ইন্দিরার দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস একাই জিতেছিল ৪০৪টি আসন। যে রেকর্ড আজও অক্ষত। বলা যায় সেই সময় ইন্দিরার মৃত্যুতাই যেন বাজিমাৎ করেছিল হাত চিহ্নের পার্টি।

তিরুবন্তপুরম, ৮ সেপ্টেম্বর– এ যেন ইন্দিরা গান্ধিকে স্মরণ। কেরলের পুথুপাল্লি আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল মনে করিয়ে দিয়েছে ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যুর পর ৪০৪ আসনে কংগ্রেসের জেতার ইতিহাসকে। ইন্দিরার দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস একাই জিতেছিল ৪০৪টি আসন। যে রেকর্ড আজও অক্ষত। বলা যায় সেই সময় ইন্দিরার মৃত্যুতাই যেন বাজিমাৎ করেছিল হাত চিহ্নের পার্টি। বাম দুর্গ পশ্চিমবঙ্গে ১৬টি আসন দখল করে তারা চমকে দিয়েছিল সব পক্ষকে। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু তাই মন্তব্য করেছিলেন, ‘মৃত ইন্দিরা জীবিত ইন্দিরার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর।’

সেই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়েছে কেরলের পুথুপাল্লি আসনের ক্ষেত্রে। উপনির্বাচনের ফলাফলের প্রবণতা থেকে স্পষ্ট প্রয়াত কংগ্রেস নেতা ওমেন চাণ্ডীর জনপ্রিয়তা হার মেনেছে তাঁর জীবদ্দশার গ্রহণযোগ্যতা। দেশের আরও ছয়টি আসনের সঙ্গে সেখানেও মঙ্গলবার ভোট নেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল থেকে ফলের প্রবণতা আসতে শুরু করেছে। সেখানে বিপুল ভোটে এগিয়ে কংগ্রেস।

১৯৭৩ সাল থেকে টানা ৫০ বছর ওই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা জনপ্রিয় কংগ্রেস নেতা ওমেন। ইএমএস নাম্বুদ্রিপাদ, অচ্যুৎ মেনন, পিকে বাসুদেবন নায়ার, ইকে নায়নার, ভিএস অচ্যুতানন্দন থেকে আজকের পিনারাই বিজয়ন, কেরলে সিপিএম এবং সিপিআইয়ের এই মুখ্যমন্ত্রীরা তো বটেই, দুই দলের শীর্ষ নেতারা নানাভাবে চেষ্টা করেও ওমেন চাণ্ডীকে হারাতে পারেননি।

বাংলায় মালদহে যেমন ছিলেন কংগ্রেসের বরকত গণিখান চৌধুরী, কেরলের পুথুপাল্লিতে তেমনই ছিলেন চাণ্ডী। মালদহে গণিখান চৌধুরীর মতো পুথুপাল্লিতেও বলা হত সেখানে ওমেন চাণ্ডীর নামে কলাগাছকে প্রার্থী করলেও কংগ্রেস জিতবে। দেখা গেল, প্রয়াত চাণ্ডীর জনপ্রিয়তার জোরে তাঁর পুত্র চাণ্ডী ওমেন বাবার শেষ বারের ফলাফলকে ছাপিয়ে বিপুল মার্জিনে জিতছেন। ঘণ্টাখানেক আগেই সিপিএম প্রার্থীর থেকে ৩৫ হাজারের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন প্রয়াত চাণ্ডীর ছেলে তথা কংগ্রেস প্রার্থী। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে প্রয়াত ওমেন চাণ্ডী কিন্তু জিতেছিলেন ১০ হাজারের সামান্য বেশি ভোটের মার্জিনে।

কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চণ্ডী গত মাসে মারা গিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সেখানে দ্রুত উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করে। গত ৩১ অগাস্ট-১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং রাহুল গান্ধী যখন দীর্ঘসময় একান্তে কথা বৈঠক করেন তখন কেরলের পুথুপাল্লিতে দুই দলের রাজ্য নেতারা যুদ্বংদেহী মেজাজে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। দুই শিবিরই বুঝিয়ে দেয় যতই জোট হোক, কেরলে লোকসভা ভোটের এই রণনীতির বদল হবে না। অর্থাৎ সিপিএম এবং কংগ্রেস কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না।

গত মাসে চাণ্ডীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রাজ্যে ছুটে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং রাহুল গান্ধি । শোকসভার ফাঁকে কংগ্রেস নেতারা পুথুপাল্লির উপনির্বাচন নিয়ে একদফা আলোচনা সেরে নেন। রাহুল গান্ধি রাজ্য নেতাদের বলেন, উপনির্বাচনে পুথুপাল্লি হাতছাড়া হলে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা মানসিক আঘাত পাবে। লোকসভা ভোটের মুখে তাতে খারাপ বার্তা যাবে।

অন্যদিকে, চিন্তায় পড়ে সিপিএমও। সেই ১৯৭০ থেকে চেষ্টা চালিয়েও বামেরা ওমেন চাণ্ডীকে হারাতে পারেনি। তাঁর মৃত্যুর পরও আসনটি হাতছাড়া থাকলে দলের মুখ পুড়বে বুঝে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন-সহ কেরল সিপিএমের নেতারা প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন একাই চারটি সভা করেন। করেন একাধিক রোড শো। কিন্তু লক্ষ্যপূরণ হল না সিপিএমের।

অন্যদিকে, কেসি বেণুগোপাল, শশী তারুরদের মতো কংগ্রেস নেতারাও একাধিক সভা করেন। প্রচারে নামেন বয়স্ক, অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী একে অ্যান্টনিও। বিজেপিও প্রচারে নামিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের। কিন্তু জয়ের মার্জিনেই স্পষ্ট গেরুয়া শিবির ছাপ ফেলতে পারেনি সেখানে।