জয়পুর, ৬ জুন– রাজস্থানে দল ভাঙ্গন বাঁচাতে কোনোরকম চেষ্টাই কাজে এলো না কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধির। কর্নাটকে জয়ের মুখ দেখলেও রাজস্থানে বোধহয় খাড়গে-রাহুল হারের মুখই দেখতে চলেছেন। হারটা অবশ্য ভোটে নয়, দলের কাছে। হাজার চেষ্টা করেও মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটের মধ্যে সমঝোতা করাতে পারলেন না তারা। কর্নাটকে সিদ্দারামাইয়া এবং ডিকে শিব কুমারের মধ্যে বিভেদ শেষ করতে পারলেও সেটা সম্ভব হল না রাজস্থানে। অবশেষে রাজস্থানে ভাঙ্গনের মুখে কংগ্রেস ।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, নতুন দল ঘোষণার পথে শচীন পায়লট। ১১ জুন জয়পুরে শচীন যে মহা সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সেখানেই নতুন দল ঘোষণা করবেন। ১১ জুন হল শচীনের বাবা প্রয়াত কংগ্রেস নেতা রাজেশ পাইলটের মৃত্যু দিন। রাজীব গান্ধীর সময়ে রাজেশ ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা এবং কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের মন্ত্রী। শচীন শিবিরের খবর, তাঁর দলের নাম প্রগতিশীল কংগ্রেস।
শচীনকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার চেষ্টা হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাহুল গান্ধি আমেরিকায়। কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে ১২ জুন পর্যন্ত খুবই ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে রাজস্থান সংকট কংগ্রেস কীভাবে মোকাবিলা করবে তা দলের কাছেই স্পষ্ট নয়।
শচীন গুজ্জর সম্প্রদায়ের মুখ। রাজস্থানের রাজনীতিতে গুজ্জরদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আগের বিধানসভা ভোটের আগে তৎকালীন বিজেপি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে শচীন তাঁর সম্প্রদায়কে সামনে রেখে গোটা রাজ্যে সফল কৃষক আন্দোলন করে প্রশাসনকে বিপাকে ফেলে দেন। তাঁর শিবিরের দাবি শচীনের ওই আন্দোলনই কংগ্রেসের ক্ষমতায় ফেরার পথ প্রশস্ত করেছিল। কিন্তু তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী না করে দল বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
অন্যদিকে, গেহলট শিবিরের বক্তব্য, শচীনের সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া আছে। কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর সেই অতীত জানা আছে বলেই একদা গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ট এবং রাহুল গান্ধীর বন্ধু হওয়া সত্বেও তিনি হাইকমান্ডের কাছে কল্কে পাচ্ছেন না।
রাহুল গত ৩০ মে আমেরিকা যাওয়ার আগে গেহলট ও পাইলটের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে খাড়্গেও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণু গোপাল জানান, রাজস্থানের দুই নেতাই এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন। তবে কোন ফর্মুলায় সন্ধি হয়েছে সেটা সেদিন খোলসা করেননি বেণু গোপাল।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী ও প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রীর তিক্ত সম্পর্কের বরফ যে গলেনি সেটা স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁরা দিল্লি থেকে রাজ্যে ফেরার পরই। দুই নেতাই মুখে কুলুপ এটে ছিলেন। গত শনিবার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র টং’য়ে গিয়ে শচীন প্রথম ইঙ্গিত দেন তিনি হাইকমান্ডের ফর্মুলায় রাজি নন।
শচীনের প্রধান দাবি, বিধানসভার আসন্ন নির্বাচনে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসাবে তুলে ধরতে হবে। সেজন্য এখনই গেহলটকে মুখ্যমন্ত্রীর গদি থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক।
খাড়্গে, রাহুলরা তাঁর এই দাবি মানেননি। বলা হয়, ভোটের আর মাস ছয় বাকি। এখন মুখ্যমন্ত্রী বদল সম্ভব নয়। তবে শচীনকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করে নির্বাচন কমিটিরও শীর্ষে বসানো হবে। এই ফর্মুলাতেই কর্নাটকের বিবাদ সামলেছেন খাড়্গে, রাহুলরা।
কিন্তু রাজস্থানে উল্টো চিত্র। শচীন যেমন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে চাননি, তেমনই মুখ্যমন্ত্রী গেহলটের শিবিরও প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রীকে অতটা জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। দিল্লি যে শচীনের পাশে নেই তা বোঝাতে গেহলট জয়পুরে ফিরেই দাবি করেন, কংগ্রেস হাইকমান্ড কারও চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয় না। এটা কংগ্রেসের কালচার নয়। কেউ আজগুবি দাবি করলে দল তা শুনবে কেন?
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দল তাঁর বিদ্রোহের মর্যাদা না দেওয়ায় দেওয়ালে পিঠ থেকে গিয়েছে শচীনের। ফলে দলে থেকে গেলে তিনি প্রাপ্য মর্যাদা পাবেন না। তাতে অনুগামীদের ধরে রাখা কঠিন হবে। এখন দেখার ১১ জুন শচীন নতুন দল ঘোষণা করেন নাকি তার আগে কোনও সমঝোতা সূত্রে মরুরাজ্যে গোষ্ঠী বিবাদের ঝড় থামাতে পারে কংগ্রেস।