মহিলা বিলের কৃতিত্ব মোদিকে দিতে নারাজ কংগ্রেস-তৃণমূল সমর্থনের পথে 

দিল্লি, ৬ সেপ্টেম্বর– মহিলা সংরক্ষণ বিলের কৃতিত্ব যাতে পুরোপুরি মোদি সরকার তথা বিজেপি না নিয়ে নিতে পারে তারজন্য বুধবার আগেই মাঠে নেমে পড়ল কংগ্রেস, তৃণমূল। কংগ্রেস-তৃণমূল তরফে জানান হয়েছে, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে মোদি সরকার মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে এলে তাকে সমর্থন করবে তারা।

উল্লেখ্য, মোদি সরকার ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর আচমকা সংসদের বিশেষ অধিবেশনের ডাক দেওয়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে, লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকার মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করাতে পারে।

বিল সমর্থনের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে লোকসভায় কংগ্রেসের সচেতক মাণিকম টেগোর বলেন, ‘‘সোনিয়া গান্ধি বরাবর মহিলা সংরক্ষণের পক্ষে সরব হয়েছেন। ইউপিএ সরকারের আমলেই মহিলা সংরক্ষণ বিল রাজ্যসভায় পাশ হয়েছিল। সংখ্যা না থাকায় আমরা লোকসভায় তা পাশ করাতে পারিনি। বিজেপি বিল আনলে আমরা এবং ইন্ডিয়া-র দলগুলি তাতে সমর্থন জানাবে।’’


এদিকে কংগ্রেস-তৃণমূল সমর্থনের পথে হাঁটলেও বিরোধী শিবিরে এ নিয়ে বিভাজন তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ এসপি, আরজেডি-র মতো দলগুলি নীতিগত ভাবে মহিলা সংরক্ষণের পক্ষে হলেও তারা মহিলা আসনগুলির মধ্যে তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণ চায়।

বিজেপি শিবির মনে করছে, মহিলা সংরক্ষণের ব্যবস্থা হলে নরেন্দ্র মোদির মহিলা ভোটব্যাঙ্ক মজবুত হবে। বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হবে। আদানি-কাণ্ড, চিনের জমি দখল, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় থেকে নজর ঘুরে যাবে। লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগে মোদি সরকারের পক্ষে সহজেই বিল পাশ করিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। মোদি সরকার অবশ্য এখনও সংসদের বিশেষ অধিবেশনের কার্যসূচি ঘোষণা করেনি। তবে সংসদের গত অধিবেশনে আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল প্রশ্নের উত্তরে বলে রেখেছিলেন, মহিলা সংরক্ষণের জন্য সব দলের মধ্যে ঐকমত্য ও গভীর বিবেচনা দরকার।

আরজেডি অবশ্য বুধবার ফের সওয়াল করেছে, তারা এখনও ‘সংরক্ষণের মধ্যে সংরক্ষণ’-এর মধ্যে। আরজেডি-র রাজ্যসভার সাংসদ মনোজ ঝা বলেন, ‘‘মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের মধ্যে তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ প্রয়োজন। তা হলেই গণতন্ত্রের শিকড় গভীরে যাবে।’’ আর, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের বক্তব্য, ‘‘আমার ধারণা, মোদি সরকার বিশেষ অধিবেশনে মহিলা সংরক্ষণ বিল আনবে না। আনলে আমরা নিশ্চয়ই সমর্থন করব।’’

ইউপিএ সরকারের আমলে লোকসভা ও বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সুনিশ্চিত করতে মহিলা সংরক্ষণ বিল আনা হয়েছিল। রাজ্যসভায় সেই বিল পাশ হলেও লালুপ্রসাদ, মুলায়ম যাদবদের আপত্তিতে লোকসভায় সেই বিল পাশ করানো যায়নি। এ নিয়ে বিবাদের জেরে এসপি, আরজেডি ইউপিএ থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল।

সোমবার সন্ধ্যায় উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় জয়পুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সংবিধান সংশোধন করে সংসদে, বিধানসভায় মহিলাদের যথোচিত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। সেই দিনের আর দেরি নেই। তার পরে মহিলা সংরক্ষণ বিলের সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়েছে।

তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘তৃণমূলের সাংসদদের মধ্যে এখনই ৩০ শতাংশের বেশি মহিলা। তার জন্য মহিলা সংরক্ষণ বিলের প্রয়োজন পড়েনি। বিজেপির সাংসদদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ মহিলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে প্রথম থেকেই সামনের সারিতে রয়েছেন।’’ বুধবার তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতা সব দলের কাছে মহিলা সংরক্ষণ বিলে সমর্থনের আর্জি জানিয়েছেন। কংগ্রেস মনে করছে, বিজেপির মতো বিআরএস-ও তেলঙ্গানার বিধানসভা ভোটে হারের ভয়ে মহিলা সংরক্ষণের কথা বলছে। তৃণমূল সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, বিআরএসের সাংসদদের মধ্যে মাত্র ৬.৫% মহিলা।