রাতভর হাতাহাতি, জলের বোতল ছোড়াছুড়ি আপ-বিজেপির

দিল্লি, ২৩ ফেব্রুয়ারি– এ যেন একেবারে টানটান উত্তেজনায় ভরা যাত্রাপালা। প্রেক্ষাপট রাজধানীর পুরনিগম। সেখানে রাতভর যেভাবে একে-অপরকে লক্ষ করে যেভাবে জলের বোতল ছুড়ে মারা হয় তা একেবারেই কল্পনার বাইরে। 

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে চতুর্থবারের চেষ্টায় বুধবার দিল্লির মেয়র ও ডেপুটি মেয়র নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। পুর নিগমের ভোটের পর মাঝে ৮২দিন কেটে গিয়েছে। মেয়র নির্বাচন তারমধ্যে তিনবার ভেস্তে যায় আপ ও বিজেপির কাউন্সিলদের গোলমালে। বুধবার রাত থেকেই স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে দু’দলের কাউন্সিলদের গোলমাল, ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতিতে গড়ায়। দু-পক্ষই একে অপরের দিকে জলের বোতল ছুড়ে মারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বুধবার মেয়র, ডেপুটি মেয়র নির্বাচন মোটের উপর নির্বিঘ্নে শেষ হলেও স্থায়ী কমিটির ছয় সদস্যের নির্বাচন ঘিরে গোলমাল সব নজির ছাপিয়ে গিয়েছে। একটি পুর নিগমের পদাধিকারী নির্বাচন ঘিরে এমন বিবাদের নজির নেই দেশে।


অঙ্কের হিসাব মেনে মেয়র ও ডেপুটি মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন আম আদমি পার্টির প্রার্থীরা। কিন্তু দিল্লি পুর নিগমে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে স্থায়ী কমিটি। তারা শহরের পুর পরিষেবা এবং পরিকাঠামোর উন্নয়নের ব্যাপারে সুপারিশ করে থাকে। এই কমিটি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও সুপারিশ পাঠাতে পারে। কারণ, দিল্লিতে পুর নিগম কেন্দ্রের নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে। ফলে ওই কমিটির রাজনৈতিক গুরুত্ব অসীম।

পুরনিগমের এই ছয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদে আপ ও বিজেপির তিনটি করে পদ পাওয়ার কথা। কিন্তু আপ চারজন প্রার্থী দেওয়ায় ক্রশ ভোটিংয়ের আশঙ্কা দেখা দেয় বিজেপি শিবিরে। আপের অঙ্ক, স্থায়ী কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে পুর নিগমের কাজে কেন্দ্রের খবরদারি খর্ব করা যাবে। তাই বিজেপির কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে চতুর্থ একটি পদ তারা দখল নিয়ে মরিয়া।

ক্রশ ভোটিংয়ের আশঙ্কায় বিজেপি স্থায়ী কমিটিরে চেয়ারম্যান নির্বাচনের ভোট নিয়ে শুরু থেকেই নানা বিষয়ে আপত্তি তুলতে থাকে। সন্ধ্যার পর ভোট বন্ধের দাবি তোলে।

বুধবার মেয়র ও ডেপুটি মেয়র নির্বাচনের সময় বলা হয়েছিল কাউন্সিলররা ভোট কক্ষে মোবাইল এবং কলম নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। দেখা যায়, স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বাছাইয়ের ভোটে সেই বিধিনিষেধ নেই। বিজেপি সন্ধ্যার পর এই বিষয়ে আপত্তি তোলে। ততক্ষণে দুই দলের ৪২ জন কাউন্সলরের ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বিজেপির দাবি, সব ভোট বাতিল করে নতুন করে ভোট নিতে হবে।

এই দাবির মুখে আপত্তি তোলেন আপের কাউন্সিলরা। তাদের বক্তব্য, যে ভোট পড়ে গিয়েছে, তা বাতিল করা যাবে না। বাকি ভোটের ক্ষেত্রে মোবাইল ও কলমের কড়াকড়ি জারি হোক। কিন্তু বিজেপি তা মানতে চায়নি। এই নিয়ে দু-দলের কাউন্সিলরদের মধ্য হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, শেষে জলের বোতল ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটে। শেষ পর্যন্ত ভোট স্থগিত হয়ে যায়।