ধস আবাসনে, ১৪০ কোটি মানুষ দিয়েও ভরানো যাবে না চিনের সব খালি ফ্ল্যাট 

বেইজিং, ২৪ সেপ্টেম্বর– চিনের আবাসন খাতের সংকট যে কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে তা এখানকার খালি অ্যাপার্টমেন্টগুলি দেখেই স্পষ্ট। চিনে এখন যত খালি অ্যাপার্টমেন্ট আছে, দেশটির পুরো ১৪০ কোটি মানুষ দিয়েও সেগুলো ভরানো সম্ভব নয়। এমনটাই বলা হচ্ছে চিনের আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের তরফে।

চিনের অর্থনীতির বড় অংশ নির্ভর করে এই আবাসন ব্যবসা থেকে। দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশ আসে এই আবাসন খাত থেকে। কিন্তু দেশটির আবাসন খাতে ঋণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে যখন সরকার ঋণের রাশ টেনে ধরে, তখন আবাসন খাতের মহিরুহ প্রতিষ্ঠান এভারগ্রান্ড বিপদে পড়ে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নতুন ঋণ না পাওয়ায় খেলাপি হয়ে পড়ে তারা। এর পর থেকে সংকট কেবল বাড়ছেই।

এ ছাড়া চীনের আরও কিছু বড় আবাসন প্রতিষ্ঠানও বিপদে পড়েছে। যেমন কান্ট্রি গার্ডেন হোল্ডিং—এদের আর্থিক অবস্থা এতটাই নড়বড়ে হয়েছে যে যেকোনো সময় খেলাপি হয়ে যেতে পারে।


চিনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যানুসারে, আগস্টের শেষ নাগাদ চীনের আবাসন খাতে অবিক্রীত যত অ্যাপার্টমেন্ট পড়ে আছে, সেগুলোর মোট মেঝের আয়তন ছিল ৬৪ কোটি ৮০ লাখ বর্গমিটার বা ৭০০ কোটি বর্গফুট। রয়টার্সের হিসাব অনুসারে, এটি ৭২ লাখ ফ্ল্যাটের সমপরিমাণ, যদি একটি ফ্ল্যাটের গড় আকার ৯০ বর্গমিটার হিসাব করা হয়।

এ ছাড়া আরও অনেক প্রকল্পে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেলেও নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে মাঝপথে বন্ধ হয়ে আছে। এসব ফ্ল্যাট এই হিসাবের মধ্যে আসেনি। এ ছাড়া বাজারের কারসাজিকারী ব্যক্তিরাও অনেক ফ্ল্যাট কিনেছেন, যেগুলো এখনো খালি পড়ে আছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাব, খালি পড়ে থাকা আবাসনের একটি বড় অংশই এ ধরনের ফ্ল্যাট।

চিনের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাবেক উপপ্রধান হে কেং রয়টার্সকে বলেছেন, চীনে এখন কত বাড়ি খালি পড়ে আছে? একেক বিশেষজ্ঞ একেক হিসাব দেন। তবে একদম চূড়ান্ত হিসাব হলো, চীনে এখন যত বাড়ি খালি পড়ে আছে, সেখানে ৩০০ কোটি মানুষ থাকতে পারবে।

সম্প্রতি চিনের দক্ষিণাঞ্চলের শহর ডনগানের এক অনুষ্ঠানে হে কেং বলেছেন, এই হিসাব একটু বেশিই বলতে হয়, তবে সম্ভবত চীনের ১৪০ কোটি মানুষ দিয়েও এসব বাড়ি ভরানো যাবে না।

এদিকে চিনের সরকারি ভাষ্য হলো, অর্থনীতি ‘ঘুরে দাঁড়াচ্ছে’। প্রতিদিনই দেশটির সরকার বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে হে কেং যেসব কথা বললেন, তা চীনের অর্থনীতি বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাষ্যের সঙ্গে মেলে না।

সম্প্রতি চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রতিনিয়তই এমন বাগাড়ম্বর শোনা যায় যে চিনের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, কিন্তু বাস্তবে চীনের অর্থনীতি নয়, ওই সব বাগাড়ম্বরই ভেঙে পড়ছে।