থিম্ফু, ১১ ডিসেম্বর– ফের বাড়ছে চিন-ভারত উত্তেজনা৷ এ উত্তেজনার পেছনে অবশ্য চিনের দায়িত্ব অনেক বেশি৷ কারণশ প্রতিবেশী দেশগুলিকে নানাভাবে উসকাতে থাকা চিনের পুরোনো অভ্যেস৷ সেই পথ ধরেই ডোকলাম নিয়ে ফের উত্তেজনার পারদ চড়াচ্ছে ড্রাগন৷ আগেই এই ডোকলাম মালভূমিতেই চিনা বাহিনীর রাস্তা তৈরির প্রতিবাদ করেছিল ভারত৷ তারই ফলস্বরূপ মাস দুয়েক মুখোমুখি দাঁডি়য়ে একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁডে়ছিল দুই দেশের বাহিনীই৷ সে টানাপডে়নের কূটনৈতিক সমাধান হয়েছিল অন্তত এক বছর পরে৷ ফের তেমনই কোনও পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে বলে আশঙ্কা৷
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ভুটানের জাকারলুং গ্রাম পুরোপুরি কব্জা করে ফেলেছে চিন৷ সেখানে রাস্তা, বাডি়ঘর, সেনা চৌকি তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ ম্যাক্সার স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে, জাকারলুং গ্রামে অন্তত ১২৯ খানা বড় বিল্ডিং তৈরি করেছে চিন৷ পাশাপাশি আরও একটি জায়গায় প্রায় ৬০-৭০টা বাডি় তৈরি হচ্ছে৷ ওই গ্রামে সেনা চৌকিও বানিয়েছে চিনের বাহিনী৷ তৈরি হচ্ছে চওড়া রাস্তা৷ সেই রাস্তা ভুটান ঘুরে অরুণাচল অবধি গেছে৷
লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের তিব্বতি ইতিহাসের অধ্যাপক রবার্ট বারনেট বলছেন, ভুটানের ভেতরে গ্রাম বানাচ্ছে চিন৷ বেশ কিছু জনপদকে নিজেদের বলে দাবি করছে৷ সেখানে চিনের সেনা চৌকি, থানা তৈরি হচ্ছে৷ চিন-ভুটান সীমান্তের মধ্য ও পশ্চিম সেক্টরে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ‘তৎপরতা’র খবর মিলেছে৷ এমনকী, ভুটানের ভুখণ্ডে চিনা ফৌজের অনুপ্রবেশের অভিযোগও সামনে এসেছে৷ পশ্চিম সেক্টরের ৩১৮ বর্গ কিলোমিটার এবং মধ্য সেক্টরের ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার ভুটান-ভূখণ্ড চিন দাবি করছে অনেক দিন ধরেই৷ ডোকলাম মালভূমির কিছু অংশও এর মধ্যে রয়েছে৷ ২০১৭ সালের পরেও সেখান থেকে চিনা ফৌজ সরেনি বলে অভিযোগ৷ সিকিম সীমান্ত লাগোয়া ভুটানের ওই ভূখণ্ডে ঢুকে চিনা ফৌজ নিয়মিত টহলদারি চালানোর পাশাপাশি সামরিক পরিকাঠামো বানিয়েছে বলেও ভারতীয় সেনা এবং রয়্যাল ভুটান আর্মি সূত্রের খবর৷
ডোকলামের ঘটনার পরে পশ্চিম সেক্টরে ভুটানের পাঁচটি এলাকায় চিনা ফৌজের অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে চুম্বি উপত্যকায় পূর্ব ভুটানের প্রায় ৪০ কিলোমিটার অবধি ভেতরে ঢুকে চিনা ফৌজ রাস্তা এবং হেলিপ্যাড বানিয়েছে বলে অভিযোগ৷ভারতীয় সেনার দাবি, সিচেন লা-বাটাং লা ট্রাইজংশনই তিন দেশের সীমানা নির্ধারক৷ ডোকলামের উত্তরে ঢুকে চিনা সেনা পাহাডি় এলাকায় নজরদারি যন্ত্রও নাকি বসাচ্ছে৷ উপগ্রহ চিত্র আরও দেখিয়েছে, ডোকলামের কাছে টানেল তৈরি করছে চিনের বাহিনী৷ ডোকলাম সীমান্তে যে রাস্তা তৈরি নিয়ে বিতর্কের শুরু হয়েছিল, সেই রাস্তা লাগোয়াই টানেল বানাচ্ছে চিন৷ মেরুগ লা-র কাছে অন্তত ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য সেই টানেলের৷ শীতে সেনাদের আশ্রয় নেওয়ার জন্যই ওই টানেল তৈরি হচ্ছে বলে অনুমান৷