দিল্লি, ১৫ জুলাই– শুক্রবার বেলা আড়াইটে নাগাদ তৃতীয় চন্দ্রযানকে নিয়ে মহাকাশে উড়ে যায় বাহুবলি জিএসএলভি রকেট। সবকিছু ঠিক থাকলে ৪০ দিনের যাত্রা শেষে আগামী ২৩ অগস্ট বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ পিঠে সফট ল্যান্ডিং করবে চন্দ্রযান-৩। এই চন্দ্রযান নিয়ে গর্বের শেষ নেই ভারত তথা গোটা বিশ্বের। কিন্তু কথায় আছে না, প্রদীপের তলায় থাকে আঁধার। এই চন্দ্রযান-৩ এর উজ্জ্বল দিকের পেছনে ঠিক তেমনই লুকিয়ে আছে আফসোসের আঁধার।
জানা গিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে উড়ে যাওয়া ‘চন্দ্রযান-৩’-এর পেছনে প্রায় তিন বছর কঠোর পরিশ্রম করেছে প্রচুর মানুষ। সেই তালিকায় আছেন রাঁচীর ‘হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ (এইচইসি) সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার, পদস্থ অফিসার থেকে সাধারণ কর্মীরা। কিন্তু ‘চন্দ্রযান-৩’-এর উৎক্ষেপনে তাঁদের ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে মানুষগুলোর এই অক্লান্ত পরিশ্রমে এই চন্দ্রাযান সেই মানুষগুলোই নাকি গত ১৭ মাস বিনা বেতন পাননি।
অবাক হলেন তো? একাধিক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বার বার কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানোর পরেও দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বেতন পাচ্ছেন না কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্থ ওই সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মীরা। বেতন না পেয়েও কিন্তু তারা থেমে নেই। তাদের কাজ তারা করেই চলেছে আর তারই প্রমান ‘চন্দ্রযান-৩’। উল্লেখ্য, ‘চন্দ্রযান-৩’ উৎক্ষেপনের পুরো প্রজেক্টে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা।
রাঁচীর ওই রাষ্ট্রীয় অধীনস্থ সংস্থা থেকে ‘চন্দ্রযান-৩’ উৎক্ষেপণের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে বিবিধ জটিল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই ধুঁকছে এইচইসি সংস্থাটি। তথ্য বলছে, গত ৩ বছর ধরে আর্থিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই কোম্পানি। ওয়াকিবহালদের অনেকের মতে কোম্পানির প্রায় তিন হাজার ইঞ্জিনিয়ার থেকে কর্মীরা গত ১৭ মাস পারিশ্রমিকের কানাকড়িও পাননি বলে অভিযোগ। সংস্থার জয়েন্ট সেক্রেটারি তথা ইঞ্জিনিয়ার সুভাষচন্দ্র ‘চন্দ্রযান-৩’-এর সফল উৎক্ষেপণের পর উচ্ছ্বসিত। কিন্তু তাঁর সহকর্মীদের পারিশ্রমিক নিয়ে প্রশ্ন করায় সুভাষচন্দ্র জানান, এটা সত্য যে, কর্মীরা আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। কিন্তু তার পরেও শুক্রবার থেকে সবাই ভীষণ আনন্দিত। সুভাষের কথায়, ‘‘আবার এক বার এইচইসি-র সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মী গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। দেশের এমন একটি বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অংশ হয়েছি। এতে আমরা গর্বিত। আমরা ভীষণ খুশি।’’
সূত্র বলছে, একাধিক বার ভারী শিল্প মন্ত্রকের কাছে বকেয়া চেয়ে চিঠি দিয়েছে এইচইসি। কিছু দিন আগেই ১,০০০ কোটি টাকা চেয়ে দরবার করেছে তারা। কিন্তু মন্ত্রকের তরফে না কি বলা হয়েছে যে, সরকারের তরফে এখনই কোনও সাহায্য মিলছে না। বকেয়া বেতনের দাবিতে গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ধর্মঘট করেন। সঙ্গে সঙ্গে দু’মাসের বেতন এবং বকেয়া বেতন জলদি মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন তাঁরা।
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় অধীনস্থ সংস্থার দেনা বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় গিয়ে তারা পৌঁছেছে যে, কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, আর্থিক দুরবস্থার কারণে ২ বছর হয়ে গেল ওই সংস্থায় কোনও স্থায়ী ‘চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর’ বা সিএমডি-র নিয়োগ হয়নি।