পরেশ গোষ্ঠির কাঁটা বজায় রেখেই কেন্দ্র ও আলফা আলোচনাপন্থীর শান্তি চুক্তি অসমে

দিসপুর, ২৯ ডিসেম্বর– একসময়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে উত্তাল  অসমের চিত্র এখন অনেকটাই আলাদা৷ বলা যায় মোটামুটিভাবে গোটা অসম এখন শান্ত৷ তবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন যে একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে তা কিন্তু হলফ করে বলা যাবে না৷ উত্তর পূর্বের এই রাজ্যে মাঝে-মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সেই আন্দোলন৷ এবার সেই আন্দোলনকারীদের মূল স্রোতে ফেরাতে লোকসভা ভোটের আগে বড় পদক্ষেপ করল কেন্দ্র ও অসম সরকার৷ আলফার আলোচনাপন্থীদের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করল অসম সরকার ও কেন্দ্র৷
এই চুক্তিকে অসমের নতুন ভোর বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ তাঁর দাবি, এই চুক্তির ফলে অসম-সহ গোটা উত্তর পূর্ব ভারতে শান্তির নয়া অধ্যায় রচিত হল৷ চুক্তির প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য কেন্দ্রের তরফে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷ একইসঙ্গে শাহের দাবি, আলফা ভেঙে যাবে৷ শাহী আশ্বাসের পরও অনেকগুলো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ যদিও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনে অপর একটি শাখা আলফা (স্বাধীন) এই চুক্তি থেকে নিজেদের দূরেই রেখেছে৷ ফলে সরকার যতই দাবি করুক না কেন এই চুক্তির ফলে অসমে শান্তি স্থায়ী হবে, সেই দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
সম্প্রতি জোরহাটের সেনা শিবির চত্বর-সহ অসমের চার জায়গায় বিস্ফোরণ হয়৷ যার দায় স্বীকার করে পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা (স্বাধীন) শাখা৷ আবার এই গোষ্ঠী ত্রিপাক্ষিক চুক্তির অংশ হয়নি৷ সূত্রের দাবি, বর্তমানে মায়ানমারে রয়েছেন পরেশ বড়ুয়া৷ লোকসভা ভোটের আগে সেই গোষ্ঠী অসমে নতুন করে আগুন জ্বালাবে না তার কোনও ভরসা নেই৷  শুধু লোকসভা নয়, বছর ঘুরলেই বাংলাদেশেও নির্বাচন৷ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশে আলফার শিবির গুডি়য়ে দেওয়া হয়েছিল৷ এবার যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না ফেরে তাহলে কি ফের সে দেশেও সক্রিয় হবে আলফা?
আটের দশকের গোড়া থেকেই সার্বভৌম অসমের দাবিতে উত্তপ্ত হয়েছিল উত্তর পূর্বের রাজ্য৷ পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বে আগুন জ্বলেছিল রাজ্যে৷ শেষপর্যন্ত ১৯৯০-এ আলফাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তার পরেও চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে গিয়েছে বিচ্ছিন্নবাদীরা৷ এদিকে শেষ ১২ বছর ধরে অরবিন্দ রাজখোয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা গোষ্ঠীর সঙ্গে নিঃশর্ত আলোচনা চালাচ্ছিল কেন্দ্র৷ শেষপর্যন্ত তাঁদের মূল স্রোতে ফেরাতে এদিন ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হল৷