• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

কানাডা-ভারত সম্পর্কের অবনতি , একে অপরের কূটনীতিককে বহিষ্কার 

টরেন্টো ও দিল্লি, ১৯ সেপ্টেম্বর – কানাডায় ভারতের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কানাডার কূটনীতিককে বহিষ্কার করল নয়া দিল্লি। ৫ দিনের মধ্যে ওই কূটনীতিককে ভারত থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে। অভিযোগ আনা হয়েছে যে, ওই কূটনীতিক ভারতের অভ্যন্তরে বেশ কিছু কাজে হস্তক্ষেপ করছিলেন। সেই সঙ্গে ভারত বিরোধী কার্যকলাপেও তিনি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত,

টরেন্টো ও দিল্লি, ১৯ সেপ্টেম্বর – কানাডায় ভারতের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কানাডার কূটনীতিককে বহিষ্কার করল নয়া দিল্লি। ৫ দিনের মধ্যে ওই কূটনীতিককে ভারত থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে। অভিযোগ আনা হয়েছে যে, ওই কূটনীতিক ভারতের অভ্যন্তরে বেশ কিছু কাজে হস্তক্ষেপ করছিলেন। সেই সঙ্গে ভারত বিরোধী কার্যকলাপেও তিনি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, কানাডার খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করেছে কানাডা সরকার। বিষয়টি নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেই সঙ্গে এক ভারতীয় কূটনীতিককেও বহিষ্কার করেছে তারা। কানাডা সরকারের অভিযোগ, ওই কূটনীতিক তদন্তে হস্তক্ষেপ করছিলেন।
সোমবার জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনার তদন্ত করছিল কানাডার গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। হরদীপ সিং খালিস্তান নামে কানাডার একটি সংগঠনের সমর্থক ছিলেন। ১৮ জুন ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সুরিতে শিখ কালচারাল সেন্টারের বাইরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ‘  
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, “কানাডার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিশ্বাস যে নিজ্জরকে ভারত সরকারের এজেন্টরা হত্যা করেছে। নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে কানাডার এজেন্সিগুলো। কানাডার মাটিতে একজন কানাডিয়ান নাগরিককে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা গ্রহণযোগ্য নয়।
দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে ভারতে এসেছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। কানাডার প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেন, “নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত  জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমি তাঁকে বলেছিলাম এই হত্যার তদন্তে ভারত সরকারের কোনও সংযোগ থাকা বরদাস্ত হবে না। আমি তাঁকে তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কানাডার মাটিতে এক কানাডার নাগরিককে খুন করা হয়েছে। তদন্তে কোনও বিদেশী সরকারের জড়িত থাকা মানে আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হওয়া। সরকার নিজেই কানাডিয়ান এজেন্সির সঙ্গে কাজ করছে। সরকার ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় রয়েছে।”
সোমবার কানাডার বিদেশমন্ত্রী মেলেনি জলিও সংসদে জানান, খুনের ঘটনার অভিযোগে কানাডায় ভারতের কূটনীতিককে বহিস্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি এই অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয় , তাহলে আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হবে।  একটি দেশ আরেকটি দেশের সঙ্গে যে আচরণ করা উচিত , তা প্রাথমিকভাবে ভঙ্গ করা হয়েছে।  সেই কারণে আমরা ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছি।’
  

যদিও এই বিবৃতি খারিজ করেছে ভারত। কানাডায় কোনও হিংসার ঘটনায় ভারত সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিটি বলে জানায় ভারত। বিষয়টি নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয় “আমরা তাদের সংসদে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দেখেছি এবং প্রত্যাখ্যান করেছি। কানাডায় যে কোনও হিংসায় ভারত সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ অযৌক্তিক । একই ধরনের অভিযোগ কানাডার প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে করেছিলেন এবং তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল”।

উত্তাপের আভাস পাওয়া গিয়েছিল জি ২০ সম্মেলনের মধ্যেই। ভারত এবং কানাডার সরকারের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা বোঝা যায় তখনই। জি-২০ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খালিস্তানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। তারপরেই সাংবাদিক বৈঠকে জাস্টিন ট্রুডো এক পা এগিয়ে আবার বিষয়টি ‘বাক স্বাধীনতার’ সঙ্গে তুলনা করেন। জাস্টিন ট্রুডোর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কড়া বিবৃতি দেয় ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। এর পরেই ভারতের সঙ্গে ট্রেড মিশন বাতিল করেন কানাডা সরকার।

এই প্রেক্ষাপটে দিল্লিতে অবস্থিত কানাডার দূতাবাসের নিরাপত্তা বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, কানাডার দূতাবাসের নিরাপত্তায় সিআরপিএফ ও দিল্লি পুলিশের অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। দূতাবাসের নিরাপত্তায় কোনও খামতি রাখতে চাইছে না প্রশাসন।

ভারতের সিদ্ধান্তের কী জবাব দেয় কানাডা এখন সেটাই দেখার। এই অভিযোগে বেজায় ক্ষুব্ধ ভারত। কূটনৈতিক ভাষাতেই জবাব দিয়েছে নয়া দিল্লি। নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র অরিন্দম বাগচির কথায়, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি খলিস্তানিদের মদত দেওয়ার অভিযোগ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই এমন অযৌক্তিক কথা বলছেন।

কানাডায় খালিস্তানিরা দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। পাঞ্জাবকে স্বাধীন দেশ বা রাষ্ট্র ঘোষণার দাবিতে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে তারা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কানাডা হল তাদের আসল ঘাঁটি। ভারতের পর ওই দেশেই শিখরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বাস করেন। হালে খালিস্তানিদের আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েছে। ভারতীয় দূতাবাসে হামলা, জাতীয় পতাকা পোড়ানো, কানাডা প্রবাসী ভারতীয়দের উপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটে।

 জাস্টিন ট্রুডো দেশে ফিরেই ভারত-কানাডা প্রস্তাবিত ট্রেড মিশন বাতিল করে দেন। আগামী মাসে কানাডা সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দিল্লিতে এই ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। দু-দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।