বুদ্ধদেবের শারীরিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক , ইসিজি ও এক্স-রে রিপোর্ট ইতিবাচক 

কলকাতা, ৩ অগাস্ট – রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বুধবার রাতে হঠাৎই বুকে ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভব করেন। বুকে ব্যথার কারণ জানতে তড়িঘড়ি ইসিজি ও এক্স-রে করানো হয়। যদিও রিপোর্ট ঠিকই এসেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বৃহস্পতিবার ‘আল্ট্রা সাউন্ড’ ছাড়াও আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়ার কথা ।বৃহস্পতিবার সকালে জারি করা মেডিক্যাল বুলেটিন বলছে, এখন স্থিতিশীল রয়েছেন তিনি। আগামী শনিবার আবার বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনায় বসতে পারে মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক। সেখানে আগামী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, বুধবার রাতে হঠাৎই বুদ্ধদেব বুকে অস্বস্তি অনুভব করেন। এরপর তাঁর ইসিজি করানো হয়। রিপোর্ট বলছে, চিন্তার কিছু নেই। ইসিজির পর তাঁর এক্সরে-ও করানো হয়। সেই রিপোর্টে কিছু অংশ অস্পষ্ট। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় বুকে জল জমার্ ভয় রয়েছে। গত সোমবার বুদ্ধদেবের বুকের সিটি স্ক্যান করানো হয়। তখন বুকে জলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার তাঁর আল্ট্রা সাউন্ড করানো হবে। চিকিৎসকদের মতে, বুদ্ধদেব দীর্ঘ দিনের সিওপিডি রোগী। সিওপিডি রোগীদের বুকে অস্বস্তি হতে পারে। তবে এই অস্বস্তি  কেন, তা খতিয়ে দেখতে চান চিকিৎসকেরা। বৃহস্পতিবার ‘আল্ট্রা সাউন্ড’-এর রিপোর্ট হাতে পেলে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর যে সংক্রমণ রয়েছে তাতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রোটোকল অনুযায়ী ওনাকে ৭ থেকে ১০ দিন ইন্ট্রাভেনাস  অ্যান্টিবায়োটিকস দেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে চারদিন তাঁকে ইন্ট্রাভেনাস অ্যান্টিবায়োটিকস দেওয়া হয়েছে। তাঁর ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট এবং শারীরিক পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকেরা।

হাসপাতালের সূত্রে জানা গেছে, বুদ্ধবাবুর হৃদযন্ত্র ভালো ভাবে কাজ করছে। ফুসফুসে সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণে। ফুসফুসের সংক্রমণ সারার সময়ও অনেক ক্ষেত্রে জল জমার উপসর্গ দেখা যায়। তেমন কিছু হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, বুদ্ধবাবু বাইপ্যাপ সার্পোর্টে আছেন। তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন।  যাঁরা তাঁকে হাসপাতালে দেখতে আসছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন।তবে এখনো রাইলস টিউব দিয়েই খাচ্ছেন তিনি। তিনি মুখ দিয়ে খেতে পারবেন কি না তার পরীক্ষা হবে বৃহস্পতিবার। সামগ্রিকভাবে বুদ্ধবাবুর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে হাসপাতালের তরফে জারি প্রেস বার্তায়।


এরই মধ্যে আমের স্বাদ নিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার আম খাওয়ার ইচ্ছের কথা জানান বুদ্ধদেব। কিন্তু রাইলস টিউব দিয়ে তাঁর শরীরে খাবার প্রবেশ করানো হচ্ছে। ফলে খাবার শরীরে ঢুকছে ঠিকই, কিন্তু তার স্বাদগ্রহণ করতে পারছেন না। এই অবস্থায় তিনি আমের স্বাদ পাওয়ার কথা নয়। আবার মুখ দিয়ে খাবার খেলে বিষম খাওয়ারও সম্ভাবনা।  মুখ দিয়ে খাবার খেয়ে বিষম যাতে না খান, সে জন্য আগে থেকেই ‘স্পিচ অ্যান্ড সোয়ালো রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপি’ দেওয়া শুরু হয়েছিল তাঁকে । সংক্রমণ কিছুটা কমার পর বুধবারই বুদ্ধদেবের জিভে আমের মণ্ড ঠেকানো হয়, যাতে আমের স্বাদ তিনি পেতে পারেন।

সামগ্রিক ভাবে বলা যায়, সংক্রমণের প্রকোপ খানিকটা হলেও কাটিয়ে উঠছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এখনও বিরতি দিয়ে দিয়ে তাঁকে বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখছেন চিকিৎসকেরা। আশঙ্কা কেটে গিয়ে শারীরিক অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর। রক্তে কমেছে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা, রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে। তবে কবে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হবে , সে সম্পর্কে কোনও তথ্য এখনও মেলেনি।