পুলিশ সূত্রে খবর , মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ মণিপুরের কুকি-জু গ্রামে হামলা করে দুষ্কৃতীরা। এলোপাথাড়ি গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। পাল্টা গুলি চালায় গ্রামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা। গুলি লেগে মৃত্যু হয় ৩০ বছর ও ২৭ বছর বয়সী দুই স্থানীয় বাসিন্দার। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে একজনের নাম জাংমিনলুন গাংতে, অন্যজনের নাম লাইৰুঙজাম ইনাও। লাইৰুঙজামের বাড়ি টাখেউল গ্রামে। তার মাথায় গুলি লাগে। ইম্ফলের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। লাইৰুঙজাম মেইতেই সম্প্রদায়ের এবং জাংমিনলুন গাংতে কুকি উপজাতির।
অন্যদিকে জাংমিনলুন চূড়াচাঁদপুরের সংবো গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। জানা গেছে, সাত সকালে গ্রামে ঢুকে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তারা। কৃষকরা সেই সময় মাঠে কাজ করছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গ্রামরক্ষী বাহিনীও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গুলির লড়াইয়ে নিরীহ আদিবাসীদের প্রাণ যায়। গুলির লড়াই চলাকালীন নারানসেনা ক্যানালের পাশে একটি জমিতে চাষের কাজ করছিলেন সালাম যতীন নামে এক কৃষক। তাঁর শরীরেও গুলি লাগে। সালামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তাঁর পরিস্থিতি স্থিতিশীল।
ঘটনার পর সকাল থেকেই গ্রামে টহল দেওয়া শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের কমান্ডো বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের।
অন্যদিকে, রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশি অভিযান চলছে। পূর্ব ইম্ফল ও বিষ্ণুপুর জেলা থেকে চারজন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয় মঙ্গলবার। তারা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলেই জানা গিয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে রবিবার, মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজন তিনটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ওই দিনই রাত দুটো নাগাদ রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ডিরেক্টর কে রাজোর বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীর কাছ থেকে দুষ্কৃতীরা তিনটি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে পালায়।
কিছুদিন আগেই বিষ্ণুপুর জেলার একটি গ্রামে কুকি জঙ্গিদের আক্রমণে তিনজন নিরস্ত্র গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, ওই ৩ জনের মধ্যে দুজনকে গুলি করে খুন করার আগে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁদের দেহ ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়। গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে অশান্ত মণিপুরে বহু মানুষের প্রাণ গেছে, ঘর-বাড়ি ছারখার হয়েছে। নির্মম নির্যাতনের শিকার হন মহিলারা। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে নিশানা করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। লোকসভার অধিবেশন জুড়ে বারবার বিরোধীরা মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিল। মঙ্গলবার এই পরিস্থিতিতে মণিপুর বিধানসভার একদিনের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়। কিন্তু অধিবেশন শুরুর পরই কংগ্রেস বিধায়কদের হৈ -হট্টগোলের জেরে অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়।
মে মেসের শুরু থেকে মণিপুরে মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে লড়াই ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে চলেছে। এই লড়াইয়ে এখনো পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৮০ জনের, আহত হয়েছেন ৪০০-রও বেশি। ঘরছাড়া প্রায় ৫০মজে হাজার মানুষ। মনিপুরকে শান্ত করা একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি।