দ্বন্দ্ব বন্ধে বিপ্লব সহ একাধিক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ভিনরাজ্যের দায়িত্ব বিজেপির 

দিল্লি, ১০ সেপ্টেম্বর– বিজেপির এই নতুন পরিবর্তন ক্ষত মেরামতি নাকি রাজনৈতিক চাল তাই ভাবছে রাজনৈতিক মহলকে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা দেশের ১৫টি রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, ইনচার্জ ও কো-ইনচার্জের নামের তালিকা ঘোষণা করেছেন। দু-জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে শুরু করে দলের একাধিক পুরানো নেতাদের সাংগঠনিক কাজে নিয়োগ করেছে বিজেপি। তালিকায় সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হারানো ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপাণিকে যথাক্রমে হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব ও চন্ডীগড়ের, ‘প্রভারী’ বা ইনচার্জ করা হয়েছে।

কয়েক মাস আগেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিপ্লবকে সরিয়ে দিয়ে মাণিক সাহা-কে পদ বসিয়েছিল বিজেপি । বিপ্লবের হাত ধরেই ২০১৬ সালে কংগ্রেস  থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সাল থেকে ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতিও ছিলেন সাহা। আবার ত্রিপুয়ায় বিজেপির ভাঙনের জন্যও বিপ্লব অনেকাংশে দায়ী বলেও অভিযোগ রয়েছে। রুপাণি অবশ্য অনেকদিন আগেই নিজের মুখ্যমন্ত্রীর পদ খুইয়েছিলেন।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতেই কি ত্রিপুরা ও গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের নিজেদের রাজ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হল! আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক ঘাচ্ছে রাজনৈতিকমহলের অন্দরে। স্বাভাবিকভাবেই দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের রাজ্য থেকে সরিয়ে ভিন রাজ্যের সংগঠন সামলানোর দায়িত্ব দেওয়ার পিছনে বিজেপির নিজস্ব রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে যেখন চলতি বছরের শেষদিকে গুজরাটেএবং আগামী বছরেই মার্চ মাসের মধ্যেই ত্রিপুরাতে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার ঠিক আগে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের রাজ্য থেকে সরিয়ে দিয়ে বিজেপি ঘর গোছানোর লক্ষ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বীজ সমূলে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করল বলেই মনে করা হচ্ছে। ত্রিপুরা ও গুজরাটের নির্বাচন প্রক্রিয়াতে যাতে এই দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কোনওরকম হস্তক্ষপ না করতে পারেন সেই লক্ষ্যেই তাদের ভিন রাজ্যের সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এমন ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীরা দূরের রাজ্যের সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকলে নিজেদের রাজ্যের ভোটের টিকিট বন্টন থেকে শুরু করে প্রচার কর্মসূচি কোনও কিছুতেই নিজেদের প্রভাব সেভাবে খাটাতে পারবেন না। বিপ্লবকে অবশ্য কিছুটা বাড়তি গুরুত্বও দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা থেকে রাজ্যসভার প্রার্থী হিসাবে বিপ্লবের নামও ঘোষণা করেছে বিজেপি। অর্থাৎ কোনওভাবেই ত্রিপুরার স্থানীয় রাজনীতিতে রাখা হচ্ছে না তাঁকে।

বার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ও মহেশ শর্মাকে যথাক্রমে কেরল ও ত্রিপুরার প্রভারি করা হয়েছে। কেরলের মতো রাজ্য যেখানে বিজেপির সেভাবে অস্তিত্বই নেই সেখানে পাঠিয়ে দিয়ে এবং দিল্লি সংলগ্ন উত্তর প্রদেশের নয়ডার (গৌতম বুদ্ধ নগরের) সাংসদ মহেশকে রাজধানীর রাজনৈতিক অলিন্দ থেকে বহু দূরে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে তাদেরকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ফেরানোর রাস্তা বন্ধ করা হল বলেই মনে করা হচ্ছে। আবার দলের অভিজ্ঞ নেতা ওম মাখুরকে কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটিতে নেওয়া হয়েছিল। এবার তাঁকে ছত্তিশগড়ের প্রভারী করে আগামী বছরের সেখানকার বিধানসভা নির্বাচনের রাশ তার হাতে তুলে দিয়ে গুরুত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ দুই রাজ্যেই আগামী বছর নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক রদবদল করতে চায়নি বিজেপি। সেখানে যথাক্রমে অরুণ সিং ও মুরলীধর রাওকেই আবার প্রভারী করা হয়েছে। উত্তর-পূর্বের বাকি রাজ্যগুলির জন্য পরিচিত মুখ সম্বিত পাত্রকে  প্রভারী করেছে বিজেপি।