নিজস্ব প্রতিনিধি – উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিতর্কিত মন্তব্যে শেষ পর্যন্ত চুপ করে থাকতে পারলেন না কেন্দ্রীয় সরকারের বিদেশ রাজ্যমন্ত্রী জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ভি কে সিং। বিজেপি’তে যোগ দেওয়ার আগে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ পাওয়ার পূর্বে ভি কে সিং ছিলেন দেশের ২৪ তম সেনাধ্যক্ষ। তাঁর সেই পরিচয়ের গরিমাই তাঁকে অবশেষে মুখ খুলতে বাধ্য করল। গত রবিবার উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও হিন্দুত্বের পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথ এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসবাদীদের বিরিয়ানি খাওয়াতো কংগ্রেস আর মোদিজি’র সেনা বোমা ও বুলেট দিয়ে তাদের জবাব দিচ্ছে। গন্ডগোল বেঁধেছে এখানেই। আদিত্যনাথ ভারতীয় সেনাকে ‘মোদিজি’র সেনা’ বলে বিপত্তি বাধিয়ে বসে আছেন, যার জন্য বিরোধী তো বটেই প্রাক্তন নৌসেনা প্রধান রাম দাস পর্যন্ত এতই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে, শেষমেশ তিনি আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে চিঠি লিখে অভিযোগ অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেছেন। কিন্তু বিতর্ককে আরও একবার উস্কে দিলেন খোদ বিজেপি’র মন্ত্রী এবং প্রাক্তন সেনা অধ্যক্ষ ভি কে সিং। বৃহস্পতিবার বিবিসি’কে এক সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ভি কে সিং আদিত্যনাথের নাম না করে ভারতীয় সেনাকে মোদিজি’র সেনা বলায় দেশদ্রোহী বলতেও কুণ্ঠিত হননি। সিং বলেন, সেনাবাহিনী কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি নয় এবং যাঁরাই এ ধরনের মন্তব্য করেন তাঁরা দেশদ্রোহী। যদি কেউ বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী মোদি’র সেনা, তাহলে তিনি শুধু ভুলই করেননি, বরং তিনি দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সিং আরও বলেছেন, সম্ভবত তাঁরা জানেন না তাঁরা কী বলছেন। এ ধরনের চিন্তাভাবনা তাঁদেরই মস্তিষ্কপ্রসূত, যাদের কিছুই নেই… কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী বিবিসি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতাদের উচিত তাঁরা যেন তাঁদের ভাষণে রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাকে গুলিয়ে না ফেলেন। আমরা যখন রাজনৈতিক কর্মীদের কথা বলে থাকি, তখন শুধু তাঁদের কথাই বলা উচিত। এর মধ্যে ভারতীয় সেনাকে মোদি’র সেনা কিংবা বিজেপি’র সেনা বলাটা কী সমীচীন? দুটোর মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে, যা রাজনীতিকদের বোঝা উচিত।
যোগী আদিত্যনাথের উক্ত মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি কম হয়নি। কংগ্রেস সহ সমস্ত বিরোধী দল আদিত্যনাথের ‘মোদিজি কি সেনা’র তীব্র বিরোধিতা করেছে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্যের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নোটিশ পাঠিয়ে যোগী আদিত্যনাথের জবাব তলব করেছে ৫ এপ্রিলের মধ্যে। খোদ বিজেপি মন্ত্রী ভি কে সিংয়ের এদিনের বক্তব্যে তোলপাড় নির্বাচনের আগে ভারতীয় রাজনীতি। কংগ্রেসের এক বরিষ্ঠ নেতা বলেছেন বিজেপি’র নেতারা মোদির কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুললে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে থাকেন। এখন বিজেপি’র এক মন্ত্রী এবং ভারতের প্রাক্তন সেনা অধ্যক্ষ যখন যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে তাঁকে দেশদ্রোহী বলেছেন (যদিও আদিত্যনাথের নাম উল্লেখ না করে) তখন কী বলবেন নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ। এতেই প্রমাণ হয় কারা ভারতীয় সেনার অপমান করেছেন এবং আদতে কারাই বা দেশদ্রোহী। এখন সবার দৃষ্টি ৫ এপ্রিলের দিকে, যেদিন নির্বাচন কমিশনের নোটিশের উত্তর দেবেন আদিত্যনাথ। এখন দেখার বিষয় যে, সেই জবাবে নিজের হয়ে কী সাফাই দেন তিনি। এবং তাঁর উত্তর পেয়ে কী ব্যবস্থা নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে নিঃসন্দেহে এদিনের ভি কে সিংয়ের মন্তব্যের পর ভোটের মরশুমে চরম বিপাকে পড়েছে বিজেপি বলে মত রাজনৈতিক মহলের।