চেন্নাই, ১১ ফেব্রুয়ারি — শুধু দেশ নয় বিশ্ব মোদিকে হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবেই চেনে। সেই মোদিকে যদি কেউ হিন্দুত্ব প্রসারে মোদির কৃতিত্বকে শুন্য বলে দাবি করে তাহলে কি বলা যায় বলুন তো ? এমনই মন্তব্য করে শিরোনামে মোদির দলেরই এক শীর্ষস্থানীয় নেতা। বিজেপি-সহ সঙ্ঘ পরিবার যখন নরেন্দ্র মোদিকে হিন্দুত্বের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করেছে তখন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর দাবি করেছেন, ‘হিন্দুত্বের প্রসারে নরেন্দ্র মোদীর অবদান শূন্য।’ চেন্নাইয়ে এক অনুষ্ঠানে এই প্রবীণ বিজেপি নেতা এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে শূন্য দিয়েছেন। বলেছেন, সবাইকে অবাক করে দিলে স্বামী দাবি করেন, ‘অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি হোক, এটাই তো চাননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিতর্কিত জমি সরকারের হাতে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন।’
তামিলনাড়ুর এই বিজেপি নেতা প্রথম থেকেই নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচক। ২০১৩ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে বিজেপির সংসদীয় বোর্ড যখন পরের লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন দলের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন আপত্তি তুলেছিলেন, যাঁদের অন্যতম হলেন স্বামী। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর সরকারের আর্থিক নীতি এবং চিন নীতি নিয়ে বারে বারে সরব হয়েছেন অর্থনীতির এই পণ্ডিত। প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, তাঁকে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হলে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি আমূল বদলে দেবেন।
চেন্নাইয়ের অনুষ্ঠানে স্বামী নিজেই মোদির সঙ্গে তাঁর বিরোধের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, এটা ব্যক্তিগত সংঘাত নয়। আমি প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক নীতি এবং চিন নীতির বিরোধী।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা মামলা নিয়ে চূড়ান্ত রায়ে সেখানকার বিতর্কত জমি রাম মন্দির নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করে। সেই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন স্বামী। তাঁর করা একটি পিটিশন মামলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল বলে মনে করেন আইনজ্ঞদের অনেকেই। তাঁর হয়ে আইনজীবী এস গুরুমূর্তি আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, বিতর্কিত জমি সরকারের হাত থেকে নিয়ে মন্দির তৈরির জন্য ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হোক।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে বাবরি মজজিদ ধ্বংসের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও সেখানকার জমি অধিগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকারের হেফাজতে নিয়ে নেন। সুপ্রিম কোর্ট রাম মন্দির নির্মাণ ট্রাস্ট্রের হাতে জমি তুলে দিয়েছে। ২০২০-র ৫ অগাস্ট সেই জমিতে নতুন রাম মন্দিরের শিল্যান্যাস করেছেন মোদী। আগীমী বছর জানুয়ারিতে তাঁর মন্দির উদ্বোধন করার কথা।
চেন্নাইয়ে শনিবারের আলোচনার বিষয় ছিল ভারতের বিশ্বগুরু হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং সক্ষমতা কতটা। প্রধান বক্তা স্বামীর বক্তব্য, ভারত সেদিন বিশ্বগুরু হবে যেদিন সীমান্তে চিনকে সমুচিত জবাব দিতে পারবে। তাঁর কথায়, বিশ্বগুরু হওয়ার জন্য বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন। গুরু, সাধু এবং সন্ন্যাসীরা ছয়টি ভিন্ন ধরণের বুদ্ধিমত্তা অর্জনের কথা বলেছেন। এগুলি হল, জ্ঞানভিত্তিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং পরিবেশগত।