হিন্দিতে সরকারি কাজের সুপারিশের বিরুদ্ধে বাংলা

দিল্লি, ১০ অক্টোবর– হিন্দিতে কাজের সুপারিশ হতেই প্রতিবাদে নামল বাংলা। এই সুপারিশ সংবিধানবিরোধী বলেই জোটবদ্ধ প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে শিক্ষাবিদ ও বিদ্বজ্জনরা। তাদের আরও দাবি বিজেপি শাসিত কেন্দ্রের এই হিন্দি আগ্রাসন নীতি শুধু বাংলা নয়, সমস্ত ‘অহিন্দি’ রাজ‌্যগুলির উপর আক্রমণ। আগামী বুধবার বিকেল পাঁচটায় হাজরা মোড়ে কেন্দ্রীয় সুপারিশপত্রের প্রতিলিপি পুড়িয়ে প্রতিবাদসভা করবে ‘বাংলাপক্ষ’। তিনদিন পর রবিবার রাজ‌্যজুড়ে হবে প্রতিবাদ।

বিদ্দজনদের দাবি, ‘হিন্দু, হিন্দি এবং হিন্দুস্থান’ এই অ‌্যাজেন্ডাকেই প্রতিষ্ঠা করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার। যা সফল হওয়া কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন ভাষাতত্ত্ববিদ  অধ‌্যাপক পবিত্র সরকার। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এমন চেষ্টা বিজেপি নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় সরকার বারবার করেছে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে এটা ফেডারেলিজমের বিরুদ্ধে। আমার মনে হয় না, অহিন্দি রাজ্য, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলি এই সুপারিশ কোনও দিন মানবে।

হিন্দি বনাম আঞ্চলিক ভাষা বিতর্ক নতুন নয়। কংগ্রেস আমলেও এই বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। কিন্তু এবার হিন্দিকে সরকারি কাজে ব‌্যবহারের ফরমান সংসদীয় কমিটির সুপারিশ হয়ে পৌঁছে গিয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রসংঘ থেকে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, আইআইটিতে শিক্ষাদান, এমনকী হিন্দিভাষী রাজ্যের হাইকোর্ট-সর্বত্র হিন্দি ব্যবহৃত হোক ইংরাজির পরিবর্তে। 


উল্লেখ‌্য, সুপারিশটি এসেছে সংসদীয় কমিটির নেতৃত্বে খোদ অমিত শাহের কাছ থেকে । যিনি কিছুদিন আগেই দেশের প্রধান ভাষা হিসাবে হিন্দির পক্ষে জোরদার সওয়াল তুলে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সুপারিশপত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে। তাদের দাবি, গত মাসেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে এই সুপারিশপত্র জমা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সুপারিশপত্রে বলা হয়েছে: এক, রাষ্ট্রসংঘে ভারতের সরকারি ভাষা হোক হিন্দি। দুই, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, আইআইটি, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের ভাষা হোক হিন্দি। তিন, হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে হাই কোর্টের কাজের ভাষাও করা হোক হিন্দিকে। চার, সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক ইংরেজির জায়গায় এবার থেকে হিন্দি রাখা হোক। পাঁচ, সরকারি বিজ্ঞাপনের ৫০ শতাংশেরও বেশি হোক হিন্দি বিজ্ঞাপন।

এছাড়াও সুপারিশপত্রে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কোনও সরকারি কর্মী ও আধিকারিক ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দিতে কাজকর্ম এড়িয়ে গেলে তাঁদের থেকে ব্যাখ্যা চাইতে হবে। উত্তর সন্তোষজনক না হলে বার্ষিক পারফরম্যান্স রিপোর্টে তার উল্লেখ রাখতে হবে। অষ্টম তফসিলে থাকা বাইশটি ভাষাই সমান মর্যাদাসম্পন্ন। রাজ‌্যকে বাদ দিয়ে এই সুপারিশপত্র কার্যকর করা অসম্ভব।’’ পবিত্রবাবুর বক্তব‌্য, ‘‘হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে হিন্দিতে কাজ হতেই পারে। কিন্তু অহিন্দিভাষী রাজ্যগুলি হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত কখনও মেনে নেবে না।’’