বাংলা রকব্যান্ডের এক ঐতিহাসিক অধ্যায় শেষ হল। বাংলায় তৈরি প্রথম রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’-র অন্যতম স্রষ্টা তাপস দাস প্রয়াত হলেন । সঙ্গীতপ্রেমীদের অতি প্রিয় ও পরিচিত বাপিদার জীবনাবসান হল।
সাল ১৯৭৫। বাংলা গানের জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল প্রথম বাংলা রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি ‘। ৪৭ বছর পেরিয়েও যে স্রষ্টাদের সৃষ্টি জনপ্রিয়তা হারায়নি । গানের স্রষ্টারা একে একে পাড়ি দিয়েছেন , এবার চলে গেলেন বাপিদা। বাপিদার প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘দেশের প্রথম রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র তাপস দাস ওরফে বাপিদার প্রয়াণে আমি শোকাহত। গত কয়েক মাস ধরে মারণরোগে ভুগছিলেন বাপিদা। রাজ্য সরকার তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিল। এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। বাপিদার পরিবারের সদস্য ও তাঁর অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা।’’
ফুসফুসের ক্যানসারের তৃতীয় ধাপে ছিলেন । অর্থাভাব থাকায় চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছিলেন না একটা সময়। দুরারোগ্য এই ব্যাধির বিপুল খরচের মুখে দাঁড়িয়ে দিশেহারা বাপিদার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান বাংলা ব্যান্ডের শিল্পীরা । বাংলা রক ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার চিকিৎসায় তহবিল গঠনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন দুই বাংলার শিল্পীরা। ক্যাকটাসের সিধু থেকে রূপম ইসলাম সকলেই বেছে নেন সোসাল মিডিয়াকে । সকলের কাছে আবেদন জানানো হয় ক্রাউড ফান্ডিং-এর । যদিও এরপর সরকারের তরফে চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়। তবু শেষ রক্ষা হলো না। এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। কিছুটা সুস্থ হয়ে কয়েক দিনের জন্য বাড়ি ফিরেছিলেন। পরে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ফের এসএসকেএমেই নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। গত কয়েক দিন সেখানেই চলছিল চিকিৎসা। ৬৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন শিল্পী ।
সংগীতশিল্পী রূপম। ফেসবুকে লেখেন , ‘সচল হয়েই থেকে গেল গানজীবনের অনন্ত পথ চলা…থেমে গেল বললে ভুল হবে, মারাত্মক ভুল…বাপীদা, সশরীরে তুমি আর নেই। কিন্তু সর্বত্র এভাবেই তুমি থাকবে। লাল সেলাম। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।’
বাপিদা ছিলেন প্রাণশক্তিতে ভরপুর । কয়েক মাস আগেও মারণ রোগের যন্ত্রণা নিয়ে মঞ্চে উঠে গান গেয়েছেন। নাকে মুখে নল লাগিয়ে চলতি বছরের শুরুতে সঙ্গীত মেলায় তিনি ভালোবাসার গান গেয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন ।
পৃথিবী থেকে এখন বহুদূরে , এক অজানা জগতে পাড়ি দিয়েছেন সকলের প্রিয় বাপিদা । কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টি, ‘তোমায় দিলাম’, ‘আমার প্রিয় ক্যাফে’, ‘ভালোবাসি’, ‘ঘরে ফেরার গান’ রেখে গেলেন শ্রোতাদের জন্য।