কলকাতা, ২৯ জুলাই – কলকাতায় পা রেখেই শনিবার মমতাকে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও তার পরবর্তী সময়ে হিংসার কারণ হিসেবে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করেন তিনি। গত সাত-আট বছর ধরে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তৃণমূল সুপ্রিমো অপরাধী ও দুষ্কৃতীদের সাহায্য করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করতেও শোনা যায়।
শনিবার সকালে কলকাতায় পা রাখেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। দমদম বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে ভোট হিংসা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। বলেন, “পঞ্চায়েত হিংসায় মোট ৫৭ জন খুন হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল কর্মীরা রাজ্যে অরাজকতা করছে। মমতার নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে বাংলায়। রাজনৈতিক লাভের জন্য ৮-৯ বছর ধরে অপরাধীদের রক্ষনাবেক্ষন করেছেন। মানুষ তার জবাব ভোটের মাধ্যমে দিয়েছেন। বিজেপির আসন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এটা প্রমাণিত মমতার সময় ধীরে ধীরে ফুরিয়ে এসেছে।”
শনিবারই অধীরের নেতৃত্বে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির ২১ জন সাংসদের প্রতিনিধি দল মণিপুরে রওনা হন। সেই দলে রয়েছেন বাংলার শাসকদল তৃণমূলের প্রতিনিধিও। কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনুরাগ কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘আজ যাঁরা মণিপুর যাচ্ছেন, তাঁরা কি বাংলাতেও আসবেন? বাংলার মহিলাদের উপর যা অত্যাচার হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে কংগ্রেস কী করবে? লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর কি ‘ইন্ডিয়া’-র প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলায় আসবেন না?’’প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, যে সাংসদদের নিয়ে অধীর মণিপুরে , একই ভাবে তাঁদের নিয়ে বাংলায় আসবেন তো? যাবেন তো রাজস্থানে?
প্রসঙ্গত, বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অশান্তি এবং হিংসা নিয়ে অধীর বার বার কাঠগড়ায় তোলেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে। কংগ্রেসের তরফেও সন্ত্রাসের জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করা হয়। এদিকে জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধেছে কংগ্রেস। অনুরাগ কংগ্রেসের এই অস্বস্তিকেই উস্কে দিয়েছেন।
এদিকে বিরোধী জোটকে নিয়ে অনুরাগের কটাক্ষের জবাব দেয় তৃণমূল। মন্ত্রী শশী পাঁজা এ প্রসঙ্গে অনুরাগের পুরনো ‘গোলি মারো’ মন্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ভুলিনি, এই সেই বিজেপি নেতা, যিনি ‘দেশ কি গদ্দারোঁ কো গোলি মারো…’ মন্তব্য করেছিলেন। শুধু ওই মন্তব্যের জন্যেই তো ওঁর জেলে থাকা উচিত। কিন্তু বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে। তাই তিনিও জেলের বাইরে।’’
অনুরাগ ঠাকুরের মন্তব্যে পাল্টা তোপ দাগেন ফিরহাদ হাকিম। এদিন তিনি বলেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি যারা ভাঙে , যারা বাংলা ভাষাকে অবমাননা করে , তাঁদের বাংলার রাজনীতিতে স্থান নেই। তিনি আরও বলেন, তাঁদের বড় বড় নেতা অনুরাগ-বিরাগ কলকাতায় এলে খুব বেশি লাভ হবে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এর আগে ভোট হিংসার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তার দায় তিনি বিরোধী বাম, বিজেপি ও কংগ্রেসের উপরেই ঠেলে দেন। ভোট হিংসায় তৃণমূল কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছেন বলেও পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করেন।
প্রসঙ্গত , পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী বিজেপি প্রার্থীদের সম্বর্ধনা দিতে রাজ্যে এসেছেন অনুরাগ ঠাকুর। তিনি প্রথমে হুগলির কামারপুকুরে যান, সেখান থেকে যান খানাকুল।