দিল্লি, ৩ সেপ্টেম্বর – লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন একইসঙ্গে হতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এক দেশ এক নির্বাচন নিয়ে জোরদার চর্চা এই গুঞ্জনের পালে শক্তি জুগিয়েছে। এই বিষয়ে স্পষ্ট জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। যদিও নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসা বা পিছোনোর প্রশ্নে সরকারের পরিকল্পনা স্পষ্ট করেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তবে একইসঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত এই গুঞ্জনকে অনুরাগ ঠাকুর ‘সংবাদমাধ্যমের অনুমান’ বলেও অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর করতে একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি এই বিষয়ে আলোচনা করে তবেই নীতি নির্ধারণ করবে।’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত ভারতবাসীর জন্য কাজ করতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি.। তাই লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আনার কোনও প্রশ্নই নেই। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনগুলিকেও পিছিয়ে বা এগিয়ে আনার কোনও পরিকল্পনা নেই সরকারের। এই সবই ‘সংবাদমাধ্যমের অনুমান’ বলে তিনি জানান। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে কমিটি গঠিত হলেও, এখনই সেই পথে হাঁটবে না সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছেন, “এক দেশ, এক নির্বাচন নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি এক দেশ, এক নির্বাচনের নিয়মগুলি চূড়ান্ত করার আগে সব পক্ষের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবে।” কাজেই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সময়ই ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে কমিটি গঠন করে তার শীর্ষে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে বসিয়েছিল কেন্দ্র। শনিবার সেই কমিটির সাত জন সদস্যের নামও জানানো হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পাশাপাশি সেই কমিটিতে নাম ছিল লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীরও। কিন্তু শনিবারই অধীর কমিটির সদস্য হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। অমিত শাহকে চিঠি লিখে তিনি জানিয়েছেন, এই প্রস্তাবটি ‘সাংবিধানিক দিক থেকে সন্দেহজনক, বাস্তবতার দিক থেকে অসম্ভব এবং যৌক্তিকতার দিক থেকে অবাস্তব’। এর পিছনে ‘সরকারের কোনও গোপন উদ্দেশ্য’ আছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। কংগ্রেস দলও এই কমিটি গঠনের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কমিটিতে কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে না রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই বিষয়ে অনুরাগ ঠাকুরের দাবি, বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী মোদির বড় মনের পরিচয় ।
১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান, এই অধিবেশনে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’-র মতো বিল পেশ করতে পরে সরকার। অনুরাগ ঠাকুর জানিয়েছেন, এই অধিবেশন নিয়ে সরকারের বড় পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, এই অধিবেশনের আলোচ্যসূচী ঠিক কী তা তিনি খোলসা করেন নি। যথাযথ সময়ে সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী তা জানাবেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
‘এক দেশ এক ভোট’ নীতির কার্যকর করার ক্ষেত্রে মোদি সরকারের যুক্তি এতে নির্বাচনী ব্যয় কমবে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হবে লা। নীতি আয়োগ, আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশনও এই ভাবনাকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে বলে কেন্দ্রের দাবি। তবে বিরোধী দলগুলির মতে, এই নীতি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর উপর আঘাত । কেন্দ্র এবং দেশের প্রতিটি রাজ্য সরকারের স্বতন্ত্রতার উপর আক্রমণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।