দিল্লি , ১৬ অক্টোবর – নিঠারি হত্যা মামলার দুই মূল অভিযুক্ত ফাঁসির আসামিকে বেকসুর খালাস করে দিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সোমবার এই রায় দিয়েছে হাইকোর্টের বিচারপতি অশ্বিনী কুমার মিশ্র এবং বিচারপতি এসএএইচ রিজভির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। সুরিন্দর কোহলিকে ১২টি মামলায় নির্দোষ বযে ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দুটি মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে অপর অভিযুক্ত মনিন্দর সিং। নিম্ন আদালতে তাঁদের ফাঁসির সাজা হয়েছিল ।
কুখ্যাত ফৌজদারি মামলার মধ্যে অন্যতম নিঠারি হত্যা মামলা। নয়ডায় ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে নাগাদ নিঠারিতে একের পর যুবতী, কিশোর-কিশোরী নিখোঁজ হতে শুরু করে। তদন্তে নেমে ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিঠারির ব্যবসায়ী মনিন্দর সিং পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৯টি কঙ্কাল এবং মানুষের দেহাবশেষ। এই ঘটনায় গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তদন্তে উঠে আসে, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের উপর যৌন অত্যাচার চালিয়ে খুন করে তাদের দেহাংশ সেদ্ধ করে খেতেন পান্ধের এবং তাঁর বা়ড়ির পরিচারক সুরিন্দর। পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালগুলির মধ্যে এক বাঙালি তরুণী পিঙ্কি সরকারের কঙ্কাল পাওয়া যায়। অভিযোগ ওঠে , যৌন নির্যাতনের পরে খুন করা হয় তাঁকে। সেই মামলায় পান্ধের এবং কোহলিকে ফাঁসির সাজা শোনান সিবিআই আদালতের বিশেষ বিচারক পবন তিওয়ারি।
নিঠারি হত্যাকাণ্ডে মোট ১৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে তিনটি মামলা খারিজ হয়ে যায়। বাকি ১৬টি মামলার মধ্যে সাতটিতে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয় কোহলিকে। মনিন্দর জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। পরে পিঙ্কি খুনের মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পিঙ্কি খুনে সিবিআই তদন্তে উঠে আসে, বছর কুড়ির বাঙালি মেয়েটি মনিন্দরের বাড়িতে পরিচারিকা হিসেবে ঢুকেছিলেন। তদন্তকারী সংস্থা জানায়, সেখানে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা হয়। তাঁর মাথা কেটে বাকি দেহ প্রেশার কুকারে রান্না করে খাওয়ার অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালে পিঙ্কির জামাকাপড় দেখে শনাক্ত করেন তাঁর বাবা-মা। পরে সুরিন্দর নিজে পিঙ্কির চটি শনাক্ত করেন। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, অন্য মামলাগুলিতেও তিনি নিজেই শিশুদের ধর্ষণ, খুন করে তাদের খেয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন।
২০০৬ সালে নিঠারি হত্যা রহস্য সামনে আসার পর গোটা দেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। পান্ধেরের নিঠারির বাড়ির নর্দমা থেকে একাধিক শিশু ও মহিলার হাড়গোড় পায় পুলিশ। ঘটনার পর তদন্তে নেমে তদন্তকারী সংস্থা জানতে পারে , বিভিন্ন রকম কারণ দেখিয়ে তরুণী ও শিশুদের ওই বাড়িতে নয় যাওয়া হতো , এরপর তাদের ধর্ষণ করে খুন করা হতো।