লেবাননের পর এবার ইজরায়েলকে চরম হুঁশিয়ারি ইরানের , আগ্রাসন বন্ধ না হলে পদক্ষেপ করার হুমকি

দিল্লি, ১৬ অক্টোবর – ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে এবার লেবানন থেকে আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে শিয়া জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লা। তাদের হামলায় মৃত্যু হল ইজরায়েলি সেনার এক শীর্ষ আধিকারিকের। ফলে যতদিন যাচ্ছে, গাজার পাশাপাশি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইজরায়েল-লেবানন সীমান্তও।  ঘটনাটি নিশ্চিত করে সোমবার ইজরায়েলি সেনার তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার রাতে লেবাননের সীমান্তে গোলাগুলির লড়াইয়ে তাদের এক সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে হিজবুল্লা । ঘটনার দায় স্বীকার করেছে লেবাননের জঙ্গি সংগঠনটিও। শিয়া সন্ত্রাসবাদী দলটি জানিয়েছে, তারা সীমান্ত লাগোয়া ইজরায়েলের বরাক ও পাঁচটি সামরিক ঘাঁটি নিশানা করেছিল। দক্ষিণ লেবাননে ইজরায়েলের আক্রমণে যে সাংবাদিক ও সাধারণ বাসিন্দাদের মৃত্যু হয়েছে তার বদলা নিতেই ছিল এই হামলা।

গত শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছিল, ইজরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন রয়টার্সের চিত্র সাংবাদিক ইশাম আবদুল্লা। এক বিবৃতিতে রয়টার্স জানায়, ‘দক্ষিণ লেবাননে কাজ করছিলেন ইশাম। সেখানেই গোলাবর্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় আমরা মর্মাহত। ওই অঞ্চলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ইশামের পরিবারের পাশে রয়েছে রয়টার্স।’ ওই হামলায় মৃত্যু হয়েছে দুই স্থানীয় বাসিন্দার। রবিবার এই ঘটনারই পালটা জবাব দিয়েছে হিজবুল্লা।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামলা চালায় হামাস। রয়টার্স সূত্রে খবর এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদত দিচ্ছে লেবাননের হিজবুল্লা। গত সোমবার থেকেই ইজরায়েলি ফৌজের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়েছে ইরানের মদতপুষ্ট এই দলটির। আইডিএফ-এর পালটা মারে সেদিনই নিহত হয় তিন হিজবুল্লা যোদ্ধা। 

এদিকে এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই চরম হুঁশিয়ারি দিল ইরান। যদি প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে ইজরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হয় , তবে অন্যান্য দেশগুলিও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে বলে হুমকি দিল ইরান। গত সপ্তাহে যুদ্ধ শুরুর পরই ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান  অভিযোগ এনেছিলেন, যুদ্ধে ইজরায়েল গণহত্য়া করতে চাইছে। রবিবার তিনি বলেন, “যদি ইহুদিপন্থীরা আগ্রাসন বন্ধ না করে, তবে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলির হাতও ট্রিগারে রয়েছে।” আবদুল্লাহিয়ান আরও বলেন, “গাজায় হামলা যুদ্ধের নতুন দিক খুলে দেবে। এই যুদ্ধের সম্পূর্ণ দায় আমেরিকা ও জিয়োনিস্ট শাসকদের উপরেই পড়বে।”


অন্য দিকে, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রবিবারই হামাসকে ধ্বংস করার হুঁশিয়ারি দেন।  তাঁর সেনাবাহিনী হামাসের সদস্যদের খোঁজে গাজ়ায় প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হামাসকে ধ্বংস করতে ইজরায়েলি মিলিটারি প্রস্তুত। শীঘ্রই গাজায় অভিযান চালানো হবে এবং হামাসকে ধ্বংস করা হবে।

ইরানের বিরুদ্ধে হিংসায় ইন্ধন দেওয়া ও হামাস বাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার অভিযোগ ইজরায়েলের দীর্ঘদিনের অভিযোগ । তেহরানের তরফেও ইজরায়েলের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়নি। তারা জানায়, গাজা স্ট্রিপ নিয়ন্ত্রণকারী হামাসকে নীতিগত ও আর্থিকভাবে সমর্থন করে তারা। ইরানের বিদেশমন্ত্রীও শনিবার কাতারে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

প্যালেস্তাইন ভেঙে ইহুদিদের পৃথক রাষ্ট্র ইজ়রায়েল গঠনের পর থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।। গত শনিবার ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের আক্রমণের পর থেকেই  যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।  ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা হামলা এবং গোলাগুলির গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে তেল আভিভ, গাজ়ার বাতাস । ইজ়রায়েলকে সমর্থন করছে  আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলি। ভারতও তাদের পাশেই দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইরান, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজ়বুল্লা ইতিমধ্যেই হামাসের পাশে দাঁড়িয়ে ইজ়রায়েলকে সতর্ক করেছে।