কলকাতা, ২১ জুন — মোদি বিরোধী জোটে মমতার সঙ্গী হলেন অভিষেক। শুক্রবার অবিজেপি দলগুলির ‘ঐতিহাসিক’ বৈঠক হতে চলেছে পাটনায়। বা বলা যায় শুক্রবার দেশের রাজনীতির রাজধানী হয়ে উঠতে চলেছে পাটলিপুত্র। পটনায় বিজেপি বিরোধী দলগুলির বৈঠকে যোগদানের কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বুধবার জানা গেল, ওই বৈঠকে তাঁর সঙ্গী হবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উদ্যোগে এই বৈঠক হতে চলেছে। আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি বিরোধী ফ্রন্ট গঠনের ফর্মুলা নিয়ে এবার সেখানে মিলিত হতে চলছে দেশের প্রথম সারির একাধির বিরোধী দলের শীর্ষ নেতানেত্রীরা । যাদের মধ্যে বাংলার মুখ মমতা বন্দোপাধ্যায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান রাখে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেই মমতার সঙ্গে অভিষেকেরও যোগদানের সিদ্ধান্তকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, মমতার এই সিদ্ধান্তে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী সমীকরণে তৃণমূলের ‘মুখ’ হিসাবে অভিষেকের ‘প্রতিষ্ঠা’ নিশ্চিত হল।
মমতার ‘সুপারিশ’ মেনেই দিল্লির বদলে বিহারে বৈঠকের আয়োজন করেছেন নীতীশ। গত ২৪ এপ্রিল আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীকে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন নীতীশ।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, যে বৈঠকে রাহুল গান্ধি, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, নীতীশ কুমার, এমকে স্ট্যালিনদের মতো বড় নেতারা থাকবেন সেখানে অভিষেককে নিয়ে যাওয়া অবশ্যই অর্থবহ। অনেকে এটিকে জাতীয় স্তরে অবিজেপি মঞ্চে অভিষেকের নয়া অভিষেক হিসাবেই দেখছেন।
আবার কেউ কেউ ভিন্ন দর্শন দেখছেন। তাঁদের মতে, বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেমন প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, তেমন বাম-কংগ্রেসও রয়েছে। রাহুল, খাড়গে, সীতারাম ইয়েচুরিরা মমতা-অভিষেকের সঙ্গে পাটনার বৈঠক শেয়ার করলে বাংলায় মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরীরদেরও কিছুটা অস্বসস্ত্বির মধ্যে পড়তে হবে বলে তাঁদের মত।
এখানে বলে রাখা ভাল, পাটনায় এই বিরোধী দলগুলির মেগা বৈঠক হচ্ছে মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে। কারণ মাস দুয়েক আগে যখন নীতীশ কুমার ও তেজস্বী যাদব নবান্নে মমতার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন সেদিনই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী পরামর্শ দিয়েছিলেন, বৈঠক হোক পাটনায়। তার ব্যাখ্যা হিসাবে মমতা বলেছিলেন, জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলন শুরু হয়েছিল বিহার থেকে। তারপর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই এই ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’র বিরুদ্ধে আন্দোলনের সলতেটা পাকুক বিহার থেকেই।
গত ১২ জুন এই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও রাহুলের আমেরিকা সফর, খাড়গের পৃথক কর্মসূচি, স্ট্যালিনের সময়ের অভাবের জন্য পিছিয়ে যায়। শুক্রবার পাটনায় পৌঁছে প্রথমে অসুস্থ লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে দেখা করবেন মমতা। তারপর যোগ দেবেন বৈঠকে। শনিবার তাঁর বাংলায় ফেরার কথা।