বাদ সাধল ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, উদ্ধারে ফের বিলম্ব, এবার দিল্লির ৪ বিশেষজ্ঞের সাহায্য 

উত্তরকাশী, ২৫ নভেম্বর –  বেড়েই চলেছে উৎকণ্ঠার প্রহর গোণা। ১৪ দিন পার হয়ে গেলেও এখনও উত্তরকাশীর সিল্কইয়ারা টানেলে আটকে ৪১ জন শ্রমিক। বারবার ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। শুক্রবার রাতে  ড্রিলিং মেশিন ভেঙে যাওয়ায় থমকে যায় উদ্ধারকাজ। কী ভাবে , কখন শ্রমিকদের অন্ধকূপ থেকে বের করে আনা সম্ভব হবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সময়সীমা দিতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। কয়েক ঘণ্টাও হতে পারে বা কয়েক দিন, কারণ একের পর এক অপ্রত্যাশিত নানা বাধা সামনে চলে আসায় পিছোচ্ছে উদ্ধারকাজ। এবার দিল্লি থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চারজন টানেল বিশেষজ্ঞ দক্ষ শ্রমিককে। শনিবার রাতেই তাঁরা পৌঁছে যাবেন উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গস্থলে। তারপরই ফের শুরু হবে উদ্ধারকাজ। তবে শ্রমিকরা যে ভাল আছেন তা  স্পষ্ট করেছে উদ্ধারকারী টিম।
 ইতিমধ্যে শেষ ধাপে কীভাবে উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হবে, তা একটি মক ড্রিলের মাধ্যমে দেখিয়েছেন এনডিআরএফ কর্মীরা। মক ড্রিলে পাঁচ ইঞ্চি পুরু পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। তেমনই একটি পাইপ সুড়ঙ্গের মুখ থেকে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পাঠানো হবে। দিল্লির বিশেষজ্ঞ শ্রমিকরাও দুটি ভাগে ভাগ হয়ে ২ জন করে সেই পাইপ দিয়েই পৌঁছবেন আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে। তারপরই স্ট্রেচারে করে শ্রমিকদের একে একে বাইরে বের করে আনবেন তাঁরা।উদ্ধারকারীদের তরফে জানানো হয়েছে, চাকা লাগানো ওই স্ট্রেচারে শ্রমিকেরা শুয়ে থাকবেন। কোনওভাবেই যাতে তাঁদের শরীরে আঘাত না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। সে কারণেই দিল্লি থেকে ওই চার বিশেষজ্ঞ শ্রমিককে উড়িয়ে আনা হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে রয়েছেন বিদেশি টানেল এক্সপার্ট আর্নল্ড ডিক্স।আমেরিকায় তৈরি ওই যন্ত্রের মাধ্যমেই সুড়ঙ্গের ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে খুঁড়ে এগোচ্ছিলেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু সেই যন্ত্র ভেঙে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে উদ্ধারকাজ। ওই যন্ত্রকে আর কোনও ভাবেই মেরামত করা যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান আর্নল্ড ডিক্স। তাই এবার ‘সেকেলে’ হাতিয়ারের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। শ্রমিকদের উধার করতে শাবল, গাঁইতি, কোদালের সাহায্যেই শ্রমিকদের উদ্ধার কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  
উত্তরকাশীর সিল্কইয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে ৪১ শ্রমিককে উদ্ধারের এই অপারেশনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন টানেল এক্সপার্ট আর্নল্ড ডিক্স। তিনি অস্ট্রেলীয় নাগরিক। ইন্টারন্যাশনাল টানেলিং অ্যান্ড আন্ডারগ্রাউন্ড স্পেস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যক্ষ তিনি। এই ধরণের অনেক উদ্ধারকাজ সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন আর্নল্ড। ফলে ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধারের এই দুঃসাহসিক অভিযানে তাঁকে উড়িয়ে আনা হয়েছে। শ্রমিকদের উদ্ধার করতে এ বার উপর দিক থেকে খোঁড়ার কাজ শুরু হতে পারে। তার জন্য সুড়ঙ্গের উপরে পৌঁছে গিয়েছে নতুন যন্ত্র। ওই যন্ত্রের মাধ্যমে উপর দিক থেকে নীচ পর্যন্ত খুঁড়ে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন উদ্ধারকারীরা।
বহু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর উদ্ধার অভিযানে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই আর্নল্ড ডিক্স। যে কোনও উদ্ধার অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অনন্য। ভূগর্ভস্থ এবং পরিবহণ সংক্রান্ত পরিকাঠামো বিষয়েও বিশেষজ্ঞ তিনি। কোনও প্রকল্পের নির্মাণকাজে প্রযুক্তিগত বিষয়ের সুরক্ষার দিকটি দেখেন তিনি। ভূগর্ভস্থ প্রকল্পের ক্ষেত্রে কী কী বাধা-বিপত্তি আসতে পারে, সুরক্ষার কোন দিকগুলি গুরুত্বপূর্ণ, কোনও বিপদ ঘটনা তা থেকে থেকে বাঁচার উপায় কি , এই বিষয়গুলি তাঁর আয়ত্তাধীন।। গোটা বিশ্বে বিভিন্ন টানেল তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর থেকে বিশেষজ্ঞের মতামত  নেওয়া হয়ে থাকে।
উত্তরকাশীর টানেলে ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধারের চেষ্টায় ১৪ দিন ধরে কাজ করছে ড্রিলিং মেশিনগুলি। এই প্রক্রিয়ায় একাধিক বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। পদে পদে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে বারবার থমকাচ্ছে উদ্ধারকাজ। আর্নল্ড ডিক্স প্রথমে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে শ্রমিকদের বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে আর্নল্ড ডিক্স উদ্ধারকারীদের আশ্বাস দিয়েছেন ৪১ জন শ্রমিকদের অবশ্যই নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। তবে তাঁর মতে, হুড়োহুড়ি করলে উদ্ধারকাজে সমস্যা হতে পারে। তাই অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধারকাজ চালাতে হবে।
সংবাদমাধ্যমে আর্নল্ড ডিক্স বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম বৃহস্পতিবার রাতেই শ্রমিকদের বের করে আনা সম্ভব হবে। তারপর মনে হল শুক্রবার সকাল কিংবা দুপুর হয়ে যাবে। কিন্তু, মনে হচ্ছে পাহাড় অন্য কিছু ভেবে রেখেছে। অপারেশন চলাকালীন মাঝেমধ্যেই যদি যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ড্রিলিং মেশিন বন্ধ হয়ে যায়, তবে তা পুনরায় চালু করে কাজ শুরু করতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে। আমরা এখন ফাইনাল স্টেজে রয়েছি। এবার আমাদের আরও বিকল্প পথের সন্ধান করতে হবে।’