দিল্লি, ১৭ অক্টোবর-– সময় খুব একটা ভালো যাচ্ছে না দিল্লির আপ সরকারের। আবগারি দুর্নীতির মামলায় একের পর এক নেতা যেভাবে জড়িয়ে পড়ছেন তাতে আপের জনপ্রিয়তা যে ভাটা নামা সময়ের অপেক্ষা তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন আপ নেতা কেরিয়াল। প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আপের প্রথমসারির নেতা মনীশ সিসোদিয়া, রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং আগেই জেলে। কিন্তু ওই মামলায় আরো বড় বিপদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজিওয়ালের দরজার কড়া নাড়ছে । এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইডি ও সিবিআই। ইডি ও সিবিআইইয়ের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়েছে, তারা আবগারি অর্থাৎ মদ কেলেঙ্কারিতে আপের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করতে চলেছে। আম আদমি পার্টিকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর আগে কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় সরাসরি তদন্তের নজির নেই।
দুই তদন্তকারী সংস্থার এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তোলা প্রশ্ন। শীর্ষ আদালত দিন ১৫ আগে প্রশ্ন তোলে, দুর্নীতির অর্থ যদি আপের তহবিলে গিয়ে থাকে তাহলে কেন ওই দলকেও তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে না। দুই তদন্তকারী সংস্থার তরফে আদালতে জানানো হয়, তারা আপকে এই মামলায় যুক্ত করে তদন্ত করবে। মূল মামলায় যেহেতু বেআইনি পথে অর্থ উপার্জন ও লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে তাই আপের দলীয় এবং নির্বাচনী তহবিল খতিয়ে দেখবে ইডি-সিবিআই।
আর এতেই আপের ভরাডুবির সংকেত দেখতে পারছেন ওয়াকিব মহল। কারণ ইডি সিবিআইয়ের দিল্লির আবগারি মূল মামলায় বলা হয়েছে, মদের ডিলারশিপ বিলি করে আপ নেতারা কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। সেই টাকার বড় অংশ জমা হয় আপের নির্বাচনী তহবিলে। নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন আইনি উপদেষ্টা এসকে মন্দিরাত্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনে আপের জমা করা হিসাবের সঙ্গে ইডি-সিবিআই গরমিল বা কালো টাকার সন্ধান পেলে বিপদে পড়বে ওই দল। কমিশন সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে আপের স্বীকৃতি বাতিল করে দিতে পারে। তদন্তে সিবিআই ওই দলের যাবতীয় খরচ, লেনদেন খতিয়ে দেখবে।”
আইনজ্ঞদের একাংশের মতে, এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট উত্থাপিত প্রশ্নের সূত্র ধরে দুর্নীতির মামলায় অন্যান্য দলের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ করতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। তবে দিল্লির এই মামলা যে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও কালো মেঘ বয়ে আনবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে নারদ মামলায় অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীরা দাবি করেছেন, ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে আসা ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছ থেকে তাঁরা ঘুষ নয়, দলীয় তহবিলের জন্য অনুদান নিয়েছিলেন। এই সূত্রে তৃণমূলকেও তদন্তে যুক্ত করা অসম্ভব নয়। যদিও আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ না থাকলে তা সম্ভব নয় বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।