দিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর – স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে খোলা চিঠি লিখলেন উত্তরপ্রদেশের একটি আদালতের একজন মহিলা বিচারক। খোলা চিঠিতে ওই মহিলা বিচারক তাঁর উপর হওয়া যৌন হেনস্থার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন , তাঁর থেকে উচ্চ পদমর্যাদায় থাকা ব্যক্তি এবং তাঁর সহযোগীরা ওই মহিলা বিচারককে যৌন হেনস্থা করেন। নিজের জীবন শেষ করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন – কাইন্ডলি পারমিট মি টু এন্ড মাই লাইফ ইন আ ডিগনিফায়েড ওয়ে। লেট মাই লাইফ বি ডিসমিসড।’ সঙ্গে কর্মরত মহিলাদের উদ্দেশে বার্তা – ‘যৌন হেনস্থা নিয়ে বাঁচতে শিখুন। এটাই আমাদের জীবনের সত্যি। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা বা POSH আসলে একটা বিরাট মিথ্যা যা আমাদের বলা হয়। আপনি আপনার যৌন নির্যাতন নিয়ে অভিযোগ জানালে আপনাকেই হেনস্থা করা হবে। কেউ শোনার নেই, এমনকি সুপ্রিম কোর্টও ৮ সেকেন্ডে মামলা ডিসমিসড করবে!’
উত্তরপ্রদেশের আদালতের ওই মহিলা বিচারক লিখেছেন গত দেড় বছর ধরে নির্যাতন সহ্য করে তিনি ক্লান্ত। তিনি আর বেঁচে থাকতে পারবেন না। তাই প্রধান বিচারপতির কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তিনি লেখেন, ‘ আমি অনুরোধ করছি, সম্মানের সঙ্গে আমায় আমার জীবন শেষ করতে দেওয়া হোক। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে এই চিঠি।
এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এলাহাবাদ হাই কোর্ট থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি। চিঠিতে মহিলা বিচারক জানিয়েছেন, গত বছর তিনি যখন উত্তরপ্রদেশের বরাবাঁকিতে পোস্টেড ছিলেন, তখন তাঁকে মানসিক ও যৌন হেনস্থা করেছেন ওই রাজ্যেরই একজন সিনিয়র জাজ। তাঁকে নানা অজুহাতে অভিযুক্ত নিজের কাছে রাত্রে ডেকে পাঠাতেন। নানা ভাবে তাঁকে যৌন হেনস্থা করতেন। তিনি প্রতিবাদ করলে শুনানির সময়ে তাঁকে উদ্দেশ করে নানা অপমানজনক মন্তব্য করতেন। অভিযোগ জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। তাই তিনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বেছে নিতে চান।
প্রধান বিচারপতির নির্দেশমাফিক সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল অতুল এম কুরহেকার এলাহাবাদ হাই কোর্টের রেজিট্রার জেনারেলকে চিঠি লেখেন। মহিলা বিচারকের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বিচারক লিখেছেন, ‘আমি তো বেশি কিছু চাইনি। এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিশাখা কমিটির কাছে আমি একটা সঠিক তদন্ত চেয়েছিলাম। আর সেই সময় যাতে ওই সিনিয়র জাজকে অন্যত্র বদলি করা হয় তা বলেছিলাম। তা হয়নি। বরং কমিটি উইটনেস হিসেবে অভিযুক্তেরই দুই জুনিয়রকে ডাকে। কমিটি কী করে ভাবল যে তাঁরা সিনিয়রের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবেন ?ইটা আমার ভাবনার বাইরে।’
এই মামলাটি এলাহাবাদ হাইকোর্টে বিচারাধীন। ফরেন্সিক এভিডেন্স সংগ্রহের নির্দেশও দিয়েছে। কিন্তু তার পরে আর কিছুই হয়নি। তাই এই বিচারকের বক্তব্য, ‘আমাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে রাখা হয়েছে। নিজেকে কেমন যেন পোকা মনে হয়। ইউজ়লেস… জজ হয়ে আমি নিজের জন্যই বিচারের ব্যবস্থা করতে পারছি না, অন্যদের আমি কী সুবিচার দেব?’ এর পরেই পুরো ব্যবস্থাকে একটা প্রহসন বলে তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করে চিঠি দেন সিজেআই-কে।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, মহিলা বিচারক কর্মক্ষেত্রে হেনস্থার যে ছবি তুলে ধরেছেন, তা প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সত্যি। একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অভিযোগকারিণীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে, চাকরি থেকে তাড়ানো হয়েছে বা বদলি করে দেওয়া হয়েছে। আরও দেখা গেছে, নামেই রয়েছে ‘বিশাখা কমিটি’।
নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত চেয়ে অভিযোগকারিণী মহিলা বিচারক ওই জেলা বিচারকের বদলির কথা কথা জানিয়েছিলেন। তবে হাই কোর্টে ৪ সেকেন্ডে তা নিষ্পত্তি হয়ে যায় এবং বিচারকের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। প্রধান বিচারপতিকে তিনি লেখেন, এই প্রাণহীন শরীরটাকে বয়ে নিয়ে চলার আর কোন কারণ দেখছি না। ‘
নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত চেয়ে অভিযোগকারিণী মহিলা বিচারক ওই জেলা বিচারকের বদলির কথা কথা জানিয়েছিলেন। তবে হাই কোর্টে ৪ সেকেন্ডে তা নিষ্পত্তি হয়ে যায় এবং বিচারকের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। প্রধান বিচারপতিকে তিনি লেখেন, এই প্রাণহীন শরীরটাকে বয়ে নিয়ে চলার আর কোন কারণ দেখছি না। ‘