দিল্লি, ২৮ ডিসেম্বর– বিদেশ থেকে ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়ে এলেও দেশের স্ক্রিনিং টেস্ট পাশ করেন নি কেউ। তা সত্বেও ওঁরা ডাক্তারি করছেন বহাল তবিয়তে। এক-দুই রাজ্য নয় মোট ১৪টি রাজ্যে এমন মোট ৭৩ জনের খোঁজ পাওয়া গেল যারা মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন অথবা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে ঘুষ দিয়েই রেজিস্ট্রেশন নম্বর হাসিল করেছেন।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করল সিবিআই। তবে এই অযোগ্য চিকিৎসকদের তালিকায় বাংলার নাম না-থাকায় স্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল।
মূলত চিন, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়ে আসা ওই ৭৩ জন অভিযুক্ত বিহার, উত্তরপ্রদেশ, অসম, হরিয়ানা, রাজস্থান, কর্নাটক, তামিলনাড়ু-সহ মোট ১৪টি রাজ্যে ছড়িয়ে আছেন বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ষড়যন্ত্র, জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা রুজু করা হয়েছে।
বেআইনি ও বিপজ্জনক বিষয়টি জানতে পেরেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দৃষ্টি আকষর্ণ করে ন্যাশনাল বোর্ড অফ এগজ়ামিনেশন। গত ১২ সেপ্টেম্বর ও ১৭ অক্টোবর এনবিই-র লেখা সেই চিঠির ভিত্তিতে মন্ত্রকের সুপারিশে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশ থেকে ডাক্তারি পাশ করলেই এ দেশে ডাক্তারি করা যায় না। ব্রিটেন, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জ়িল্যান্ড, জার্মানির মতো হাতেগোনা কয়েকটি দেশ বাদ দিলে, দুনিয়ার যে দেশ থেকেই কেউ ডাক্তারি পাশ করুন, ভারতে ফিরে ডাক্তারি করতে গেলে তাঁকে পাশ করতে হবে ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট এগজ়াম (এফএমজিই)। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই সর্বভারতীয় বা রাজ্যস্তরের মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে ডাক্তারির রেজিস্ট্রেশন মিলবে। এফএমজিই পরীক্ষা পরিচালক কেন্দ্রীয় সংস্থা, ন্যাশনাল বোর্ড অফ এগজ়ামিনেশন (এনবিই) সম্প্রতি একটি অডিটে জানতে পারে, ২০১১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এফএমজিই-তে অকৃতকার্যদের মধ্যে ৭৩ জন এ দেশে চুটিয়ে ডাক্তারি করছেন। এবং তাঁরা ডাক্তারি করছেন রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়েই। সেখান থেকেই তাঁদের ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি জানা যায়। চিন্তিত স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রশ্ন- অযোগ্য ও অকৃতকার্য হওয়া সত্ত্বেও এত জনের এ দেশে ডাক্তারি করার পরিণামে কত রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন?
এনবিই-র সন্দেহ, এমসিআই বা এনএমসি অথবা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কয়েক জন আধিকারিককে বিপুল টাকা ঘুষ দিয়েই অভিযুক্ত ৭৩ জন ডাক্তারির রেজিস্ট্রেশন পেয়েছেন। অর্থাৎ, এতে সরকারি কর্মীদের সরাসরি যোগসাজস জলের মতো পরিষ্কার।