নাগপুর, ২৪ সেপ্টেম্বর – বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। লাগাতার ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিতে শহরের একটা বড় অংশ জলের তলায় , প্লাবিত বহু এলাকা। নাগপুরের প্রায় ১০ হাজার বাড়ি জলের তলায়। নাগপুরে বন্যায় ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে চার জনের। এঁদের মধ্যে এক জন পঙ্গু মহিলাও রয়েছেন। আগামী ২৪ ঘন্টার জন্য জেলায় কমলা সর্তকতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, নাগপুরের সুরেন্দ্রগড়ে অতি ভারী বৃষ্টিতে বন্যার জল ঢুকে যায় সন্ধ্যা ধোর এবং তাঁর মা সায়াবাই ধোরের বাড়িতে। পরিবারের সদস্যরা সায়াবাইকে বাঁচাতে পারলেও, পঙ্গু রোগী সন্ধ্যাকে পারেনি রক্ষা করতে। বিপর্যয়বাহিনী শনিবার তাঁর দেহ উদ্ধার করে বাড়ি থেকেই।
পুলিশ সূত্রে খবর, গিত্তিখাদানে বাড়িতে জল ঢুকে মৃত্যু হয় আরো এক বৃদ্ধার। ৭০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধার নাম মীব়াবাই কাপ্পুস্বামী। তিনি তাঁর বাড়িতে একাই থাকতেন। বৃষ্টির জল তাঁর বাড়িতেও ঢুকে যায়। ওই জলে ডুবে গিয়ে রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। শনিবার ভোর ৬টা নাগাদ মীব়াবাইয়ের আত্মীয়রা তাঁর দেহটি খুঁজে পান।
শনিবার সন্ধ্যায় ধানতলি থানা এলাকার কাছে এক যুবকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁর পরিচয় মেলেনি। সঞ্জয় শঙ্কর নামে অযোধ্যা নগরের এক চা বিক্রেতারও জলে ডুবে মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালের মধ্যেই বন্যার জলে ডুবে তার মৃত্যু হয়।
মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। এ ছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বড় দোকান এবং রাস্তার ধারের ছোট দোকানগুলিকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি ।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার রাত ২টো থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত নাগপুরে আনুমানিক ৯০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত দুই দিন ধরে অতি ভারী বৃষ্টিতে আমবাজারি হ্রদ এবং নাগ নদী বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। আরও বৃষ্টি হলে নদী এবং হ্রদের জল লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করবে, সেই আতঙ্কে রয়েছেন শহরের মানুষ। পাশাপাশি ঠাণে এবং রায়গড়েও হলুদ সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানিয়েছেন, শহরে ৩ ঘণ্টায় ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যার জেরে শহরের সবচেয়ে বড় হ্রদ উপচে পড়েছে। নাগ নদী বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে।
উপমুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, শনিবার অতি ভারী বৃষ্টির শহরের ১০ হাজার বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ায় শহরের স্কুল এবং কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বানভাসি এলাকার বাসিন্দাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি জলবাহিত কোনও সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে। এ ছাড়াও এই সময়ে মশাবাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির যাতে প্রাদুর্ভাব না ঘটে তার জন্য ক্লোরোকুইন দেওয়া হচ্ছে। পরিষ্কার পানীয় জলও সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির জেরে শহরের বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেই পরিস্থিতিরও ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটছে ।
শুক্রবার থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয় নাগপুরে। শনিবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টির জেরে নাগ এবং পিলি নদী সংলগ্ন এলাকাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নাগ নদীর উপর একটি সেতু জলের তোড়ে ভেসে যায়। বেশ কয়েকটি গবাদি পশু ভেসে যায়।