দিল্লি, ১২ আগস্ট– দাসত্বের দাগ মুছতে এবার আইনও বদলানোর পথে ভারত সরকার। ব্রিটিশ আমলের ফৌজদারি দণ্ডবিধির আমূল সংস্কারে নেমেছে কেন্দ্র। শুক্রবার সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আচমকাই সংসদে ফৌজদারি দণ্ডবিধির আমূল বদল চেয়ে তিনটি বিল পেশ করেন। ৬০০ পাতার এই তিনটি বিলে ব্রিটিশ আমলের ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (আইপিসি), ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড’ (সিআরপিসি) ও ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ বদলের প্রস্তাব রয়েছে। ব্রিটিশ আমলের এই তিন ফৌজদারি দণ্ডবিধির নামেরও পরিবর্তন করা হয়েছে।
১৮৬০ সালে আইপিসি’কে বদলে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ১৮৭২-এর সিআরপিসি’র প্রস্তাবিত নাম ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’। ১৮৯৮-এর ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’-এর নতুন নাম হতে চলেছে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য আইন’। ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’র ১৯৫ ধারায় ‘ফেক নিউজ’ বা ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেশের নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ তৈরি করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাবাসের বিধান রয়েছে। দিতে হবে জরিমানাও।
আইপিসি’র ১২৪(এ) ধারায় যে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ছিল তাকে সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’র ১৫০ ধারায় দেশবিরোধী কার্যকলাপ মোকাবিলায় নতুন আইন প্রস্তাবিত হয়েছে। এই ধারায় সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, নাশকতামূলক কাজ ইত্যাদির উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি হবে। প্রস্তাবিত ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে গণপিটুনিতে কাউকে হত্যা করা এবং নাবালিকাকে ধর্ষণ করার মতো অপরাধের ক্ষেত্রে প্রাণদণ্ডের নিদান পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এই প্রথম সামাজিক সাজার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ই-মেলের মাধ্যমে এফআইআর করার সুযোগ, ৯০ দিনের মধে্য চার্জশিট, কোর্টের অনুমতিতে আরও ৯০ দিন চার্জশিটের জন্য অতিরিক্ত সময়, ১৮০ দিনের মধে্য বিচারপ্রক্রিয়া শুরু, অপরাধের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ ঘটনায় সাজা সুনিশ্চিত করা ইত্যাদি নানা বিষয়ে এই নতুন ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই বিল প্রস্তাব করতে গিয়ে শাহ বলেন, ‘‘ব্রিটিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতবাসীকে দণ্ড দেওয়া। সেই কারণে ব্রিটিশদের ফৌজদারি আইনের অভিমুখ ছিল ভিন্ন। নতুন ফৌজদারি দণ্ডবিধির মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকারে নিয়ে আসা হচ্ছে। ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত করাই নতুন দণ্ডবিধির মূল লক্ষ্য। সাজা দেওয়া নয়, ন্যায় বিচারই হবে মূল উদ্দেশ্য।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন আইন কমিশন বিভিন্ন সময়ে যে সব সুপারিশ করেছে তা নতুন দণ্ডবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। তবে নরেন্দ্র মোদি সরকার যেভাবে আচমকা ফৌজদারি দণ্ডবিধি বদলের কাজে নেমেছে তাতে সংশয়ও তৈরি হয়েছে বিরোধীদের মধে্য। ফৌজদারি আইনের ভারতীয়করণের নামে কোথাও আইনকে লঘু করে দেওয়া হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। তবে এদিন বিল তিনটি স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটি বিস্তারিতভাবে বিল তিনটি বিচার করবে। তখন সরকারের সংস্কারের উদ্দেশ্য আরও স্পষ্ট হবে বলে বিরোধীদের অভিমত।