শিলং, ৩ জুলাই– অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউসিসি নিয়ে বেকায়দায় এবার কেন্দ্র। ইউসিসি প্রয়োগে এখন বিজেপির প্রধান বাধা উত্তর-পূর্বে তিন খ্রিস্টান প্রধান রাজ্য। যারা বিজেপির বন্ধু বলেই পরিচিত ।
এনপিপির জাতীয় সভাপতি ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা সরাসরি ইউসিসির বিরোধিতা করে বলেন, “এই পদক্ষেপ ভারতের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের পরম্পরার বিরোধী।’ তাঁর মতে, ‘প্রকৃত ভারতের যে আদর্শ তার সঙ্গে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি খাপ খায় না। ভারত বিভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, রীতি-নীতি ও পরম্পরার দেশ। এই বহুত্ব ও বিভিন্নতাই ভারতের শক্তি ঔ সৌন্দর্য।” তাঁর মন্তব্য, “খসড়ায় ঠিক কী রয়েছে তা না জেনে মন্তব্য করা উচিত নয়, তবে, মেঘালয় মাতৃতান্ত্রিক রাজ্য। সেখানে সম্পত্তির অধিকার ছোট মেয়ের। গোটা উত্তর-পূর্বেই এ ক্ষেত্রে নিজস্বতা রয়েছে। কেউ সেখানে হস্তক্ষেপ চাইবে না।” শুধু মেঘালয় নয়, মণিপুরেও শক্তিশালী এনপিপি এবং সেখানেও তারা শাসক জোটের শরিক।
নাগাল্যান্ডে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে সরকার চালানো এনডিপিপি জানিয়ে দিয়েছে, তারা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিপক্ষে। দলের সভাপতি চিংওয়াং কনিয়াক বলেন, “আমরা কোনও ভাবে, কোনও চেহারাতেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি মানব না। নাগাল্যান্ড ৩৭১ (এ)-ধারার অধীনে সুরক্ষিত। তাই সেখানে জোর করে ভারতের আইন বা নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কেন্দ্র যদি ভাবে ইউসিসি বলবৎ করে অভিন্ন ভারত গড়া যাবে- তবে তারা ভুল ভাবছে। বরং বিভিন্নতাকে বজায় রেখে ও সম্মান দিয়েই ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়া সম্ভব।” নাগাল্যান্ড ব্যাপটিস্ট গির্জা সংগঠনও ইউসিসি নিতে তাদের আপত্তি ও আতঙ্ক ব্যক্ত করেছে। নাগাল্যান্ডের রাইজ়িং পিপলস্ পার্টির মতে, ইউসিসি আরএসএসের রাজনৈতিক চক্রান্তের হাতিয়ার। শুধু খ্রিস্টান রাজ্য বলে নয়, এই ধারণা নাগা সংস্কৃতি ও পরম্পরারও বিরোধী। নাগাল্যান্ডের এনটিপিআরএডিএও সংগঠন হুমকি দিয়েছে, বিধানসভা যদি কেন্দ্রের চাপের সামনে আপস করে ইউসিসিতে সম্মতি দেয় তবে সব বিধায়কের বাড়িতে আগুন লাগানো হবে।
মিজোরাম বিধানসভাও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বলবৎ করার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সর্বসম্মত ভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালচামলিয়ানা জানান, মিজোরাম বিধানসভা কেন্দ্রে ইউসিসি নিয়ে যে কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করা বা রাজ্যে তা বলবৎ করার চেষ্টার বিরোধিতা করবে। মিজোরাম পিপলস্ কনফারেন্স ইউসিসির বিরুদ্ধে সকলে মিলে প্রতিবাদে নামার ডাক দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে নিজেদের জোট সরকারের শরিকদের প্রবল বিরোধিতার মুখে বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কোন পথে এগোয় সেটাই দেখার।