নেপালের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভূমিকম্প আঘাত হানার কিছু ক্ষণের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়ি তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে। বহু বাড়িতে চওড়া চওড়া ফাটল ধরেছে। ইট-কাঠ-সিমেন্টের ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়ছে বহু মানুষের। যার মধ্যে পশ্চিম রুকুম এবং জাজারকোটে এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।রুকুম জেলায় প্রায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। জাজারকোট জেলায় ৩৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে রুকুম পশ্চিমের প্রশাসনিক আধিকারিক হরিশ চন্দ্র শর্মা জানান, ‘‘উদ্ধারকারীরা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে মৃত ও আহতদের উদ্ধার করেছন। তবে সব জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব হয়নি কারণ, আফটাররশকের কারণে ভূমিধস হয় এবং রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’’
ভূমিকম্পে মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য শোক প্রকাশ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল । নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘‘শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ জাজারকোটের ভূমিকম্পের কারণে হওয়া মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল। উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণের জন্য তিনটি নিরাপত্তা সংস্থা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।’’
নেপালের ভূমিকম্প নিয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘নেপালে ভূমিকম্পের কারণে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গভীরভাবে শোকাহত। নেপালের জনগণের পাশে ভারত আছে। নেপালকে সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত ভারত। স্বজনহারা পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেই কামনা করছি।’’
উল্লেখ্য যে, এই নিয়ে গত এক মাসের মধ্যে তিন বার ভূমিকম্প হল ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালে। গত ২২ অক্টোবর কেঁপে উঠেছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.১। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নেপালের ধাদিং জেলা। এর ঠিক দু’দিন পরে আবার ভূমিকম্প হয় নেপালে। মাত্রা ছিল ৪.১। গত ৩ অক্টোবরও ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল নেপাল। পর পর চার বার ভূমিকম্প হয়েছিল নেপালে। নেপালের পাশাপাশি তার প্রভাব পড়েছিল দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের লখনউ, হাপুর এবং আমরোহাতে।
বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, হিমালয়ের নীচে ভূমিকম্প বলয় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যার জেরে ভারতীয় পাতের সঙ্গে ইউরেশীয় পাতের বিরোধ তৈরি হতে পারে। ভারতীয় পাতটি ক্রমে উত্তর দিকে এগোচ্ছে। এর ফলে ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে তার সংঘর্ষ হতে পারে। তাই হিমালয় এলাকায় যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, ভারতীয় পাতের সক্রিয়তার ফলে ইউরেশীয় পাতের উপরে যে চাপ তৈরি হচ্ছে, আগামী দিনে তা বড়সড় ভূমিকম্পের আকার নিতে পারে। রিখটার স্কেলে তার মাত্রা হতে পারে আটের বেশি। সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।