শীত যাচ্ছে যাচ্ছে৷ সাধারণত আবহাওয়া এখনও অনেকটা শুষ্ক থাকে৷ এ সময় বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা একেবারেই কমে যাওয়ার কারণে শরীরে থাকা বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়াতেও অনেকটা পরিবর্তন চলে আসে৷ আর এই শুষ্কতার কারণেই শীতকাল শেষের সময় বিভিন্ন ত্বকের রোগ বা চর্মরোগ বেশি দেখা দিতে পারে৷ আজ তাহলে জানাই কিভাবে চিনবেন ও বাঁচবেন বিভিন্ন ধরনের ত্বকের বা চর্মরোগ থেকে৷
এই সময় বিভিন্ন চর্মরোগের সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে৷ এ সময় বাচ্চাদের শুষ্ক ত্বক যাদের তাদের এ সমস্যাটি আরও প্রকট আকারে দেখা দিতে পারে৷ এটি হলে ত্বক চুলকাতে চুলকাতে চামড়া একদম ফেটে যেতে পারে৷ আর এমনটি হয়ে থাকলে বাইরে থেকে ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাশ আক্রমণ করে সহজেই চর্মরোগ শরীরে বাসা বাধতে পারে৷
এ ছাড়া শীতকালে অনেকেই কড়া গরম জল দিয়ে স্নান করেন বা দিনে একাধিকবার গরম জল দিয়ে স্নান করে থাকেন৷ অতিরিক্ত গরম জল দিয়ে বারবার স্নান করলে ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চার যেটি থাকে, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেক কমে যায়৷ এ কারণে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হয়ে গিয়ে বিভিন্ন ছত্রাকজনিত চর্মরোগ দেখা দিতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে পরামর্শ হবে দিনে একবার বা ২৪ ঘণ্টায় একবার স্নান করলেই যথেষ্ট৷
কী কী ধরনের চর্মরোগ শীতকালে বেশি দেখা দেয়?
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দুই ধরনের চর্মরোগ বেশি দেখা দিয়ে থাকে৷ একটি হচ্ছে দাউদ আর আরেকটি স্কেবিস বা পাচড়া৷
দাউদ: দাউদ সব শরীরে হতে পারে৷ আবার মাথায়, মুখের ত্বকে, হাতে ও নখেও দাউদ হতে পারে৷ এক সময় দাউদের চিকিৎসা পদ্ধতি সহজ হলেও এটি বর্তমান সময়ে অনেকটা জটিল হয়ে গেছে৷ এর কারণ হচ্ছে— যখন দাউদের চিকিৎসায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ দেওয়া হয়, তখন অনেকেই এমনটি করেন যে, অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেই ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন৷ ফলে শরীরের ভেতরে ভেতরে রোগটি সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায় এবং তার সংস্পর্শে কেউ এলে তার মাঝেও এটি ছড়িয়ে যেতে পারে৷
দাউদ গরমকালেও হতে পারে আর শীতকালে এটি বেশি দেখা দিচ্ছে৷ আর এটি খুব বেশি ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে এতে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে কেই এলে তারও হতে পারে৷
পরামর্শ: দাউদ হলে চিকিৎসকের পরমর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে৷ এখন এ সমস্যাটির জন্য ভরিকোনাজল ও পোসাকোনাজল ওষুধ দুটি ভালো কাজ করছে৷
স্কেবিস বা পাচড়া: স্কেবিস বা পাচড়া রোগটি একটি মাইক্রোস্কোপিক পোকার কারণে হয়ে থাকে৷ অনেকটা কচ্ছপের মতো দেখতে অনেক ছোট একটি মাইক্রোস্কোপিক পোকা এটির জন্য দায়ী৷ এটি খুব সহজেই মানুষের চামড়া বা ত্বকে আক্রমণ করে৷ আর রাতে যখন মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে, তখন পোকাগুলো চলাচল করে আর এ কারণে চুলকানি বেশি হয়৷ এটি মূলত আঙুলের ফাঁকে, কুনই, কব্জি, নাভি, স্তন, দুই পায়ের চিপা— এমনকি এটি প্রসাবের রাস্তাতেও হতে পারে৷ স্কেবিস হলে সেটি চুলকাতে অনেক আরাম লাগে৷ যার কারণে এটি হওয়ার শুরুতেই অনেকে গুরুত্ব দেন না৷ ফলে পুরো শরীরেই এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
পরামর্শ: একজনের স্কেবিস হলে পরিবারের সবারই এটির চিকিৎসা নেওয়া উচিত৷ আর এ রোগটির ক্ষেত্রে যত বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা যাবে এ সমস্যা থেকে ততই বেশি সুরক্ষিত থাকা যাবে৷ সমস্যাটি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আর এ সমস্যাটির ক্ষেত্রে পারমিথ্রিন লোসন বা ক্রিম গলা থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত একদিন ব্যবহার করে পরের দিন ব্যবহার করা সব কাপড় ও বিছানার চাদরসহ সব ধুয়ে দিতে হবে৷ লেপ বা কম্বল ব্যবহার করা হলে সেটি নিয়মিত কয়েকদিন সেটি বাইরে রোদে দিতে হবে৷ স্কেবিস বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেকটাই ভয়াবহ হতে পারে৷ দীর্ঘদিন এটির কোনো চিকিৎসা না করা হলে সেটি কিডনির সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে৷