দিল্লি, ১৮ অক্টোবর– বিলেতের সংবাদপত্রকে হাতিয়ার করে ফের আদানি শিল্প গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধি। ফাইনান্সিয়াল টাইমস নামে ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করেছে আদানি শিল্প গোষ্ঠী। সেই জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। ফলে ভারতীয় নাগরিকদের থেকে চড়া হারে বিদ্যুৎ মাশুল নেওয়া হয়েছে।
যদিও আদানি শিল্পগোষ্ঠী ফাইনান্সিয়াল টাইমসের ওই প্রতিবেদনের দাবিকে খণ্ডন করে দাবি করেছে, এটা পুরনো অভিযোগ। সেটাই নতুন করে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে।
রাহুল সেই খবরকে তুলে ধরে বলেছেন, ‘এবার তো ভারতবাসীর পকেট থেকে চুরি করছে। যখন গরিব মানুষ পাখা চালাচ্ছেন, টিউব লাইট জ্বালাচ্ছেন তখন মনে করবেন যখন সুইচ দেন তখনই আদানির পকেটে পয়সা চলে যায়।’ তবে আগের মতোই আদানিকে দুষতে গিয়ে মোদি সরকারকেও বাদ দেননি।
ফাইন্সিয়াল টাইমসের ওই রিপোর্ট হাতিয়ার করে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করেছেন রাহুল গান্ধি। তাঁর অভিযোগ, কয়লার দাম বাড়িয়ে দেখিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা লুঠ করেছে আদানি গোষ্ঠী। সাধারণ মানুষকে ঠকিয়েছে। আর সে সবই হয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন মোদী সরকারের প্রশ্রয়ে। আর আদানির রক্ষা কে করছেন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী। মনে রাখবেন, হিন্দুস্তানে যুবকরা মনে রাখবেন, যখনই আপনারা পাখা, বাল্ব বিদ্যুতের পাম্পের সুইচ দেবেন তখনই আদানির পকেটে পয়সা যায়। আর তার রক্ষা কর্তা হলেন প্রধানমন্ত্রী। ৩২ হাজার কোটি টাকা তো আমরা দেখিয়ে দিয়েছি। জানি না আরও কত আছে। আমরা ব্যাপারটা দেখব।
এর আগে রাহুল বলেছিলেন, নিজেদের শেয়ারের দাম বেশি করে দেখানোর জন্য কেন প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ওই ভদ্রলোককে এত বিলিয়ন ডলার সরানোর অনুমতি দেওয়া হল? ভারতের বিমানবন্দর ও জলবন্দরগুলিকে এভাবে দখল করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? এনিয়ে কেন কোনও তদন্ত হচ্ছে না? কমপক্ষে একটা যৌথ সংসদীয় কমিটিকে অনুমতি দেওয়া হোক।
দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি কয়লা আমদানি সংস্থা হল আদানি গোষ্ঠী। ফাইন্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দু’বছরে তাইওয়ান, দুবাই ও সিঙ্গাপুরের অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে আদানি অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কয়লা আমদানি করেছে। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকার কয়লা আমদানি করেছে। সেই কয়লার দাম বাজার মূল্যের দ্বিগুণ করে দেখানো হয়েছে।
অর্থাৎ কয়লার দাম যদি বাজারে টন প্রতি ১০ হাজার টাকা হয়, তাহলে তা ২০ হাজার টাকা করে দেখানো হয়েছে। এফটির ওই প্রতিবেদন দেখিয়ে রাহুল গান্ধী বুধবার বলেন, আগে আমাদের ধারণা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এখন বোঝা গেল, সেই টাকার অঙ্কটা অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি। কয়লার দাম বেশি দেখিয়ে বিদেশের কোম্পানিকে ভারতীয় টাকা পাচার করা হয়েছে।
রাহুল এদিন আরও বলেন, আমি বিষ্মিত যে এই প্রতিবেদন বিদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। অথচ ভারতে কেউ এক লাইনও লিখছে না। এই প্রবণতা দেশের জন্য মোটেই ভাল নয়।
তবে শুধু রাহুল নন, আদানির বিরুদ্ধে সুর ছড়িয়েছেন তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্রও।