• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

খাবার ওপরের দিকে উঠে আসলে

অনেককেই বলতে শোনা যায়- খাবার হজম হচ্ছে না৷  বুক জ্বালাপোড়া করছে৷  খাবার গলার কাছাকাছি চলে আসছে৷  এমন অস্বস্তিকর সমস্যাকে রিফ্লাক্স বলা হয়৷  রিফ্লাক্স গ্রিক শব্দ, যার মানে উল্টো প্রবাহ৷ পাকস্থলীর ভেতরের পদার্থগুলো নিচের দিকে না গিয়ে ওপরের দিকে বা উল্টোদিকে গলায় উঠে আসে৷  যখন আমরা খাবার খাই খাবার পাকস্থলীতে যায় এবং হজম শুরু হয়ে যায়,

অনেককেই বলতে শোনা যায়- খাবার হজম হচ্ছে না৷  বুক জ্বালাপোড়া করছে৷  খাবার গলার কাছাকাছি চলে আসছে৷  এমন অস্বস্তিকর সমস্যাকে রিফ্লাক্স বলা হয়৷  রিফ্লাক্স গ্রিক শব্দ, যার মানে উল্টো প্রবাহ৷ পাকস্থলীর ভেতরের পদার্থগুলো নিচের দিকে না গিয়ে ওপরের দিকে বা উল্টোদিকে গলায় উঠে আসে৷  যখন আমরা খাবার খাই খাবার পাকস্থলীতে যায় এবং হজম শুরু হয়ে যায়, এ খাবার যখন হজম না হয়ে ওপরের দিকে গলাতে উঠে আসে, তখন তাকে রিফ্লাক্স বলে৷
খাবার হজম না হয়ে উল্টোদিকে উঠে আসলে করণীয় সম্পর্কে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন ইমপালস হাসপাতালের নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন অধ্যাপক ডা. জাহির আল-আমিন৷ যাদের রিফ্লাক্স থাকে তাদের সবার বুকজ্বালা বা হজমের অসুবিধা নাও থাকতে পারে৷  যাদের স্বরযন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্স থাকে তাদের অনেকেরই বুকজ্বালা থাকে না৷  এ জন্যই স্বরযন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্সকে সুপ্ত রিফ্লাক্স বলা হয়৷  ফলে এ রোগ ধরতে অনেক সময় অসুবিধা হতে পারে৷

রিফ্লাক্সের উপসর্গ
* গলার স্বর বসে যাওয়া৷
* গলা বারবার পরিষ্কার করা৷
* গলার শ্লেষা বৃদ্ধি পাওয়া৷
* খাদ্য, জল বা বড়ি গিলতে অসুবিধা হওয়া৷
* খাবার পর বা শোয়ার পর কাশি হওয়া৷
* শ্বাস নিতে অসুবিধা বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া৷
* কষ্টকর বা বিরক্তিকর কাশি৷
* গলার ভেতর কিছু আটকে থাকা বা গলার ভেতর টিউমারের মতো কিছু বোধ করা৷
* বুকজ্বলা, বুকব্যথা, হজমের অসুবিধা বা ঢেঁকুরের সঙ্গে টক জল উঠে আসে৷
* গলায় টিউমারের মতো বাধ করা৷
* ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া৷গলায় টিউমারের মতো মনে হওয়াগলার মধ্যে চাকার মতো বোধ করা৷ এটা সাধারণ সমস্যা যার সঙ্গে স্বরযন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্সের যোগাযোগ আছে৷ একে গ্লোবাস ফেরিনজিস বলে৷ কেউ বলে গলায় কিছু চেপে আছে অথবা গলায় শ্লেষা এমনভাবে জমে আছে যে তারা এটা কফের সাহায্যে পরিষ্কার করতে পারছেন না৷ অনেকে ভাবেন যে তাদের গলায় ক্যান্সার হয়েছে৷
এটা সবসময় ক্যান্সারের উপসর্গ নয়৷ এ দুশ্চিন্তা রোগীর একই অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে৷ গ্লোবাস মানে হচ্ছে গলায় একটা অস্বস্তিবোধ যার জন্য টিউমার বা ক্যান্সার দায়ী নয়৷

কীভাবে বুঝবেন স্বরযন্ত্র ও গলায় রিফ্লাক্স হচ্ছে
অনেক দিন ধরে গলার স্বর বসে যাওয়া, বারবার গলা পরিষ্কার করা এবং কাশি হওয়া, তার সঙ্গে গলার ভেতর টিউমারের মতো বোধ করা অথবা ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া- এগুলোই হচ্ছে স্বরযন্ত্র বা গলার রিফ্লাক্সের উপসর্গ৷ কারও কারও বুকজ্বলা থাকতে পারে৷ কারও গলার স্বর মাঝে মাঝে বসে যায়, আবার হঠাৎ করে ঠিক হয়ে যায়৷ কারও কারও বেশি শ্লেষা হওয়া এসব উপসর্গ থাকতে পারে৷ কেউ কেউ শুয়ে থাকলে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো মনে হতে পারে৷ এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই৷ এটা মারাত্মক কিছু নয়৷ কারও যদি এসব উপসর্গ থাকে এবং কেউ যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন তবে সমস্যাগুলোর কারণ জানার জন্য নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷বিশেষজ্ঞ আপনার গলা ও স্বরযন্ত্র ভালোভাবে দেখবেন৷ অনেক সময় গলার এন্ডোসকোপি করা লাগতে পারে৷ এটা পেটের এন্ডোসকোপি থেকে ভিন্ন৷ যেহেতু এটা অনেক সরু এবং নাক অবশ করে ঢুকানো হয় সেহেতু এটা করার সময় ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয় না বললেই চলে৷
চিকিৎসা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ রোগের চিকিৎসা কিছু দিন নিতে হয়, এটা হতে পারে মাস অথবা বছর৷ চিকিৎসা আবার নিতে হয় যখন এ রোগ আবার হয়৷ কারও কারও আবার সবসময় চিকিৎসা নিতে হয়৷স্বরযন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্স (এলপিআর) কোনো মারাত্মক জটিলতা করে না, যদি কেউ চিকিৎসা না নিয়ে থাকেন তাহলে এ রোগ মারাত্মক ও বিপজ্জনক হতে পারে৷ যাদের ওষুধে কাজ হয় না তাদের ক্ষেত্রে ‘এনিটি রিফ্লাক্স’ সার্জারি করতে হয় এবং যাদের সার্জারি হয় তারা এলপিআর থেকে অনেক বছর সুস্থ থাকেন৷ যেভাবে এলপিআর চিকিৎসা করা হয়৷

অনেক ধরনের চিকিৎসা আছে, যেমন-
* খাদ্যাভ্যাস বদলানো যাতে রিফ্লাক্স কম হয়৷
* ওষুধ ব্যবহার করা যাতে পাকস্থলীর এসিড কম বের হয়৷
* সার্জারি করা যাতে রিফ্লাক্স না হয়৷খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা বদলালে এবং সঙ্গে কিছু ওষুধ ব্যবহার করলে এলপিআরের চিকিৎসা করা সহজ, খুব কম ক্ষেত্রে সার্জারির দরকার হয়৷
রিফ্লাক্স ও এলপিআর কমানোর জন্য উপদেশ
* ধূমপান বর্জন করা৷
* খুব টাইট জামাকাপড় না পরা, বিশেষ করে কোমরের দিকে৷
* খাবার পরপরই না শোয়া৷
* স্বল্প চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত৷ মাখন, গরু ও খাসির মাংস না খাওয়া৷ ভাজা-পোড়া কম খাওয়া৷ পনির, চকলেট ও পেসট্রি বর্জন করা৷ লেবু জাতীয় পানীয় না পান করা৷
* মোটা হলে ওজন কমিয়ে ফেলা৷
* উত্তেজক পানীয় (মদ) না খাওয়া৷