‘বিশ্ব শিম্পাঞ্জি দিবস’  এবং ‘বনমহোৎসব’  পালনের মাধ্যমে কচিকাচাদের আনন্দ দিল চিড়িয়াখানা

ময়ূরাক্ষী দাস, কলকাতা: রবিবার আলিপুর চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জির খাঁচার সামনে গিয়ে বেশ খুশি কচিকাঁচারা।  এক তো শিম্পাঞ্জি দেখে মজা পাওয়া। তারই সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে শিম্পাঞ্জিদের যাঁরা দেখাশুনা করেন,  তাঁদের মুখ থেকে শিম্পাঞ্জি সম্বন্ধে  মজার মজার গল্প শোনা। সঙ্গে ছিল শিম্পাঞ্জি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই উপহার পাওয়া।  কারণ রবিবার ছিল ‘বিশ্ব শিম্পাঞ্জি দিবস’।  এই বিশেষ দিনটিকে ছোটদের কাছে বিশেষভাবে তুলে ধরতেই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এই ধরনের আয়োজন করেছিলেন।  এছাড়া এই দিনই  চিড়িয়াখানার গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাঁচার সামনে ‘ব্রেইল বোর্ড’  বসালো চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।  যে সমস্ত  কচিকাঁচারা  চোখে দেখতে পায় না, কিন্তু তাদের ইচ্ছে হয়,  চিড়িয়াখানায় আসার জন্য। তারা যাতে ওই ‘ব্রেইল বোর্ড’-এর মাধ্যমে খাঁচায় থাকা জন্তুদের সম্বন্ধে  জানতে পারে, সেই কারণেই এই প্রচেষ্টা নিয়েছে  চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত রবিবার ‘বিশ্ব শিম্পাঞ্জি দিবস’  এবং ‘বনমহোৎসব’  পালন করে আলিপুর চিড়িয়াখানা।  এমনিতেই শিম্পাঞ্জি  নিয়ে ছোটদের  কৌতূহলের শেষ নেই।  তারপর  এদিন  শিম্পাঞ্জিকে ঘিরে  নানারকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল  আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।  ছোটদের কাছে  শিম্পাঞ্জিকে নিয়ে  নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দিলেন  এবং  শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতাও  বর্ণনা করলেন  শিম্পাঞ্জিদের রক্ষণাবেক্ষণ করেন  যাঁরা।  দীর্ঘদিন ধরেই গৌতম বাগ এবং রমেশ কুমার রাম  আলিপুর চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জিদের  দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন।  তাঁরা কচিকাঁচাদের বললেন শিম্পাঞ্জিরা কি কি খায়,  কিভাবে শিম্পাঞ্জিদের  দেখভাল করা হয়। এবং তাঁরা এও জানাতে ভুললেন না যে, শিম্পাঞ্জিরা তাঁদের খুব কথা শুনে চলে।  আর শিম্পাঞ্জি সম্বন্ধে  এই সমস্ত তথ্য জানতে পেরে  চিড়িয়াখানা দেখতে আসা খুদেদের মনে আনন্দের অন্ত নেই।  সেই সঙ্গে  চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ  শিম্পাঞ্জীর খাঁচার সামনে  খেলার মাধ্যমে ‘প্রশ্ন-উত্তর’  অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিল।  ওই অনুষ্ঠানে  চিড়িয়াখানা দেখতে আসা দর্শকদের  মধ্যে অনেকেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে  নিয়ে গেলেন পুরস্কার।

এছাড়াও এদিন শিম্পাঞ্জিকে নিয়ে  একটি তথ্যচিত্র  দর্শকদের সামনে   প্রদর্শন করা হয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তরফে।  শিম্পাঞ্জির খাঁচার সামনে দাঁড়ানো সোনারপুর থেকে আসা  বছর আটেকের সুচেতা বাগ জানাল, “আমার খুব মজা লাগছে। আমি আগে  চিড়িয়াখানায় আসলেও, এমন মজা পাইনি। ‘  আর তার পাশেই দাঁড়ানো  সুমন মন্ডল  তো একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে  শিম্পাঞ্জিগুলোর দিকে।  আর একটু বড়  চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া  অঙ্কিতা আচার্যকে  এই সমস্ত অনুষ্ঠান কেমন লাগছে জিজ্ঞাসা করা হলে,  সে জানায়, “শিম্পাঞ্জি সম্বন্ধে  অনেক কিছু জানতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।”


এদিন যতটা খুশি হয়েছে ছোট ছোট শিশুরা,  ততটাই খুশি হয়েছেন তাদের বাবা-মায়েরাও।  অন্যদিকে , রবিবার ‘বনমহোৎসব’ উপলক্ষে  দর্শকদের মধ্যে চারাগাছ বিতরণ করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানায়  বনমহোৎসব অনুষ্ঠানের  উদ্বোধন করেন মন্ত্রী বীরবাহ হাঁসদা।   এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি (ফরেস্ট)  মনোজ অগরওয়াল।  আলিপুর চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর  শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানালেন, “বনমহোৎসব উপলক্ষে চিড়িয়াখানায় আসা দর্শকদের  হাতে চারা গাছ তুলে দেওয়া হয়েছে। আজ   চিড়িয়াখানার গুরুত্বপূর্ণ ২০টি খাঁচার সামনে  ‘ব্রেইল বোর্ড’ লাগানো হয়েছে।  যে সমস্ত শিশুরা  প্রতিবন্ধী, চোখে দেখতে পায় না,  তারা যাতে ওই ‘ব্রেইল বোর্ড’ স্পর্শ করে  খাঁচায় থাকা  জন্তুদের সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে,  সেই জন্যই  চিড়িয়াখানার তরফে এই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।  এই ব্যবস্থা ভারতবর্ষের অন্য কোনও চিড়িয়াখানাতে নেই। “