• facebook
  • twitter
Tuesday, 7 January, 2025

ডাব্লুবিসিএসের ইন্টারভিউ: এক চান্সেই বাজিমাত

আগামী বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ২০২২ এর সফল ডাব্লুবিসিএস পরীক্ষার্থীদের ইন্টারভিউ। পোশাকি নাম পার্সোনালিটি টেস্ট। প্রিলিতে বসা এক লক্ষ পরীক্ষার্থী এবং মেইন পরীক্ষায় ৪-৫ হাজার থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেরা ৫০০ থেকে ৫৫০ জনকে। কী ভাবে শেষ ধাপের মোকাবিলা করবেন? কেমন হবে আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ? কী কী ধরনের এবং কী কী বিষয় থেকে প্রশ্ন আসতে পারে? এক চান্সেই বাজিমাত করবেন কী ভাবে? সরকারি চাকরির সাতসতেরোকে (পর্ব – ০৭) জানালেন, হুগলির জেলার চুঁচুড়ার মহকুমা শাসক স্মিতা সান্যাল শুক্লা (ডাব্লুবিসিএস এক্সিকিউটিভ) এবং অভিজ্ঞ শিক্ষা-পরামর্শক ও ইন্ডিয়ান অডিট অ্যান্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের আধিকারিক অনিন্দ্য কিশোর।

(পর্ব – ৭)

“থ্রি ইডিয়টসের” রাজু রাস্তগির ইন্টারভিউয়ের দৃশ্যটা নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের। ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের চোখাচোখা প্রশ্নে, রাজুসহ দর্শকদের মনে তখন আতঙ্কের পরিবেশ। রাজুর অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট ধারাবাহিকভাবে খারাপ। অতীতের একাধিক দুষ্কর্মের কথা অবলীলায় ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের জানিয়ে যাচ্ছে। তা শুনে সদস্যরাও হতভম্ব। অন্তিম লগ্নে বোর্ড চেয়ারম্যান জানিয়ে দিলেন, রাজু যদি তাঁদের এত সোজাসাপটা ও সৎ-মনোভাব পরিবর্তন করে, তা হলে, তাঁরা অন্য কিছু ভেবে দেখতে পারেন। তারপরেই আসে রাজুর মাস্টারস্ট্রোক। বোর্ড সদস্যদের অবলীলায় জানান, “দু’টি পা ভেঙে নিজের পায়ের উপর দাঁড়াতে শিখেছি। এখানে যদি চাকরি নাও হয়, আমি অন্য কোনও পেশাকে খুঁজে নিতে পারব। যে মনোভাব আমি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি, আমার যে আত্মবিশ্বাসকে খুঁজে পেয়েছি, তা কোনও শর্তেই বিসর্জন দিতে পারব না। তা-তেই হয়ে যায় কেল্লাফতে! ইন্টারভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যান সবাইকে চমকে দিয়ে, রাজুকে শুধু চাকরিই সুনিশ্চিত করেননি। কত বেশি বেতনে সে চাকরি করতে আগ্রহী – তা অফার করেছিলেন।

রাজুর কথা দিয়ে শুরু করার একটা বিশেষ কারণ আছে। যদিও এটা সিনেমার গল্প। তবুও, রাজুর ইন্টারভিউ দৃশ্যে বেশ কিছু মৌলিক-বিষয় আছে, যেগুলি বর্তমানে ডাব্লুবিসিএসের পার্সোনালিটি টেস্টেও সমভাবে প্রযোজ্য।

সবার আগে প্রয়োজন

যে কোনও ইন্টারভিউ বা পার্সোনালিটি টেস্ট এর ক্ষেত্রে, বোর্ডের মেম্বাররা আপনার কাছ থেকে প্রথমেই যেটা যাচাই করবেন, তা হল আপনার মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাস। যেহেতু এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ মানের প্রশাসনিক-চাকরি, তাই, তাঁরা আপনার মধ্যে বেশ কিছু নির্দিষ্ট গুণাবলী খোঁজার চেষ্টা করবেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাবলিক সার্ভিস কমিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ডাব্লুবিসিএসের পার্সোনালিটি টেস্টের রূপরেখা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ইন্টারভিউতে প্রশ্ন করা হবে প্রার্থীর সাধারণ আগ্রহগুলির ওপর। জানার চেষ্টা করা হবে – প্রার্থীর ব্যক্তিগত গুণাবলী যেমন, মানসিক সতর্কতা, সুস্পষ্ট এবং যুক্তি প্রকাশের ব্যবহারিক ক্ষমতা, বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক সততা এবং নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা।

ইন্টারভিউ রুমে প্রবেশের পর

ইন্টারভিউ রুমে প্রবেশের পর, আপনার আচরণ যেন তাঁদের কাছে আত্মবিশ্বাসী লাগে। বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে কথা বলার সময় সব সময় ‘আই কন্টাক্ট’ বা চোখে-চোখ রেখে, মৃদু-হাসি মুখে উত্তর দেবেন। প্রথমে ভাল করে তাঁদের প্রশ্নগুলি মনোযোগ সহকারে শোনার চেষ্টা করবেন। মুহূর্তের মধ্যে আপনার ভাবনা চিন্তাগুলিকে যুক্তিসহকারে সাজিয়ে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারলেই কেল্লাফতে। কোনও উত্তর না-জানা থাকলে, পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন আপনার অক্ষমতা। তবে, তা যেন অবশ্যই বিনয়ের সঙ্গে হয়। আপনার না-জানার মধ্যে যেন অহমিকা ফুটে না ওঠে।

মানসিক সর্তকতা

বোর্ডের সদস্যরা আপনার মানসিক সর্তকতা জানার চেষ্টার জন্য মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ক্রস-কোশ্চেন করবেন। প্রার্থীকে প্রস্তুত থাকতে হবে অত্যন্ত সতর্কভাবে। বোর্ডের সদস্যদের প্রত্যেকটি প্রশ্ন অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুনে উত্তর দিতে হবে। সমস্ত সফল পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে তারা ভোট সদস্যদের প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে পারদর্শী হন। তাই ভোট সদস্যদের সোনা প্রশ্নগুলির প্রথমে ভালো করে উপলব্ধি করে সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট উত্তর সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে আপনাকে।
আগেই আপনার বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পরীক্ষা নিয়ে নিয়েছে কমিশন। তাতে আপনি সফলভাবে উর্ত্তীর্ণ হয়েছেন। তাই, এখানে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন আসলেও, বেশি গুরুত্ব পাবে, সমসাময়িক প্রসঙ্গগুলি নিয়ে প্রশ্ন। যেমন খেলাধুলা, বিজ্ঞান, রাজনীতির বিষয়গুলি আসতে পারে। ঠিক তেমনই, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলিকে নিয়েও প্রশ্ন করতে পারেন তাঁরা। তাই পরীক্ষার্থীরা অতি সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলী সম্পর্কে একটু একটু রিভিশন করে নিয়ে যাবেন। কোনও ভাবেই কোনও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তুকে অযথা আপনার বক্তব্যের মধ্যে নিয়ে আসবেন না।

সততা ও নৈতিক দায়বদ্ধতা

থ্রি ইডিয়টসের রাজুর সব থেকে বড় গুন ছিল, ওর বক্তব্যের মধ্যে সততা, স্পষ্টতা এবং সুনির্দিষ্টতা। রাজুর বক্তব্যে আরও একটা বিষয় ইন্টারভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যানদের পছন্দ হয়েছিল। তার নৈতিক দায়বদ্ধতা। এই ডব্লুবিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রার্থীর নৈতিক দায়বদ্ধতা এবং সততা যাচাই করবেন ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা। তাই কোনভাবেই কোন মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না। কোনও বিষয় না-জানলে পরিষ্কারভাবে এবং বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দিন। কিন্তু, তাঁরা যদি বুঝতে পারেন, আপনি মিথ্যে বলছেন বা অতিরিক্ত বলছেন তা-তে কিন্তু আপনার নম্বর কমবে।

নেতৃত্ব-দানের ক্ষমতা

আপনি নিয়োজিত হতে চলেছেন রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদগুলির মধ্যে একটিতে। এখানে আপনার আচার-আচরণ এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একটা গোটা সমাজকে প্রভাবিত করবে। আপনি হবেন প্রাথমিক স্তরের সরকারের প্রধানমুখ। তাই আপনার মধ্যে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা আছে কি না, বোর্ডের সদস্যরা খোঁজার চেষ্টা করবেন।। যে কোনও দলের ক্যাপ্টেনের প্রধান গুণাবলী হল – “লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট”। অর্থাৎ, তাকে উদাহরণ তৈরি করে অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। ঠিক এক্ষেত্রেও প্রশাসনিক স্তরের কর্তাদের মধ্যে এই লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট গুণাবলীটি আছে কি না, তার যাচাই করা হবে এই পার্সোনালিটি টেস্টের মাধ্যমে। ধরুন, কোনও ব্লকে বন্যা হয়েছে। আপনি উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে, নিজে যদি সেই বন্যার ত্রাণে সশরীরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান, তবে তা অন্য কর্মচারীদের সামনে একটা উদাহরণ তৈরি হবে। অন্যরাও ঝাঁপিয়ে পড়বেন কী ভাবে দ্রুত বন্যাতে উদ্ধারকাজ চালানো যায়।

কেমন হবে পোশাক-পরিচ্ছদ

এই পোশাক পরিচ্ছদের বিষয়টি নিয়ে অনেক পরীক্ষার্থীদের মধ্যেই একটা চূড়ান্ত বিভ্রান্তি থাকে। যে কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শই হল পার্সোনালিটি টেস্টের ক্ষেত্রে আপনার পোশাক পরিচ্ছদ যেন মানানসই হয়। যেহেতু এটি একটি প্রশাসনিক চাকরি, তাই ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় আপনার পোশাক পরিচ্ছদ যেন তার সমোপযুক্ত হয়। সংক্ষিপ্ত পরামর্শ হল, পরীক্ষার্থীরা ট্রাডিশনাল এবং অফিসিয়াল পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে গেলেই ভাল। পুরুষেরা, ফর্মাল শার্ট, প্যান্ট (লুজ ফিটিং),ট্রাউজার পড়তে পারেন। পোশাক যেন পরিচ্ছন্ন হয়। জুতো পা-ঢাকা হলে ভাল। চামড়ার জুতো হলে একটু পলিশ করে নিতে পারেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে শাড়ি, ফর্মাল চুরিদার পড়া যেতে পারে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই যেন রং খুব উজ্জ্বল বা দৃষ্টি আকর্ষণকারী না হয়। অত্যাধুনিক পোশাক এড়িয়ে চলাই ভাল। আপনি যদি আধুনিক পোশাকে অভ্যস্ত হন তা সত্বেও। চুপিসারে বলে রাখি, উপরের বর্ণিত পোশাকগুলি পড়ে ইন্টারভিউ দিতে যান। সফল হওয়ার পর, আপনার মন-মতো যে কোনও পোশাক পড়ে উপভোগ করুন আপনার বাদবাকি কর্মজীবন।