অরিন্দম ভট্টাচার্য
শিশুদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য এক শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করে প্রাথমিক শিক্ষা। যা শিশুদের শেখার আগ্ৰহ বাড়ায়। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করা। এই উদ্দেশ্যকে পাথেয় করে এবং স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জয়রামবাটি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়া জেলার কোতলপুরের খিরি গ্ৰামে বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বিবেক বিকাশ মিশন। শিক্ষার আলো থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল এই গ্ৰাম ও তার আশেপাশের গ্ৰাম। সামান্য অর্থের বিনিময়ে ২০১৬ সালে এখানেই শুরু হয় প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের কোচিং ক্লাস।
কিন্তু সমস্যা হয় কোচিং ক্লাসে যে সকল শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে দেখা যায় তাদের অনেকের প্রাথমিক শিক্ষার মান ছিল অত্যন্ত খারাপ। তখনই ভাবনায় আসে গ্ৰামে প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষার উন্নতির কথা। ফলে ২০২২ সাল থেকে সামান্য অর্থের বিনিময়ে শুরু হয় প্রাক প্রাথমিক স্তর থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পঠন পাঠন। যাতে ছাত্র ছাত্রীদের শৈশব থেকেই পঠন পাঠনের ভিত মজবুত হয়। সাথে স্বামীজির আদর্শে উন্নত চরিত্র গঠনের পাঠ। শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় কম্পিউটার, সঙ্গীত ও অঙ্কন শিক্ষা। একই সাথে দেওয়া হয় শরীর চর্চা ও যোগাসনের পাঠ।
ছোটবেলা থেকে শিক্ষার্থীদের মনোগ্ৰাহী করার জন্য চালু করা হয় প্রজেক্টর দিয়ে পঠনপাঠন। ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তারজন্য দেওয়া হয় মিড ডে মিল। সাথে শিক্ষার্থীদের করা হয় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা। মিশনে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস, মা সারদা দেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি। প্রত্যেক দিন শিক্ষার্থীদের প্রার্থনা সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে পঠনপাঠন শুরু করে। বিবেক বিকাশ মিশন কিন্ত একদিনে গড়ে ওঠেনি। এই মিশন গড়ার মূল কান্ডারি তাপস নন্দী। যাকে গ্ৰামের মানুষরা তাপস মহারাজ বলে সম্বোধন করেন।
যিনি প্রথম জীবনে কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরে চাকরি করতেন। স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে চাকরি ছেড়ে চলে যান উত্তরাখন্ডে রামকৃষ্ণ মিশনে। সেখানে তিনি মানব সেবায় নিয়োজিত হন। এখানে পরিচয় ঘটে চিকিৎসক অরূপ চট্টোপাধ্যায় এবং বিদিতা ঘুলে-র সাথে। পরবর্তী সময়ে তারা বাঁকুড়া জেলার খিরি গ্রামে আসেন। এখানেই নানা জনসেবামূলক কাজে নিয়োজিত হন। কাজের ধারা দেখে গ্রামের মানুষেরা পাশে দাঁড়ায় এবং এক বিঘা জমি দান করে। গড়ে ওঠে বিবেক বিকাশ মিশন। আগামী দিনে শিক্ষার উন্নতির জন্য মিশনের আরও অনেক পরিকল্পনা আছে বলে জানা গেল।