আধুনিক সমাজ জীবনে লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা ও তার অবদান সম্পর্কে কারও কোন সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ নেই। দেশের আপামর জনসাধারণকে শিক্ষিত করতে হলে লাইব্রেরি ছাড়া অন্য কোন সংস্থার কথা ভাবা যায় না। এরকম এক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরি হুগলি জেলার উত্তরপাড়ার জয়কৃষ্ণ পাবলিক লাইব্রেরি। রেনেসাঁস বা নবজাগরণের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল বাংলার বুকেও। সমাজ, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই নবজাগরণের ছোঁয়ায় স্বাধীনভাবে মৌলিক চিন্তা ভাবনা ও যুক্তির প্রকাশ ঘটতে শুরু করল। ব্যতিক্রম ঘটেনি হুগলি জেলাতেও। এক্ষেত্রে অন্যতম পথ প্রদর্শক ছিলেন জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়।
ছোট বেলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বঞ্চিত জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা না করে সরস্বতী মন্দির প্রতিষ্ঠায় উদ্যেগী হন। তাঁর উদ্যোগে এবং ১৮৫০ সালে বৃটেনে ‘সাধারণ গ্রন্থাগার আইন’ প্রবর্তনের প্রেরণাতেই হুগলি নদীর পারে উত্তরপাড়ায় ১৮৫৯ সালে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতির মিশ্রণে ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এশিয়ার প্রথম নিঃশুল্ক বেসরকারী লাইব্রেরি। পরবর্তী সময়ে উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ সাধারণ লাইব্রেরি নামে পরিচিত হয় এই সারস্বত প্রতিষ্ঠান। উদ্বোধনের সময় এই লাইব্রেরিতে গ্রন্থের সংখ্যা ছিল প্রায় পনেরো হাজার।
১৮৬৬ সালে এই লাইব্রেরি পরিদর্শন করেন ইংরেজ শিক্ষাব্রতী মেরি কার্পেন্টার। সঙ্গে ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই লাইব্রেরি দেশি বিদেশি পন্ডিত, গবেষক, সমাজ সংস্কারক, কবি, সাহিত্যিকের পদধূলিতে ধন্য। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও শ্রী অরবিন্দ। এই লাইব্রেরিতে বর্তমানে প্রায় ২ লক্ষ গ্ৰন্থ আছে। পুরনো ভবনে আছে গবেষণা বিভাগ। আর নতুন ভবনে আছে কেরিয়ার গাইড বিভাগ, শিশু বিভাগ, ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্র বিভাগ ও পাঠ্য পুস্তক বিভাগ। ছুটির দিন বাদে প্রত্যেক দিন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ পাঠক এই লাইব্রেরিতে পড়তে আসে। এই ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরি শুধু রাজ্যের নয়, সমগ্র দেশের গর্ব।