অর্ণবের গবেষণা নিয়ে সোমে উত্তর পাবে বিশ্ববিদ্যালয়: অখিল

সমস্যা নেই কারা দফতরের

নিজস্ব প্রতিনিধি: শিলদাকাণ্ড যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন মাওবাদী ছাত্র অর্ণব দাম। পিএইচডি করতে চাইছেন তিনি। আবেদন করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দু’টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়ে কারা দফতরে চিঠি পাঠিয়েছিল। অবশ্য অর্ণবের গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের কারা দফতরের কোনও সমস্যা নেই। এমনকী, অর্ণবের গবেষণার কাজে সুবিধার জন্য তাঁকে বর্ধমান জেলে পাঠাতেও কারা দফতরের কোনও সমস্যা নেই বলেই জানিয়েছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি। আগামী সোমবার সেই উত্তর দেবে কারা দফতর। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছেন কারামন্ত্রী।

এদিন কারামন্ত্রী জানিয়েছেন, সোমবার তাঁদের চিঠির জবাব বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। মন্ত্রী বলেন, ‘বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি দিয়েছিল। আমাদের কোনও সমস্যা নেই।’


ওদিকে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বৃহস্পতিবার এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছিলেন, পড়াশোনার সুবিধার জন্য হুগলি জেল থেকে অর্ণবকে বর্ধমান জেলে পাঠানো হতে পারে। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, অর্ণবের গবেষণায় বাধা দিচ্ছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইন্টারভিউতে প্রথম হওয়ার পরেও তিনি গবেষণা শুরু করতে পারছেন না। ঘটনাটি নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ভূমিকায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও ‘ক্ষুব্ধ’ বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়।

কুণাল জানান, শিক্ষামন্ত্রী এবং কারামন্ত্রী আলোচনা করেছেন। সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। গবেষণায় যাতে সুবিধা হয়, সে কারণে অর্ণবকে হুগলি থেকে বর্ধমান জেলে সরানো হবে। অবশ্য এবিষয় মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে নিরাপত্তার বিষয় জড়িত রয়েছে। অর্ণব হুগলি জেলে থাকবেন না-বর্ধমান জেলে, তা দেখে নেব। বর্ধমানে সম্ভবত সুবিধা হবে।’

বর্ধমানে কেন সুবিধা হবে, এদিন তা-ও জানিয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘হুগলি থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের খরচ বেশি। রাস্তাঘাটের বিষয় রয়েছে। সেখানে নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে। কোর্টের অর্ডারও রয়েছে।’ অবশ্য অর্ণবের গবেষণা যে আটকাবে না, তারও আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। এবিষয় তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা মতোই সবটা করা হবে। আমাদের পক্ষে কোনও সমস্যা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনা, যাঁরা পড়তে চান, তাঁদের পড়তে দিতে হবে।’

ওদিকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি জেল সুপারকে  এই সংক্রান্ত বিষয়ে দু’টি প্রশ্ন করে চিঠি দিয়েছিলেন। তার জবাব এখনও পাননি তিনি।

কি কি প্রশ্ন করা হয়েছিল? সে বিষয়ে উপাচার্য গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘ আমি হুগলির জেল সুপারকে চিঠি দিয়ে দু’টি প্রশ্ন করেছিলাম। প্রথম প্রশ্ন, কী ভাবে অর্ণব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিয়মিত ক্লাস করবেন? সে ক্ষেত্রে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি কে বা কারা দেখবেন?

দ্বিতীয় প্রশ্ন, অর্ণবকে পিএইচডি করতে দেওয়ার বিষয়ে জেল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা অনুমোদন রয়েছে কি না।’ উপাচার্য আরও জানান, ওই দু’টি প্রশ্নের ‘সদুত্তর’ যতক্ষণ না-পাচ্ছেন ততক্ষণ, অর্ণবের পিএইচডিতে ভর্তির বিষয়টি শুরু করা যাচ্ছে না। জবাব এলেই জট দূর হবে। অবশ্য হুগলি জেল সূত্রে জানা গিয়েছিল, ওই চিঠি রাজ্যের কারা দফতরকে পাঠানো হয়েছে। তার জবাবই সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

অন্যদিকে, অর্ণব যাতে গবেষণা করতে পারেন, সেই দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া পিপলস ফোরাম’। বৃহস্পতিবার হুগলি জেলে গিয়ে অর্ণবের সঙ্গে কথাও বলেন এআইপিএফের প্রতিনিধিরা।

প্রসঙ্গত, খড়্গপুর আইআইটির মেধাবী ছাত্র অর্ণব পড়াশোনা ছেড়ে সিপিআই (মাওবাদী)-এর রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট সেই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। গত ফেব্রুয়ারিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরেই হুগলি জেলা সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন অর্ণব।

এরপর তিনি জেলে বসেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা সেট-এ উত্তীর্ণ হন। তার পরে হুগলি জেল থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে গিয়ে পিএইচডির প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তার পরেও গবেষণার কাজ শুরু করতে পারেননি তিনি। তা নিয়েই টানাপড়েন শুরু হয়।