সমূলে ধ্বংসের পথে বাঙালির শিক্ষা ব্যবস্থা

নিশীথ সিংহ রায়

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষার হাল নিয়ে অনেকে অনেক প্রশ্ন তুলেছেন ও তুলছেন। জনসাধারণ চোখের সামনে প্রতিনিয়ত যা দেখতে পাচ্ছে সেটাই তো বলবে কারণ আক্ষরিক অর্থে সেটাই তো বাস্তব, সত্যি। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায যুগ সবাই প্রতিনিয়ত সব দেখতে বা শুনতে পাচ্ছে। তারা নিরাশা, হতাশার স্বীকার! নিরাশা থেকে তো তারা প্রশ্ন তুলবেই। আমার মনেও সেই একই প্রশ্ন? ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যের কথা অত ভাল জানিনা কিন্ত পশ্চিমবঙ্গে আমি বাস করি, বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলার সংস্কৃতি আমার মজ্জায় মজ্জায়। বাংলার অজ গ্রামের এক স্কুলে পড়তাম। প্রতিদিন দশ কিলোমিটারের ওপর হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতাম। শিক্ষকদের স্নেহ-ভালবাসা আর বেতের ঘা খেয়ে বড় হয়েছি। বাবা এক শিক্ষক রেখেছিলেন যাঁর কাজ ছিল সপ্তাহের ছয়দিন বেতের মাধ্যমে শিক্ষাদান আর একদিন মানুষ তৈরি গড়ার জন্য বেত্রাঘাত। যে কারণে সপ্তাহের বিশেষ একদিন মানে রবিবার সকালে বাইরে বেরুতে পারতাম না। দু’টো কারণে এক শরীরে কুলাত না দ্বিতীয়ত লজ্জায়। বন্ধু-বান্ধবরা দেখে ফেলবে পায়ে বেতের দাগ। তখন তো ফুলপ্যান্ট ছিল না। দড়ি দেওয়া সুতির হাফ প্যান্ট। ১৯৭৭ সালে মাধ্যমিক পাশ করার পর প্রথম পাজামা পরার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাই বেতের সব দাগ দেখা যেতো। হয়তো আমি লেখাপড়ায় ভাল নই কিন্ত এখনও পুরানো শিক্ষকদের দেখলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি বা পা ছুঁয়ে প্রণাম করি। এই সংস্কারটুকু তখন শেখানো হয়েছিল যে বাবা-মায়ের পরই শিক্ষা গুরুর স্থান।

যাইহোক বিধান চন্দ্র রায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময় পশ্চিমবঙ্গের ছিল স্বর্নযুগ। এরপর প্রফুল্ল সেনের সময় সেই ধারা কিছুটা হলেও অব্যাহত ছিল কিন্ত প্রফুল্ল সেনের পর থেকে বঙ্গের কপালে সেই যে দুর্গতি নেমে এসেছে তা এখনও সমান তালে চলছে। সর্বক্ষেত্রের মতন শিক্ষাক্ষেত্রও আর সেই কুসময় থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এখন সবার মনে এক প্রশ্ন পৌরাণিক কাহিনীতে পড়া আগের মতো সেই শিক্ষক যিনি পৃথিবীর সব সুখ ত্যাগ করে শুধুমাত্র তাঁর শিষ্যদের শারীরিক ভাবে যেমন শক্তপোক্ত মানসিক ভাবে তেমন আদর্শবান, বিবেকবান, নীতিজ্ঞান সমৃদ্ধ সমাজ সচেতন দেশ ভক্ত ভবিষ্যত নাগরিক তৈরি করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যেতেন সেরকম শিক্ষক কেন এখন হয় না? আর বর্তমান সমাজে মানে বাবা-মা বা অভিভাবকগণ কতটা সেই শিক্ষা নেবার জন্য তাঁদের সন্তানদের উপযুক্ত গাইড করছেন বা নিজেরা কতটা শিক্ষা সচেতন সেটাও দেখার। এখানে শিক্ষা সচেতন বলতে বোঝায় সেই ক্যারিয়ার সর্বস্ব, পুঁথি সর্বস্ব, স্বার্থপর, বিবেকহীন মানুষ না সমাজ সচেতন, বিবেকবান যারা প্রতিটি মানুষকে তাঁর যোগ্য সম্মান দেবে এবং তার মাধ্যমে নিজেও সম্মান আদায় করে নেবে সেরকম নাগরিক। আবার বর্তমান ছাত্রসমাজ বা সন্তানরা কি সেরকম আধার না সেরকম কমলমতি যে তারা আদর্শ নাগরিক হবার উপযুক্ত? মানে কাঁচা নরম মাটি যাদেরকে নিজের ইচ্ছামত তাদের গুরুরা তৈরি করে নিতে পারবে? এরকম অনেক প্রশ্ন।


সবার আগে শিক্ষার্থীদের সম্বন্ধে আগে একটু বলে নিই। শিষ্য মানে বর্তমান যুগের শিক্ষার্থীদের কি আগের মতো সেই গুরু নিবেদিত প্রাণ আছে? যুগ সন্ধিক্ষণের যা কিছু ঝড়ঝাপটা প্রথম লাগে শিক্ষার্থীদের। কারণ এদের কেউ তখন একেবারে শিশু, কেউ বা কিশোর বা যুবক। এবার কথা এরা কি সত্যিই আদর্শ ছাত্র? না আগে থেকেই তারা মানে মাটি অনুপযুক্ত হয়ে গেছে যাকে জল মিশিয়েও আর নিজের পছন্দ মাফিক মুর্তি গড়া যাবে না? এটা আমরা সমাজের সর্বক্ষেত্র একটু পর্যবেক্ষণ করলেই এই কথাটির সারবত্তা বুঝতে পারবো। স্বাভাবিক কারণে এখন যে দল সরকার চালাচ্ছে তাদের দিকে আঙুল উঠবেই। মানুষ আঙুলও তুলছে। আর তারাও খুব চাপে পরে যাচ্ছে। এখানেও সরকারের চাপে পড়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

২০১১ সালে যে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছিল তার কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলতা অবশ্যই অর্জন করেছে কিন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে তারা যে আশানুরূপ কাজ করতে পারেনি বা শিক্ষার ক্ষেত্রে পুরানো ধ্যান ধারণা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছে তা অনেকে মনে করে না। সেকারণেই আজ সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের এত ক্ষোভ। তাই প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার সর্ব্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত আজও অবক্ষয় আর অবক্ষয়। শিক্ষা ব্যবস্থার এই অবক্ষয় নিয়ে কারুর কোনো দ্বিমত নেই এটা সাধারণ নাগরিক থেকে প্রতিটি দলের প্রতিটি সমর্থক অন্তরে বিশ্বাস করে। সরকারি স্কুলে যখন অবক্ষয় আর অবক্ষয় তখন বেসরকারি নামিদামী, কমদামী বা গ্রামে সদ্য গজিয়ে ওঠা স্কুলের পঠনপাঠন কি রকম? এককথায় দেখি, সামগ্রিক ভাবে সবটা একটু বিচার করে।

এটা দারুণ সত্যি কথা তাৎক্ষণিক ভাবে যা যা কাজ করা যায় তার সবই এই সরকার আগের সরকারের থেকে অনেক অনেক ভালো করেছে কিন্ত যেগুলি সুদূর প্রসারী এবং পরিকল্পনা মাফিক করলে দেশ বা জাতির উন্নতি হয় সেক্ষেত্রে তারা ডাঁহা ফেল। এর মূল কারণ রাজনৈতিক। এখন শিক্ষার্থীরা মাসিক, বাৎসরিক বা অন্য কারণেও সরকার থেকে প্রতিনিয়ত টাকা পায়। আমাদের দেশ ও রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রেও কোটা চালু আছে সেখানে গরীব-বড়লোক হিসেবে নয় শিক্ষার্থীরা তাদের জাত হিসেবে টাকা পায়। শিক্ষার্থীরা একটা সময় পর্যন্ত স্কুলে দুপুরের খাবার পাচ্ছে। তাদের বই-খাতা, জামাকাপড়, যাতায়াতের সুবিধার্থে সাইকেল সব সরকার দিচ্ছে। সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং, আধুনিক প্রযুক্তির পুস্তকাগার, কম্পিউটার সবই করে দিচ্ছে এর সাথে যোগ হয়েছে বিধায়ক, সাংসদদের কোটা থেকে ফান্ড। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসেছে অত্যাধুনিক স্মার্ট বোর্ড। সবদিক দিয়ে স্কুল, কলেজ বা শিক্ষাক্ষেত্রের জৌলুস অনেক বেড়ে গেছে।

এতকিছু আসার পরেও কিন্ত অধিকাংশ প্রাইমারী, মাধ্যমিক বা কলেজে শিক্ষার্থীর অভাব। অনেক জায়গায় তো অনেক সরকারি স্কুল উঠেই গেছে শিক্ষার্থীদের অভাবে। এর মূল কারণ শিক্ষা নিয়ে কোনও সরকারই কোনোদিন সুদূর প্রসারী কোনো পরিকল্পনা করেনি। আমাদের রাজ্যে শিক্ষায় প্রথম সরাসরি আঘাত হানে ১৯৭২ সালে কংগ্রেস সরকার। সবাই জানেন সেসময়ের গণ টোকাটুকিতে একটা বৈপ্লবিক মাত্রা এনেছিল। আর শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ছেলেখেলা করেছে বামফ্রন্ট সরকার। যা খুশি করে গেছে। কখন ইংরেজি তুলে দেওয়া কখনও নিয়ে আসা বা শিক্ষাকে সম্পূর্ণ রাজনীতিকরণ সবেতেই ছিল একটা শৈল্পিক ভাব।

সব ছেড়ে দিলেও একটা ব্যাপারে আমার এখনও খুব হাসি পায় যেটা হলো বামফ্রন্ট সরকারে কখনও শিক্ষাক্ষেত্রে একজন মন্ত্রী তো কখনও পাঁচ জন মন্ত্রী। কোটা ব্যাপার আর কি। শরিক দলকে খুশী করার জন্য মন্ত্রীত্ব দিতে হবে তা শিক্ষা দপ্তর আছে ওখানে উচ্চ, মধ্য, নিম্ন, লাইব্রেরী, কারিগরী শিক্ষা বা আরও কিছু পদ সৃষ্টি করে ঢুকিয়ে দাও। তারাও মন্ত্রীত্ব পেয়ে খুশী আর সরকারও রমরম করে সাড়ে তিন দশক চলে গেলো। আজ আমরা যা দেখছি সেটা বর্তমান সরকারের একার কাজ না। গত পাঁচ দশক ধরে পূর্বসূরীদের অপরিনামদর্শিতার ফল ও বর্তমান সময়েও কোনো সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অভাব সাথে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এখনও সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা। শরীরে কর্কট রোগ অনেক আগেই দেখা দিয়েছে, শরীর পুরো ঝাঁঝড়া। শুধুমাত্র ওপরে প্লাস্টিক সার্জারি করে বেশিদিন তাকে ধরে রাখা কি সম্ভব?

এদিকে চারদিকে বাংলা মাধ্যমের সাথে সাথে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রমরমিয়ে চলছে। চলছে বিভিন্ন মিশনারী স্কুলও। বেসরকারি স্কুল, কলেজে লেখাপড়া দারুণ ভাল হয়। এটা সবাই স্বীকার করে বলেই তো বাবা-মারা রাত জেগে বা টাকাপয়সার জোরে অথবা সরকারি অথবা রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে তাদের সন্তানদের নামজাদা স্কুলে ভর্তি করবেই। আর দু’আড়াই বছরের একটা বাচ্চা নিজের ওজনের থেকে বেশি ওজনের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘুম চোখে স্কুল ভ্যানে বা বাবার গাড়ি করে ছোটোবড় তিন রকম টিফিন নিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়তে জন্য স্কুলে যায়।

এটা কিন্ত সর্বশ্রেণীর মানে বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই কমবেশি দেখা যায়। কোনো স্কুলই এর থেকে বাদ পড়ে না। তাই তো বাবা-মা বাড়ির লোক তাদের সন্তানের স্কুলের নাম বলে এত আত্মশ্লাঘা পায় কিন্ত আদতে কি এই সমস্ত স্কুলে সুস্থ শিক্ষার সাথে সাথে বিবেকবান, মানবিক মানুষ তৈরি করে? না আদৌ না। তার প্রমাণ সংশ্লিষ্ট স্কুলের গাইড বুক অথবা কোনো মিডিয়ায় তাঁদের সাক্ষাৎকার বা লেখা দেখলেই বুঝতে পারবেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাফল্যের হিসাব অর্থাৎ কত বিরাট মাইনের চাকরি পেয়েছে তার খতিয়ান দিতে ব্যস্ত। সেই স্কুলের সেই ভাগ্যবান ভাল ছেলেদের হিসাব নিয়ে দেখুন তো তারা কতজন সমাজ সচেতন, বিবেকবান নাগরিক তৈরি করতে পেরেছে? এরা স্বার্থপর, ঔদ্ধত্যপূর্ণ, আত্মসুখী নাগরিক তৈরি হয়েছে।

এদের সন্তানরা তো আরও বেশি আত্মকেন্দ্রিক হবে। বর্তমান রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখলেই এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারবেন। কোথাও একটু সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা দেখতে পাবেন না। মিডিয়াগুলোতে বিতর্কসভায় সমাজের এলিট সম্প্রদায়ের জ্ঞানগর্ব মানুষগুলোর পরস্পরের মধ্যে বাক্যালাপে তার প্রমাণ পাবেন। কেউ কারুর প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দিতে পারে না বা দেয় না। এখানে এই পরিপ্রেক্ষিতে একটা কথা বলা উচিত নয় তবুও বলছি বৃদ্ধাশ্রমগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন আমাদের ভবিষ্যত সন্তানেরা কোন পরিকাঠামোর দিকে যাচ্ছে। আরও একটা মজার ব্যাপার এখানের বৃদ্ধাশ্রমগুলো যেন হিন্দু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্যই করা হয়েছে। মুসলিম প্রায় পাবেন না। তাঁদের কি যাবার প্রয়োজন পড়ে না? অনেকে বলবেন ওঁদের অথনৈতিক অবস্থার জন্যই যেতে পারে না। অনেকে বলবেন ওদের অনেকেরই একাধিক সন্তান থাকে তাই কেউ না কেউ বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিয়ে নেয়।

হ্যাঁ, এগুলি অনেকাংশেই হয়তো সত্যি কিন্ত সম্পূর্ণ নয়। আর একটা দিক হলো মুসলিম সম্প্রদায় এখনও এত আধুনিক হয়নি বা তাদের সামাজিক ব্যবস্থা এখনও এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি বা এটাও হতে পারে তাঁদের সন্তানেরা এখনও এতটা অমানবিক হতে পারেনি? মানে আধুনিক ধ্যান ধারণার সংস্পর্শে আসতে পারেনি। তাই যে শিক্ষা মানুষকে তার আত্মীয় স্বজনদের থেকে শুধু শারীরিক ভাবে নয় মানসিক ভাবেও বিচ্ছিন্ন করে দেয় সে শিক্ষার সত্যিই কি প্রয়োজন আছে? তাই শিক্ষার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত আক্ষরিক অর্থে মানুষ তৈরি করা। বৈদিক যুগ থেকে এটাই হয়ে আসছিল। আসা যাক শিক্ষকদের কথায়। এনাদের এখন শিক্ষার ব্যাপারী বলা যায়। শিক্ষার ফেরি করে যায়। এখন গুরুকে দক্ষিণা দেওয়া হয় না। দেওয়া হয় তাঁর পারিশ্রমিক। বলা ভাল এখন শিক্ষকরাই তাঁদের অসীম জ্ঞানের নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করেন এবং সেটা না পেলে সুযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধাচারণ বা আন্দোলন করবেন। তাদের কিন্ত কোনো দোষ নেই। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার তারা একটা অঙ্গ মাত্র।

আজ সমাজে দেখুন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা তাদের (নায্য?) ডিএ-র জন্য লড়াই করছে কিন্ত যাঁরা হকদার বঞ্চিত চাকরি প্রার্থী তাদের সঙ্গে নেই। আগে শিক্ষক সব পেশার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। শিক্ষক সম্মান আদায় করে নিতেন বা বলা ভাল আমরা তাঁদের তা দিতে বাধ্য ছিলাম। এখন শিক্ষকরাও আর সে শিক্ষক নেই আর আমরাও তাঁদের সে সম্মানও দিই না। সবাই চূড়ান্ত স্বার্থপর। তা শিক্ষকরাও তো এই সমাজের একটা অঙ্গ। একটা কথা এখানে বলা খুবই দরকার যেটি হলো আমি প্রথমে যেটি লিখেছিলাম যে পৌরাণিক কাহিনীর গুরুরা আদর্শবান, বিবেকবান, নীতিজ্ঞান যে শিষ্য তৈরি করতো এখন কেনো তা হয় না? এখন নিজের কর্তব্যের খাতিরে বা স্বার্থের প্রয়োজনে যেটুকু করা যায় অর্থাৎ পুঁথি সর্বস্ব, ক্যারিয়ার সর্বস্ব বিবেকহীন কিন্তু বিশ্ব চেতনার ভবিষ্যত নাগরিক তারা তৈরি করছে। তারা কি করবে?

এখন সেই রাজাও নেই আর সেই রাজত্বও নেই। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দু’জনেই এ যুগের। একটু তফাত যেটা হলো শিক্ষক তার ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় দু’এক দশক এগিয়ে থাকে যেটা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সময়ে অনেক ব্যবধান হলেও কয়েক বছর আগেও তা ছিল না। শিক্ষকের বেসিক কাজ তাঁর ছাত্রের ভিতরের বুদ্ধি যাতে ঠিক মতো বিকাশ হতে পারে তা করা বা দেখা। বর্তমান যুগে এটাই হয় না কারণ প্রায় ছয় দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে চলছে এক চরম নৈরাজ্য। আর শিক্ষকরা তার একটা অঙ্গ সাথে শিক্ষার্থীরাও। আর বাবা-মা? তাঁরা এই সমাজের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ শুধু নয় তারা আবার সমাজের সর্বশ্রেণীর মধ্যেই পড়ে।

তাঁরা শিক্ষক হতে পারেন, তাঁরা সরকারি চাকুরিজীবি হতে পারেন এছাড়া কৃষক, মজুর সবই হতে পারেন। তাঁরা কি করবেন? তাঁরাও তো সমাজের স্রোতের পক্ষেই চলবে। মিটিং, মিছিল ছাড়া কেউ বলে না আমার সন্তান সৎ, মানবিক গুণ সম্পন্ন হোক। যেমন শিক্ষক অভিভাবক চাইবেন তাঁর সন্তান অধ্যাপক হোক, ডাক্তার অভিভাবক চাইবেন তাঁর সন্তান ডাক্তার বা প্রশাসনিক আধিকারিক হোক এই আর কি। তাই নির্দিষ্টভাবে বর্তমান সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ কী, কারণ তারাও বাঙালির একটা অংশমাত্র। আর সেই বাঙালি এখন সজ্ঞানে নিজেরা নিজেদের যদু বংশের মতো সমূলে ধ্বংস করার জন্য ব্যস্ত।।