পার্থপ্রতিম সেন: রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন ভারত তথা বিশ্বের আধ্যাত্মিক পরিমন্ডলে একটি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হিসেবে শতাব্দী কালের বেশি সময় ধরে ঝলমল করছে৷ রামকৃষ্ণ মঠ যেমন বেদান্ত ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত তেমনি রামকৃষ্ণ মিশন জনকল্যাণমূলক কাজ বা জীবসেবায় উৎসর্গিত৷ ‘জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’ এই মহান ভাবনায় মিশনের সবাই দীক্ষিত ও নিরন্তরভাবে কর্মরত৷ ঠাকুর রামকৃষ্ণ, মাতা সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দ এই তিনজনই রামকৃষ্ণ ভাব আন্দোলনের আত্মাস্বরূপ৷ এই তিনজনকেই মন মননে ও আত্মায় ধারণ করে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসী ও অগনিত ভক্ত অনুরাগীদের পথ চলা৷ রামকৃষ্ণ ভাব আন্দোলনে মঠ আছে, মিশন আছে, কিন্ত্ত মন্দির নেই৷ এখানে আধ্যাত্মিকতার পরমজ্ঞান উপলব্ধির ও অনুভূতির প্রয়াস আছে কিন্ত্ত ধর্মের উগ্রতা, আত্মম্ভরিতা বা অহংকার নেই৷ ‘যত মত তত পথ’ অনুসরণে এখানে আধ্যাত্মিক সর্বপথে পথচলার স্বীকৃতি আছে কিন্ত্ত কোনো ধর্মীয় সংকীর্ণতা বা পরধর্ম অসহিষ্ণুতা নেই৷ এখানে দেশ ও জাতির প্রতি সেবার মহৎ আদর্শ আছে কিন্ত্ত ধর্মের নামে রাজনীতি নেই৷
এই রামকৃষ্ণ ভাব আন্দোলন ও রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কাজকর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন আজ থেকে প্রায় ৭২ থেকে ৭৪ (১৯৫০-৫২ সাল) বছর আগে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর বাইশ-তেইশ বছরের এক যুবক শ্রী ভি জয়রমন৷ ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের মুম্বাই আশ্রমে যোগদান করেছিলেন৷ তিনিই পরবর্তী কালে হয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ষোড়শ অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ৷ রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে তিনি জয়রাম মহারাজ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন৷ তিনি এই কিছুদিন আগে ২০২৪ সালের ২৬ মার্চ ৯৪ বছর বয়সে কলকাতায় ইহলোকের মায়া কাটিয়ে রামকৃষ্ণলোকে গমন করেন৷ তাঁর রামকৃষ্ণ ভাবধারায় নিয়োজিত জীবন ও কর্মকান্ড নিয়ে এই প্রবন্ধে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ তাছাড়া আজকের বস্তুবাদী ও ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় আধুনিকতার সাথে আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধন খুব প্রয়োজন বলেই প্রজ্ঞাবান বিশিষ্টজনেরা মত প্রকাশ করছেন৷ তাই এই আধ্যাত্মিক জীবন ও আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা৷
স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজের পূর্বাশ্রমের নাম ছিল শ্রী ভি জয়রমন৷ ১৯২৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর তামিলনাড়ু প্রদেশের তাঞ্জাভুর জেলার আন্দামি নামে একটি ছোট গ্রাামে মাতামহের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন জয়রাম৷ পিতার নাম ছিল শ্রী আর ভেঙ্কটরমন আর মাতার নাম ছিল সুব্বালক্ষ্মী৷ পিতা প্রথমে সৈন্যবাহিনীতে কাজ করেন এবং তারপর মহারাষ্ট্রের নাসিকে ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেসে কাজ করে অবসর গ্রহণ করেন৷ পড়াশুনা সহ জয়রামের ছোটবেলা চেন্নাই, ত্রিচি জেলার কুলিত্তালাই, নাসিক প্রভৃতি স্থানে অতিবাহিত হয়৷ ১৯৪৬ সালে তিনি কুলিত্তালাই-এ হাইস্কুল থেকে একাদশ শ্রেণীর বোর্ডের পরীক্ষায় খুব ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন৷ তারপর তিনি নাসিকে গিয়ে পোস্টাল টিউশনের মাধ্যমে ইন্ডিয়ান চেম্বার ও কমার্স দ্বারা অনুমোদিত বিজনেস অর্গানাইজেশনের উপর একটি ডিপ্লোমা কোর্স সম্পূর্ণ করেন৷ তারপর তিনি তাঁর পিতার চেষ্টাতেই ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেসে ক্লার্কের পদে একটি অস্থায়ী চাকরি পান৷ তবে জয়রামকে সেখানে অস্থায়ী চাকরি বেশিদিন করতে হয়নি৷ তিনি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে মুম্বাইতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ক্লার্কের পদে যোগ দেন ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্কে কাজের সাথে সাথে তিনি দু’টি কলেজে বি এ কোর্স ও ব্যাঙ্কিং ডিপ্লোমা কোর্স পড়াশুনা শুরু করেছিলেন৷ সে সময় তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ব্যাঙ্কারস্ এর ‘সিএআইআইবি (CAIIB)’ কোর্সটি নিয়েও পড়াশুনা করেন এবং দু’টি পেপার ছাড়া সব পেপারে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন৷ তবে তিনি চাকরি আর কলেজের পড়াশুনার মধ্যেই শুধু নিজেকে ব্যস্ত রাখেননি৷ তাঁর মনের বহুমুখী গতিপ্রকৃতি ছিল৷ তাঁর প্রিয় বিষয় ছিল ক্রিকেট খেলা দেখা, ধ্রুপদী চলচ্চিত্র দেখা ও ভালো ভালো গ্রন্থপাঠ৷ সেসময় তিনি মুম্বাইয়ের ওয়াংখেডে় স্টেডিয়ামে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ভারতের টেস্ট ম্যাচ দেখেছিলেন৷ তাঁর পছন্দের
বইয়ের মধ্যে ছিল নেপোলিয়ন হিলের লেখা ‘Think and Grow Rich’ এবং মহাত্মা গান্ধীর লেখা ‘The Story of My Experiment with Truth’ ইত্যাদি৷ এইসব বইপাঠ তাঁর জীবনে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছিল৷ পরবর্তীকালে স্বামী স্মরণানন্দ বলেছিলেন গান্ধীজির বইতে ব্রহ্মচর্যের উপর লেখা পডে় তিনি খুববেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন৷
একদিন মুম্বাইয়ে ডবল ডেকার বাসের উপর-তলায় বসে যেতে যেতে হঠাৎ মনের গভীর থেকে তাঁর সাধু হওয়ার বাসনা জেগে উঠল৷ সেটাই হয়তো তাঁর ভবিতব্য ছিল৷ অন্যভাবে বলা যায় মানুষের মন আন্তরিক ভাবে যা চায়, সেটাই সে পায়৷ সেই চাওয়াটি ঈশ্বরানুভূতি হলেও সেটাও মানুষ অর্জন করতে পারে৷ সেসময় মুম্বাইয়ের খারে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মঠের শাখা কেন্দ্রের খবর পান জয়রমন এবং সেখানে যাতায়াত শুরু করেন৷ নিয়তি মানুষকে সঠিক ঠিকানায় যেন টেনে নিয়ে যায়!সেসময় রবিবার হলে সারাটা দিন তাঁর কাটত রামকৃষ্ণ আশ্রমে৷ সংসারের জাগতিক বিষয় সম্বন্ধে তাঁর যাবতীয় স্পৃহা তখন ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে লাগল৷ তিনি তখন আরও বেশি বেশি করে পড়তে শুরু করেন স্বামী বিবেকানন্দের বই৷ সেসময় মঠে একদিন ধ্যান করার সময় তিনি অনুভব করলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাঁকে বলছেন তিনিই তাঁর ইষ্ট৷ তারপর থেকে ঠাকুর রামকৃষ্ণ-কেই জয়রমন তাঁর ধ্যানজ্ঞান করে নিলেন৷ বিএ কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মুম্বাই রামকৃষ্ণ আশ্রমে ব্রহ্মচারী হিসেবে যোগদান করেন এবং ঠাকুরঘরের ভান্ডারে কাজ করার সুযোগ পান৷ ভোরবেলা থেকে শুরু করে রাত ন’টা পর্যন্ত তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হতো৷ ১৯৫২ সালের ১৫ ডিসেম্বর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম অধ্যক্ষ পূজ্যপাদ শঙ্করানন্দ মহারাজের কাছ থেকে জয়রমন ব্রহ্মচারীর মন্ত্রদীক্ষা গ্রহণ করেন মুম্বাই রামকৃষ্ণ আশ্রমে৷ এক গভীর আনন্দে তাঁর মনপ্রাণ ভরে উঠল৷ তারপর তিনি মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে গিয়ে চারমাস থেকে খরা পীডি়ত মানুষদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করলেন৷ নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের সেবা করা, সে এক পরম পাওয়া ছিল তাঁর কাছে৷ যেন প্রতি মূহুর্তে মানুষরূপী ঈশ্বরকে ছুঁয়ে থাকা, পরার্থে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়া৷ সেইসময় তিনি মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ ও দৌলতাবাদের নিকট অবস্থিত দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম ঘৃষ্ণেশ্বর দর্শন করে ইলোরা ও অজন্তা ভ্রমণ করেন৷
মায়ের আবির্ভাবের শতবর্ষ উপলক্ষে ১৯৫৪ সালের ৯ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে জয়রামবাটির মাতৃমন্দিরে মায়ের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হবে৷ সম্বুদ্ধানন্দজী ও জয়রাম মহারাজ একসাথে মুম্বাই থেকে এসেছিলেন সেই পুণ্য উৎসবে কলকাতায়৷ প্রথমে বেলুড় মঠ, তারপর জয়রামবাটি এবং তারপর কামারপুকুরে জয়রাম মহারাজ গেলেন, তাঁর হৃদয়মন আনন্দে ভরে উঠল৷
সেসময় সারা ভারতবর্ষ থেকে প্রায় চার হাজার প্রতিনিধি জয়রামবাটিতে এসেছিলেন৷ মূল উৎসবের দিনে প্রায় পঁচিশ হাজার ভক্ত প্রসাদ পেয়েছিলেন৷ জয়রাম মহারাজ যজ্ঞকুন্ড সাজানো, খাবার পরিবেশন করা ইত্যাদি নানা কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে যারপরনাই আনন্দ ও সন্ত্তষ্টি উপভোগ করেছিলেন এবং এই অনন্য উৎসব সারাজীবন তাঁর স্মৃতি প্রকোষ্ঠে উজ্জ্বল ছিল৷ তারপর তিনি বারাণসী, হৃষিকেশ, মথুরা, বৃন্দাবন ভ্রমণ ও দর্শন করে মুম্বাই আশ্রমে ফিরে যান৷ তার প্রায় দু’বছর পর ১৯৫৬ সালের ১৪ মার্চ জয়রাম মহারাজ বেলুড় মঠে গিয়ে পূজনীয় অধ্যক্ষ মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী শঙ্করানন্দজীর কাছ থেকে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা লাভ করেন, তাঁর নতুন নাম হয় ব্রহ্মচারী সম্বিতচৈতন্য৷ প্রথমে মন্ত্রদীক্ষা, তারপর ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা, এইভাবে একের পর এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জয়রাম মহারাজ আধ্যাত্মিক চিন্তা চেতনার গভীরে ডুবে যেতে লাগলেন৷ সেসময় জয়রাম মহারাজ স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক বাডি়তে গিয়ে স্বামীজীর ছোটভাই মহেন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন৷ ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা নেওয়ার পর কলকাতায় কিছুদিন থেকে জয়রাম মহারাজ ফিরে যান আবার মুম্বাই আশ্রমে৷ ডুব দিলেন সঙ্ঘের নিত্যদিনের কাজে৷ মন্ত্রের মাধ্যমে চিত্তের শুদ্ধি হতে লাগল আর সেবার মাধ্যমে অহং দূর হতে লাগল৷ তারপর ১৯৫৮ সালে তিনি বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অদ্বৈত আশ্রমের কলকাতা কেন্দ্রে যোগদান করলেন প্রবুদ্ধ ভারত পত্রিকার সিটি-এডিটর হয়ে৷ বয়স তখন তাঁর উনত্রিশ৷
কলকাতার অদ্বৈত আশ্রমে থাকার সময় তিনি প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমণ করতেন৷ প্রাতঃভ্রমণের সময় তাঁর কন্ঠে থাকত বিষ্ণুসহস্রনাম এবং ললিতাসহস্রনাম স্তোত্র৷ মন্ত্র বা স্তোত্র পাঠ মানুষের মনকে পবিত্র করে, মানুষের মনে শক্তি জোগায়৷ ১৯৬০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি একত্রিশ বছর বয়সে তিনি বেলুড় মঠে অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী শঙ্করানন্দজীর কাছ থেকে সন্ন্যাস দীক্ষা লাভ করেন৷ তাঁর নতুন নাম হয় স্বামী স্মরণানন্দ৷ তাঁর মন্ত্র দীক্ষা, ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা ও সন্ন্যাস দীক্ষা একই গুরু মহারাজ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী শঙ্করানন্দজী মহারাজের কাছ থেকে হল, সে এক পরম প্রাপ্তি বৈকি! মন্ত্র দীক্ষা নিয়ে চিত্ত শুদ্ধ ও পবিত্র হয়েছিল, ব্রহ্মচর্যে দীক্ষায় শরীর ও মন অচঞ্চল হয়ে বীর্যশক্তি উর্দ্ধমুখী হয়েছিল আর সন্ন্যাস দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে জীবনের ভোগ বাসনা সমস্ত কিছু ত্যাগ করে জয়রাম মহারাজ হয়ে উঠেছিলেন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী৷ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে এইভাবেই যৌবনের প্রারম্ভে ঈশ্বরের সন্ধানে বা সৎ জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে কেউ কেউ সাধারণ ব্রহ্মচারী হিসেবে যোগদান করে বিভিন্ন সৎ প্রক্রিয়া যেমন ভক্তি, কর্ম, জ্ঞান ও রাজ যোগের মাধ্যমে সন্ন্যাসী স্তরে উন্নীত হন৷ তারপর ১৯৬১-এর এপ্রিলে পূজনীয় স্মরণানন্দ মহারাজকে পাঠানো হল উত্তরাখণ্ডের মায়াবতীর অদ্বৈত আশ্রমে ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ পত্রিকার সম্পাদক পূজনীয় অনন্যানন্দজী মহারাজকে সহায়তা করার জন্যে৷ উল্লেখ্য, মায়াবতীর অদ্বৈত আশ্রম হল রামকৃষ্ণ মঠের একটি শাখা যা ১৮৯৯ সালের ১৯ মার্চ স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ মায়াবতীতে স্বামী স্মরণানন্দের দিনগুলি খুব আনন্দে কেটেছিল৷ নিত্য দিনের ধ্যানজ্ঞান ও কাজ কর্মের সঙ্গেই পাহাডি় পথে হাঁটা, কখনও নানারকমের খাবার তৈরি করা, কখনও বাগান পরিচর্যা করা, কখনও ব্যাডমিন্টন খেলার মাধ্যমে অতি আনন্দের মধ্যেই দিনগুলি অতিবাহিত হয়েছিল৷ তাছাড়া হিমালয়ের কোলে সেখানকার পরিবেশও ছিল অপূর্ব৷ আশ্রমের বাগানে প্রস্ফূটিত বড় বড় গোলাপ ফুল, এখানে সেখানে ফুটে থাকা গুচ্ছ গুচ্ছ লাল রডোডেনড্রন ফুল৷ হিমালয়ের বরফ-ঘেরা দীর্ঘ প্রেক্ষাপটে সারি সারি দাঁডি়য়ে থাকা রাজকীয় দেওদার গাছের অপরূপ দৃশ্য৷ তাছাড়া শীতের সময় তুষারপাতের নিঃসীম শুভ্রতায় ভরা জ্যোৎস্না আলোকিত মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে মনপ্রাণ ভরে যায় এক অনাবিল আনন্দ মুগ্ধতায়৷ স্বামী স্মরণানন্দ ঈশ্বর ইচ্ছায় সেই সুযোগ পেয়ে নিজেকে হয়তো ধন্য মনে করেছিলেন৷ এই যে নিজস্ব পারিবারিক জীবনের বাইরে গিয়ে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের সাথে এক উচ্চকোটির মুক্ত পবিত্র জীবন যাপন আর যে জীবনে আছে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ, প্রকৃতির কোলে থেকে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করা, এমনকি ব্যাডমিন্টন খেলা ও প্রতিদিনের জীবসেবার মধ্য দিয়েই মুক্তির সাধনা করা, তার থেকে পবিত্র আর আনন্দময় জীবন কি হতে পারে! এখানে একটি ছোট্ট প্রশ্ন আমার মনে জাগে – সংসার জীবন সুখের না সন্ন্যাসী জীবন সুখের?
১৯৬৩ সালে স্বামীজীর আবির্ভাবের শতবর্ষ উপলক্ষে মায়াবতী আশ্রম ও আশেপাশের কলেজে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান হয়েছিল যাতে স্মরণানন্দ মহারাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন৷ সে বছরেই তিনি অমরনাথ, কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির, রুদ্রপ্রয়াগ, স্বর্ণপ্রয়াগ, গৌরীকুন্ড ও হিমালয়ের কোলে থাকা বিভিন্ন তীর্থস্থান দর্শন করে কনখল সেবাশ্রম হয়ে ১৯৬৩ সালের অক্টোবর মাসে পৌঁছে যান অদ্বৈত আশ্রম কলকাতায়৷ ১৯৬৬ সালে স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ কলকাতা অদ্বৈত আশ্রমের ম্যানেজারের দায়িত্ব নিলেন৷
তখন কলকাতার অদ্বৈত আশ্রমের গ্রন্থাগারটি গডে় তোলা এবং তাকে ঋদ্ধ করার ব্যাপারে স্বামী স্মরণানন্দজী বিশেষ অবদান রেখেছিলেন৷ সেসময়ের কলকাতা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্টল এবং অন্যান্য বুকস্টল ঘুরে ঘুরে তিনি বই সংগ্রহ করতেন৷ তাতে বিদ্যা, জ্ঞান ও বইয়ের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি এই ধরনের বিভিন্ন কাজে তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা ও শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়৷ ১৯৬৭ সালে অদ্বৈত আশ্রমের হলে ‘অখিল ভারত বিবেকানন্দ যুব মহামন্ডল’-এর জন্ম হয়৷ সেসময় বাংলায় অনেক যুবক আত্মঘাতী ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের রাস্তায় নেমে ছিল৷ সেই পরিবেশে বাংলার শিক্ষিত যুবকদের মানবকল্যাণে সঠিক পথ প্রদর্শনের সে ছিল এক নীরব প্রচেষ্টা যা খুব ফলপ্রসূ হয়েছিল৷ তাই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে দেখা যায় প্রচুর উচ্চশিক্ষিত বিদগ্ধ সন্ন্যাসী৷ মানবকল্যাণে তাঁরা ভোগবাদী জীবনের আকর্ষণ উপেক্ষা করে বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের আশ্রয়ে এসেছিলেন৷
কলকাতা অদ্বৈত আশ্রমে থাকাকালীন স্বামী স্মরণানন্দ বাংলা ভাষা খুব ভালো করে আয়ত্ব করে নেন এবং বাংলা সাহিত্য বিশেষ করে রবীন্দ্র রচনা গভীর অভিনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করেন৷ সন্ন্যাসী হয়ে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে তিনি জ্ঞান অর্জন ও বিস্তারের যে সুযোগ পেয়েছিলেন তা পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করেছিলেন বিশেষতঃ গ্রন্থাগারকে বিভিন্ন গ্রন্থ দিয়ে সমৃদ্ধ করে৷ তাই বলা হয় জ্ঞান বিস্তারে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম৷ তাছাড়া নিজের মাতৃভাষা তামিল ছাড়াও মারাঠি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার উপর তাঁর বিশেষ দখল ছিল৷ তিনি হয়ে উঠেছিলেন বহুভাষাবিদ এক সন্ন্যাসী৷
১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে স্বামী স্মরণানন্দজী বেলুড় মঠের পাশে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠ নামক বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ সারদাপীঠে তাঁর প্রথম কাজ ছিল আশ্রমিক জীবনকে ফিরিয়ে আনা৷ নবাগত ব্রহ্মচারীদের জন্য তিনি যেমন শাস্ত্রের ক্লাস নিতেন তেমনি অন্য সাধুদের জন্যেও বৃহদারণ্যক উপনিষদের ক্লাস নিতেন৷ তাঁর উদ্যোগে সারদাপীঠে কালীকীর্তন এবং জগদ্ধাত্রী পুজো নতুন ভাবে শুরু হয়৷ তাঁর উদ্যোগে সারদাপীঠের বিক্রয় কেন্দ্রটির প্রভূত উন্নতি সাধিত হয় এবং আশ্রমের আয় বৃদ্ধি হয়৷ আশ্রমের গোশালা-টিকে নতুনভাবে তৈরি করে তিনি সাধুদের জন্য দুধের ব্যবস্থা করেন৷ তাঁরই উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তদানীন্তন নির্দেশিকা অনুসারে সারদাপীঠের অধীন বিদ্যামন্দির কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পঠনপাঠন শুরু হয়৷ ১৯৭৯ সালে পূজনীয় স্বামী সিদ্ধাত্মানন্দজীর আহ্বানে পূজনীয় স্মরণানন্দজী মহারাজ সিঙ্গাপুরে যান কয়েকটি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য৷ এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদেশ সফর৷
১৯৮২ সালে বেলুড় মঠের নির্দেশে স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ প্রথম একটি আঞ্চলিক আবাসিক যুব সম্মেলনের আয়োজন করেন সারদাপীঠে৷ এই সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করা অনেকেই পরে স্বামী বিবেকানন্দের ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে যোগদান করেছিল৷ তারপর ১৯৮৫ সালে বেলুড় মঠে সর্বভারতীয় যুব সম্মেলন হয়৷ ১৯৮৪ সালে স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজের নেতৃত্বে সারদাপীঠে মিটিং করে ‘বিবেকানন্দ স্বাস্থ্য সেবা সঙ্ঘ’-এর পথচলা শুরু হয়৷ ‘মানব সেবাই ভগবানের পূজা’ এই আদর্শ নিয়েই এই স্বাস্থ্য সেবা সংস্থার পথ চলা৷ অনেক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, ও স্বেচ্ছাসেবক এই প্রতিষ্ঠানে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন স্বামীজীর আদর্শকে পাথেয় করে৷ তাছাড়া স্বামী স্মরণানন্দজীর নেতৃত্বে সময় সময় রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনের উপর প্রর্দশনীর ব্যবস্থা করা হয় যা গুণীজনের প্রশংসা লাভ করেছিল৷ আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজের উদ্যোগে সারদাপীঠে যুবকদের জন্য স্বনির্ভরতা আর স্বামীজীর আদর্শে সমাজসেবার প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয় ‘সমাজ সেবক শিক্ষণমন্দির’ প্রতিষ্ঠান৷ সেসময়ে স্বামী বিবেকানন্দ-কৃত সন্ধ্যারতির ভজন, কথামৃতের গান, রামনাম সংকীর্তন, কালীকীর্তন এবং শ্রীরামকৃষ্ণ- সারদা-বিবেকানন্দ বিষয়ক সঙ্গীত ও স্তোত্র রেকর্ড করে প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ ছিলেন অগ্রগামী পুরোহিত৷ স্বামী স্মরণানন্দ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন এবং সঙ্গীতের রাগ রাগিনী সম্বন্ধে তাঁর ভালো জ্ঞান ও ধারণা ছিল৷
১৯৯১ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ চেন্নাই মঠের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ সেখানে তিনি ১৯৯৫-এর মার্চ পর্যন্ত ছিলেন৷ চেন্নাইয়ে থাকাকালীন তিনি তামিলনাড়ুর বিভিন্ন স্থানের ভক্তদের নিয়ে একটি বিরাট ভক্ত সম্মেলনের আয়োজন করেন যার ফলে তামিলনাড়ুর সমস্ত গোষ্ঠী বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি ঠাকুর-মা-স্বামীজীর আদর্শভিত্তিক কেন্দ্রগুলি একত্র হয়ে তামিলনাড়ুতে রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যায়৷
১৯৯৫ সালের ১৯ এপ্রিল বেলুড় মঠে এসে স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ তার দু’বছর পর তিনি ১৯৯৭ সালের ২২ মে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর৷
তাঁর দীর্ঘ দশবছর কাল সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকার সময় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অনেক বিস্তার ও সম্মান লাভ হয়৷ তখন ডিমড ইউনিভার্সিটি হিসেবে বেলুড় মঠে বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, স্বামীজীর পৈতৃক নিবাসটি অধিগৃহীত ও পুনর্নিমিত হয়৷ ১৯৯৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রামকৃষ্ণ মিশন গান্ধী শান্তি পুরস্কার পায় ভারতের রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণের কাছ থেকে৷ ২০০৩ এর জানুয়ারিতে ইউনেস্কো মদনজিৎ সিং পুরস্কার প্রদান করা হয় রামকৃষ্ণ মিশনকে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের মধ্যে সুখ ও শান্তিমূলক নানা কার্যাবলী পরিচালনার জন্যে৷ ২০০৪-০৫ সাল জুডে় শ্রীশ্রী মায়ের আবির্ভাবের সার্ধশতবর্ষ উদযাপিত হয় বেলুড় মঠসহ অন্যান্য শাখা কেন্দ্রে৷ হায়দ্রাবাদে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান এক্সিলেন্স’ নামক প্রতিষ্ঠান৷ তাঁর নেতৃত্বেই অন্ধ্রপ্রদেশের সাইক্লোন, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ভূমিকম্প, তামিলনাড়ুতে সুনামি, পশ্চিমবঙ্গ ও ওডি়শার বন্যা প্রভৃতি ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রামকৃষ্ণ মিশন ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যে ঝাঁপিয়ে পডে়৷ সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন তিনি রামকৃষ্ণ সারদা ও বিবেকানন্দের ভাবান্দোলনকে সারা বিশ্বে ছডি়য়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন৷ দেশ গুলির মধ্যে ছিল আমেরিকা, কানাডা, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, রাশিয়াসহ ইউরোপের বেশকিছু দেশ৷ ভারতবর্ষেও তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অনেক শাখাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন৷
দীর্ঘ একদশক কাল সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এক বর্ণিল ইনিংসের গুরুদায়িত্ব পালন করে ২০০৭ সালের ২ মে বুদ্ধপূর্ণিমা তিথিতে স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ-অধ্যক্ষ (ভাইস প্রেসিডেন্ট) রূপে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ সেসময় তিনি মন্ত্রদীক্ষা প্রদান শুরু করেন৷ ২০১৭ সালের ২১ জুলাই ৮৮ বছর বয়সে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষের (প্রেসিডেন্ট) পদ অলঙ্কৃত করেন৷ তারপর তিনি দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে অগনিত ইচ্ছুক আধ্যাত্মিকতা পিয়াসী জনগণের মধ্যে ঠাকুরের নাম বিতরণ করেন৷ শেষপর্যন্ত তাঁর কাছে কৃপাপ্রাপ্ত দীক্ষিতের সংখ্যা ছিল প্রায় পঁচাত্তর হাজার৷ সাধু-ব্রহ্মচারীদের জীবন গঠনের প্রতি তিনি বিশেষ যত্ন নিতেন৷ নিজের জীবনে জপধ্যান, স্বাধ্যায় প্রভৃতি নিয়ে যে নিয়মানুবর্তিতার আদর্শ গডে় তুলেছিলেন, তা তিনি অন্য সাধু-ব্রহ্মচারীদের জীবনে ছডি়য়ে দিয়েছিলেন৷ এ এক মহৎ কাজ বৈকি! মানুষকে উন্নততর জীবনযাত্রার দিকে এগিয়ে দেওয়া৷ সব ধরণের সংকীর্ণতার পরিমন্ডল থেকে বেরিয়ে এসে এক উদার ও উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধের আধারে ও পরার্থপরতায় জীবন অতিবাহিত করা৷ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কর্মীদের প্রতি তাঁর ছিল অকৃত্রিম স্নেহ ভালোবাসা ও সদা সযত্ন দৃষ্টি৷ যখন তিনি সারদাপীঠে ছিলেন, তখন তিনি কর্মীদের বেতন সংস্কার করেছিলেন৷ যখন তিনি ক্লাসে থাকতেন, তখন তিনি গভীর নিমগ্ন চিত্তে কঠিন বিষয়কে সহজভাবে বুঝিয়ে পড়াতেন৷ প্রতিদিন কথামৃত ও গীতা পড়ার অভ্যেস ছিল তাঁর৷ গীতা তাঁর কন্ঠস্থ ছিল৷ সদা অমায়িক, রসিক ব্যবহার, অনাড়ম্বর জীবন যাপন, সত্যকে ধরে রাখা, অকপটতা প্রভৃতির কঠোর অনুশীলন তাঁর সমগ্র জীবনকে এক ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল৷
সামান্য সাধারণ ব্রহ্মচারী থেকে তিনি শেষপর্যন্ত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সর্বোচ্চ পদে বৃত হয়েছিলেন এবং সেই চলার পথে নিয়মনিষ্ঠ ও নিরহংকারী থেকে রামকৃষ্ণ সংঘের মতো একটি আধ্যাত্মিক ও মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠানকে আরও মহৎ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন এবং অগণিত মানুষকে জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ দেখিয়েছিলেন, সেখানেই তাঁর মানবজীবনের সার্থকতা৷ তাঁকে আমাদের শতকোটি প্রণাম৷