(পর্ব – ৩)
সংবিধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ
সরকারি চাকরির প্রস্তুতির এই নতুন বিভাগে প্রথমেই বেছে নেওয়া হয়েছে ভারতীয় সংবিধানকে। গত দুই সংখ্যায় গণপরিষদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সংবিধানের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ খসড়া কমিটি ও যে সমস্ত আইন সংবিধান রচনায় সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছিল, তাদেরই মধ্যে প্রধান ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইন বেছে নেওয়া হল।
খসড়া কমিটির টুকিটাকি
এই খসড়া কমিটিই ছিল সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য। সাতজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদকে নিয়ে ২৯ অগস্ট, ১৯৪৭ সালে এই কমিটি তৈরি হয়। মূলত ভারতের সংবিধান রচনা করাই ছিল এর কাজ। এঁরা হলেন:
ড. বি আর আম্বেদকর (সভাপতি)।
এন গোপালাস্বামী আয়ানগর।
আলাদি কৃষ্ণস্বামী আয়ার।
ড. কে এম মুন্সি।
সঈদ মহম্মদ সাদুলাহ্।
এন মাধব রাও (অসুস্থ বি এল মিত্রের পরিবর্তে তিনি কার্যভার নেন)।
টি টি কৃষ্ণমাচারি (মৃত্যুর কারণে ডি পি খৈতানের পরিবর্তে তিনি যোগ দেন, ১৯৪৮)।
কমিটির পক্ষ থেকে ড. আম্বেদকর ৪ নভেম্বর, ১৯৪৮-এ চূড়ান্ত খসড়া জমা দেন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯-এ ২৮৪ জন সদস্য/সদস্যার উপস্থিতিতে এবং তাঁদের হস্তাক্ষরের মাধ্যমে ঘোষিত হয় যে, ‘আমাদের গণপরিষদে আজ ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর এই সংবিধান গ্রহণ ও বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।’
সেই সময়ের সংবিধানে (২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯) ছিল প্রস্তাবনা (Preamble)-সহ ৩৯৫টি ধারা (Articles) ও ৮টি তফসিল (schedule)। যদিও বর্তমানে প্রস্তাবনা ছাড়াও ৪৪০টির বেশি ধারা ও ১২টি তফসিল আছে।
১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত ও বিধিবদ্ধ হলেও, সংবিধানের অধিকাংশটি কার্যকরী হয় ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০ থেকে। ব্যতিক্রম নাগরিকত্ব, নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়গুলো, যথা ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ৬০, ৩২৪, ৩৬৬, ৩৬৭, ৩৭৯, ৩৮০, ৩৮৮, ৩৯১, ৩৯২ এবং ৩৯৩ নং ধারাগুলো ১৯৪৯ সাল থেকেই বলবৎ ছিল। ২৬ জানুয়ারির মাহাত্ম্য।
২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০-কেই সংবিধানের শুরুর তারিখ (Date of its commencement) হিসেবে ধরা হয় ও প্রজাতন্ত্র দিবস রূপে পালিত হয়।
১৯৩০ সালের এই ২৬ জানুয়ারিতেই পূর্ণ স্বরাজ দিবস পালিত হয়।
১৯২৯ সালে (ডিসেম্বর) জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে (সভাপতি ছিলেন জওহরলাল নেহরু) গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৩০ সাল থেকে এই ২৬ জানুয়ারিতে পূর্ণ স্বরাজ দিবস পালিত হতে থাকে।
কেন্দ্রীয় শাসনতন্ত্র সম্পর্কিত কমিটি (Union Constitution Committee)। সভাপতি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু।
প্রাদেশিক শাসনতন্ত্র সম্পর্কিত কমিটি (Provincial Consti tution Committee) |
মৌলিক অধিকার ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কিত কমিটি (Committee on Fundamental Rights and Minorities)। সভাপতি সর্দার প্যাটেল।
১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইন
১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইন, ভারতীয় সংবিধান নির্মাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানে এই আইনের প্রভাব উল্লেখকরে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হল:
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো: এই আইনটি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন সৃষ্টির জন্য একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রবর্তন করে। এই ধারণাটি ভারতীয় সংবিধানের বিস্তারিত ফেডারেল কাঠামো গঠনে প্রভাবিত করে।
দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট আইনসভা: এই আইন কেন্দ্রে একটি দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করে, যা লোকসভা এবং রাজ্যসভার গঠনকে প্রভাবিত করে।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন: প্রদেশগুলিকে অধিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে, সংবিধানের ফেডারেল সিস্টেমে প্রভাব ফেলে, যা রাজ্যগুলিকে তাদের শাসন ব্যবস্থার উপর উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ দেয়।
দ্বৈত শাসনের বিলুপ্তি: প্রাদেশিক স্তরে দ্বৈত শাসনের বিলুপ্তি ঘটে এবং প্রদেশগুলিকে অধিক স্ব-শাসনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এই প্রক্রিয়া রাষ্ট্র এবং কেন্দ্রীয় স্তরে একটি সংসদীয় ব্যবস্থার প্রতি গতি দেয়।
আইনের শাসন: ১৯৩৫ সালের আইনটি আইনের শাসনের উপর যে গুরুত্ব দেয়, তা ভারতীয় সংবিধানে একটি মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশাসনিক কাঠামো: এই আইন থেকে অনেক প্রশাসনিক উপাদান, যেমন শাসনের কাঠামো এবং পরিষেবার কার্যাবলী, গ্রহণ এবং নতুনভাবে প্রয়োগ করা হয়, যা ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোর জন্য একটি স্থিতিশীল ভিত্তি প্রদান করে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন: এই আইনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ধারণা প্রবর্তন করে। যা ভারতীয় সংবিধানে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (UPSC) এবং রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো সংস্থার সংযোজন করে।
গ্রন্থ সহায়তা: ইন্ডিয়ান পলিটি; লেখক – এম লক্ষ্মীকান্ত, ম্যাকগ্রহিল প্রকাশনী।
বহুমাত্রিক নির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)
১) ভারতীয় সংবিধানের গণপরিষদের চেয়ারপার্সন কে ছিলেন?
ক) ড. বি আর আম্বেডকর
খ) মহাত্মা গান্ধি
গ) জওহরলাল নেহরু
ঘ) সর্দার বল্লভভাই পটেল
২) ভারত সরকার আইন, ১৯৩৫-এ কোন আইনগত বৈশিষ্ট্য প্রবর্তিত হয়?
ক) এক-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা
খ) দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা
গ) রাষ্ট্রপতি শাসন
ঘ) রাজতান্ত্রিক শাসন
৩) ভারত সরকার আইন, ১৯৩৫-এর অধীনে প্রদেশগুলির জন্য কী ধরনের সরকারের ব্যবস্থা হয়েছিল?
ক) কার্যকরী শাসন
খ) দ্বৈতশাসন
গ) ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন
ঘ) নিজেদের শাসন
৪) ভারত সরকার আইন কোন বছর প্রবর্তিত হয়?
ক) ১৯৩২ সালে
খ) ১৯৩৫ সালে
গ) ১৯৪৭ সালে
ঘ) ১৯৫০ সালে
৫) ভারত সরকার আইন, ১৯৩৫-এর অধীনে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল কী ছিল?
ক) একটি জাতীয় ভাষার প্রবর্তন
খ) পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রতিষ্ঠা
গ) ব্রিটিশ শাসনের সঠিক পুনরাবৃত্তি
ঘ) নির্বাচনী পদ্ধতির বিলুপ্তি
৬) ভারত সরকার আইন, ১৯৩৫ দ্বারা গুরুত্ব দেওয়া কোন নীতি পরবর্তীতে ভারতীয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল?
ক) মানুষের শাসন
খ) আইনের শাসন
গ) রাজাদের শাসন
৭) ভারত সরকার আইন, ১৯৩৫-এর প্রধান সমালোচনা কী ছিল?
ক) এটি ব্রিটিশ শাসনের জন্য অনেক বেশি স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছিল।
খ) এটি সকলের জন্য ভোট দেওয়ার অধিকার বাড়ায়নি।
গ) এটি কোনও আইনগত ক্ষমতা ছিল না।
ঘ) এটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে বাতিল করেছিল।
৮) ভারত সরকার আইন, ১৯৩৫-এর কোন অনুচ্ছেদটি ফেডারেল কোর্ট প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল?
ক) অনুচ্ছেদ ৬২
খ) অনুচ্ছেদ ২৩১
গ) অনুচ্ছেদ ১০০
ঘ) অনুচ্ছেদ ১২
৯) স্বাধীনতার পর ভারতীয় সংবিধান রচনার জন্য প্রধানত কোন সংস্থা দায়িত্বে ছিল?
ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
খ) গণপরিষদ
গ) খসড়া কমিটি
ঘ) ব্রিটিশ পার্লামেন্ট
১০) ভারত সরকার আইন, ১৯৩৫- ভারতীয় সংবিধানে কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিল?
ক) এটি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হয়েছিল।
খ) এটি বিভিন্ন সাংবিধানিক বিধানের জন্য একটি রেফারেন্স হিসেবে কাজ করেছে।
গ) এটি শব্দার্থে গ্রহণ করা হয়েছিল।
ঘ) এটি ভারতে একটি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।
(এম সি কিউ ধরনের নমুনা প্রশ্নপত্রের উত্তর থাকবে আগামী সংখ্যায়। গত সপ্তাহের উত্তর নীচে দেওয়া হল। এই প্রস্তুতিপর্ব তোমাদের কেমন লাগছে, আরও কী কী বিষয়ে জানতে চাও – আমাদের ইমেল করে জানাও। Email: dasakishor@gmail.com)
গত সপ্তাহের উত্তর
(১ খ) বি আর আম্বেডকর; ২ খ) ১৯৪৬; ৩ গ) সচ্চিদানন্দ সিনহা (অস্থায়ী সভাপতি; পরে রাজেন্দ্র প্রসাদ স্থায়ী সভাপতি হন); ৪ ক) ২৯৯ জন; ৫ গ) ২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯; ৬ খ) এইচ সি মুখার্জি; ৭ ঘ) ২৪ জানুয়ারি, ১৯৫০; ৮ গ) জওহরলাল নেহরু; ৯ ক) ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করা এবং ১০ গ) ১১টি অধিবেশন)।