সরকারি চাকরির সাতসতেরো

ফাইল চিত্র

(পর্ব – ১)

শুরু হল নতুন বিভাগ। সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য। বিশেষ করে রাজ্য সরকারি ক্লার্ক থেকে ডাবলু বি সি এস, স্কুল সার্ভিস থেকে রেলের পরীক্ষা, কেন্দ্রের গ্রাজুয়েট লেভেল থেকে ব্যাঙ্কিং সার্ভিস — সমস্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি-সংক্রান্ত সবগুলি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা হবে এখানে। সঙ্গে থাকবে চাকরির খোঁজ।সুলুক সন্ধান করবেন অভিজ্ঞ শিক্ষা-পরামর্শক, গ্রন্থকার এবং ভারতীয় নিরীক্ষা ও হিসাব দফতরের আধিকারিক অনিন্দ্য কিশোরশিক্ষার অঙ্গন থেকে সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষা-সমাপ্তি পর সমস্ত বেকার তরুণ-তরুণীদের প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে পেশাদার জীবনে প্রবেশ। শহর, জেলা ও রাজ্যের মধ্য থেকে উচ্চ মেধার সকল শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ যে কোনও একটি সরকারি চাকরি প্রাপ্তি। এই বিষয়টি মাথায় রেখে এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে সরকারি চাকরির প্রস্তুতির খুঁটিনাটি দিক-নির্দেশ এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ, সঙ্গে নমুনা প্রশ্নপত্র। সরকারি চাকরিতে মোক্ষলাভ ভ্রাতৃকন্যা ইন্দিরা দেবীকে চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন – “কৃতকার্য হবার মতো শিক্ষা যাদের নেই, যারা কেবলমাত্র দৈবক্রমেই কৃতকার্য হয়ে ওঠে, তাদের সেই কৃতকার্যতাটা একটা বিষম বালাই”। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে সফলভাবে কৃতকার্য হওয়ার পরও সরকারি চাকরি পেতে পড়ুয়াদের বেশ অসুবিধা হচ্ছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি, অধিকাংশ চাকরি প্রত্যাশীরা জেনেই উঠতে পারে না, কী ধরনের প্রশ্ন কিংবা কোন বিষয়গুলি থেকে প্রশ্ন আসে চাকরির-পরীক্ষায়। যারা চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে, প্রথম দিকে তাদের অনেকটা সময় চলে যায় বিষয়গুলির প্রকারভেদ এবং প্রশ্নের ধরন জানতে। প্রায় সমস্ত সরকারি চাকরির পরীক্ষার একটা বিষয় সাধারণ।

প্রশ্নগুলি হয় সাধারণত এমসিকিউ ধরনের।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রশ্নের সংখ্যা হয় একশোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। কখনও কখনও এর কম-বেশি হতে পারে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের পোশাকি নাম দেওয়া থাকে “সাধারণ জ্ঞান”। কিন্তু, নাম সাধারণ জ্ঞান হলেও বিষয়ের বৈচিত্র্যতা ও সংখ্যার বহর বেশ বড়। যেমন বিষয় হিসেবে থাকে ভারতের ইতিহাস, ভারতের ও পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল, ভারতের সংবিধান, পদার্থবিদ্যা জীববিদ্যা রসায়নবিদ্যা, কম্পিউটার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খেলাধুলা সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ইত্যাদি। আবার বেশ কিছু পরীক্ষায় উপরের বিষয়গুলি ছাড়াও ইংরেজি এবং অংক থেকেও প্রশ্ন আসে। প্রশ্নগুলির মান সাধারণত মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের হয়ে থাকে। তবে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের বইপত্র পড়লেই যে প্রশ্নের সমাধান সহজে করা যাবে তা কিন্তু নয়।দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, প্রশ্নপত্রে এক-একটা বিষয়ে যেমন বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হয় অর্থাৎ প্রশ্ন সংখ্যা বেশি আসে। আবার কিছু কিছু বিষয়ে যৎসামান্য সামান্য প্রশ্নও আসে। তাই চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে প্রথমেই একটা সঠিক ধারণা না থাকলে, কাঙ্খিত সফলতা পেতে পরিশ্রমের মাত্রা বাড়বে।সংবিধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরির প্রস্তুতির ধারাবাহিক যাত্রা শুরু হল ভারতীয় সংবিধান নিয়ে। এখন থেকে প্রতি প্রতিবেদনে ধারাবাহিকভাবে চাকরি সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা থাকবে। থাকবে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এবং নমুনা প্রশ্নপত্র প্রশ্নপত্র।বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতের সংবিধান ‘আইনজীবীদের স্বর্গোদ্যান’। লিখিত আকারে পৃথিবীর সমস্ত সংবিধানের মধ্যে বৃহত্তম। যারা এখনও পড়ছ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভবিষ্যতে যে-পেশাকেই নিজের করে নাও না কেন, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি।


এমনকি যদি রাজনীতিবিদও হতে চাও, তবে তো সবার আগে জানা দরকার। নইলে দেশ-দশ পরিচালনা করবে কী করে? ভোট থেকে ভেটো, অডিট রিপোর্ট থেকে অ্যামেন্ডমেন্ট, রাজ্যপাল থেকে রাষ্ট্রপতি, মৌলিক অধিকার থেকে মৌলিক কর্তব্য, বিচার থেকে বাজেট- কী নেই ভারতীয় সংবিধানে। যারা সরকারি চাকরি পেতে চাও, তাদের তো জানা আবশ্যিক। ক্লার্কশিপ, মিসলেনিয়াস থেকে শুরু করে ডব্লু বি সি এস,এমনকি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষাতেও প্রতি বছর পাঁচ থেকে পনেরো শতাংশ পর্যন্ত – প্রশ্ন আসে ভারতীয় সংবিধান থেকে।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গৃহীত শিক্ষাব্যবস্থায় সংবিধান জানার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ বড়ই দুর্বল। তাতে মন খারাপের কিছু নেই। জানানো হয়নি, তাই জান না। বরং আজই লেগে পড় “সংবিধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ” হওয়ার জন্য।সংবিধান কী ও কেন?প্রথমেই জানা যাক, সংবিধানটি কী বা এর প্রয়োজনীয়তাটাই বা কতটা। সংবিধান হল যে-কোনও দেশের সর্বোচ্চ আইনগ্রন্থ। যা সেই দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, বিচারপতি এবং – আমলাদের যেমন জানতে হয়, তেমনই নির্বাচন কমিশনার, কম্পট্রলার ও অডিটর জেনারেল প্রমুখদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী হবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে। দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল গঠন সম্পর্কে ধারণা নির্দিষ্ট করে।

রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রত্যেকটি স্তম্ভ একে অন্যের সঙ্গে, এমনকি জনসাধারণের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করবে, তারও নির্দেশ থাকে সংবিধানে। ভারতের সংবিধান জানার জন্য প্রয়োজন তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। সেই আলোচনা আপাতত দূরে সরিয়ে রেখে (পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে নজর রেখ) সরাসরি সংবিধানের মূল আলোচনায় যাচ্ছি। গণপরিষদ সংবিধান তৈরির দায়িত্বে গণপরিষদ ভারতের সংবিধান তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গণপরিষদ (Constituent Assembly)-কে। গণপরিষদ হল পরাধীন ভারতের অস্থায়ী সংসদ। যদিও স্বাধীন ভারতেও এর অস্তিত্ব কিছুদিন ছিল (১৭ এপ্রিল ১৯৫২ পর্যন্ত)। এই পরিষদ গঠিত হয় ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান মোতাবেক ১৯৪৬ সালের নভেম্বর মাসে।এই ক্যাবিনেট মিশনের সদস্যরা ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের (লেবার দল তখন ক্ষমতায়) তিন ক্যাবিনেট মন্ত্রী- স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস, লর্ড পেথিক লরেন্স এবং এ ভি আলেকজান্ডার। যদিও ১৯৩৪ সালে প্রথম গণপরিষদ গঠনের ধারণা দেন কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথপ্রদর্শক ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্রনাথ রায়। ১৯৩৮ সালে জওহরলাল নেহরু ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ভারতের নিজস্ব সংবিধান রচনা করার জন্য জোরালো সওয়াল করেন।

(গণপরিষদ ও সংবিধানের অন্যান্য সমস্ত বিষয় এবং এম সি কিউ ধরনের নমুনা প্রশ্নপত্র থাকবে আগামী সংখ্যায়।)