সরকারি চাকরির সাতসতেরো

ফাইল চিত্র

(পর্ব – ৪)

সংবিধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ

ভারতীয় সংবিধানকে বলা হয় আইনজীবীদের স্বর্গরাজ্য। এত বিস্তৃত, সুগঠিত এবং আকারে সর্ববৃহৎ সংবিধানের উদাহরণ পৃথিবীতে আর দু’টি নেই! এই সংবিধান তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন গণপরিষদের ‘খসড়া কমিটি’কে। এই কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে অনেক আলাপ-আলোচনার পর, মূল ভারতীয় সংবিধানের বর্তমান রূপদান করতে সক্ষম হন।


ভারতীয় সংবিধানে সমাবেশ ঘটেছে বহুবিধ মাত্রার গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং মৌলিক অধিকার চেতনা-সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধারা এবং উপধারার। তবে, আমাদের সংবিধান প্রস্তুতিতে যেমন সেই সময়ের পৃথিবীর অন্যান্য সংবিধানের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। ঠিক তেমনই অতীতের ভারত-সম্বন্ধীয় বেশ কিছু আইনের মৌলিক বক্তব্যগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করাও হয়েছিল। এমনই বেশ কিছু আইন, যেগুলি সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করেছিল ভারতীয় সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে, তাদেরই মধ্যে প্রধান কিছু আইনগুলি ও তার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলিকে নীচে বর্ণনা করা হল।

সাইমন কমিশন
১৯২৮ সালে নিয়োজিত সাইমন কমিশন ভারতীয় সংবিধান রচনায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। কারণ, এটি ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। কমিশনে ভারতীয় প্রতিনিধিত্ব না-থাকা সত্ত্বেও, এর সুপারিশগুলি ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দেয় এবং ভারতীয়দের শাসন-ব্যাবস্থায় অংশগ্রহণের জন্য দাবিগুলি জোরালো করে। এটির মাধ্যমে ভবিষ্যতের সাংবিধানিক আলোচনায় ভারতীয় কণ্ঠস্বর অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠে।

তা ছাড়াও, সাইমন কমিশন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর আহ্বান, সংবিধানের কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন রূপরেখার জন্য একটি ভিত স্থাপন করে। কমিশনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া এবং বিবাদ রাজনৈতিক আন্দোলনকে আরও উদ্দীপিত করে তোলে। স্ব-শাসনের দাবিকে আরও মজবুত করে। যা ভারতীয় সংবিধানের একটি মূলনীতি হয়ে ওঠে।
ভারত শাসন আইন, ১৯১৯
# দ্বৈতশাসন প্রবর্তন: ১৯১৯ সালের আইনে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ফলে, ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনের শ্রেণিবিন্যাসের পথ উন্মোচিত হয়।
# দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা: কেন্দ্রীয় স্তরে দু’টি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বর্তমানে যা লোকসভা এবং রাজ্যসভা নামে পরিচিত। ফলে, সংসদে দ্বিকক্ষীয় আইনসভার পথ প্রশস্তিত হয়।
# ভারতীয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: আইনসভায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে, সংবিধানে গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বর ধারণা অনুপ্রাণিত হয়।
# প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন: প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পদক্ষেপের ফলে, সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনের প্রভাব শুরু হয়।
# সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্ব: সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক নির্বাচনী এলাকা প্রবর্তন করা হয়। ফলে, সংবিধান প্রণয়নের সময় সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়।

ভারত শাসন আইন, ১৯০৯
# ভারতীয় কাউন্সিল বা পরিষদ: এই আইনে ভারতীয় কাউন্সিলে আরও বেশি ভারতীয় সদস্য থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়। ফলে, শাসনব্যবস্থায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
# বিভক্ত নির্বাচনী এলাকা: এই আইনে মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনী এলাকা সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়। যা ভবিষ্যতের সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে আলোচনা প্রভাবিত করে।
# ভারতীয়দের দাবির রাজনৈতিক স্বীকৃতি: এই আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের বিভিন্ন রাজনৈতিক অধিকার এবং দাবি-দাওয়াগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে, ভারতীয়দের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
# আইন প্রণয়নের কাঠামো: এই আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সুস্পষ্টতা পায়। ফলে, ভবিষ্যতে ভারতীয়দের নিজস্ব সংবিধান-রচনার পথ প্রশস্ত হয়।

ভারত শাসন আইন, ১৮৫৮
# ক্ষমতার স্থানান্তর: ভারত শাসন আইন ১৮৫৮ মোতাবেক ভারতীয় শাসন-ব্যবস্থার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেয় ব্রিটিশ রাজ। ফলে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থার ক্ষমতার হস্তান্তর হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে ব্রিটিশ শাসন-ব্যবস্থার অধীনে।
# কেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক ব্যবস্থা: ভারতীয় শাসন-ব্যবস্থা পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় স্তরে একজন সচিব নিয়োগ করা হয়। এই সচিবের উপরেই ১৮৫৮ পরবর্তী সময় ভারতীয় শাসন-ব্যবস্থার সমস্ত খুঁটিনাটি দায়িত্ব ন্যস্ত থাকত।
# প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থা: এই আইনে ভারতীয়দের শাসন-ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করার যৌক্তিকতাকে গ্রহণ করা হয়েছিল। বিশেষত ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর। ফলে, এই আইনের মধ্যেই পরবর্তী সময়ে সংবিধান রচনার বীজ অন্তর্নিহিত ছিল।
# প্রশাসনিক সংস্কার: এই আইনের মাধ্যমে একত্রিত এবং কেন্দ্রীভূত শাসন-ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে যে শাসন-ব্যবস্থার রূপ, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার গুলিতে প্রচলিত তার শুরুয়াদ কিন্তু হয়েছিল সেই ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমেই।
গ্রন্থ সহায়তা: ইন্ডিয়ান পলিটি; লেখক – নীরজ রাও এবং নীতিশ শংকর, ওয়াইলি ইন্ডিয়া প্রকাশনী।

বহুমাত্রিক নির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)
১) ১৯১৯ সালের ভারত সরকার আইনে কোন শাসন-ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়?
ক) প্রত্যক্ষ শাসন
খ) দ্বৈতশাসন
গ) এক-কক্ষ আইনসভা
ঘ) যুক্তরাষ্ট্রীয় ধারণা

২) ভারত সরকার আইন, ১৯১৯ দ্বারা কোন দু’টি কক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়?
ক) কেন্দ্রীয় আইনসভা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত
খ) হাউস অফ কমনস এবং লর্ডস
গ) রাষ্ট্রপতি পরিষদ এবং আইনসভা
ঘ) আইনসভা এবং রাজ্যসভা

৩) ভারত সরকার আইন, ১৯১৯-এ কোনটি বাড়ানোর লক্ষ্য ছিল?
ক) ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ
খ) শাসন-ব্যবস্থায় ভারতীয় প্রতিনিধিত্ব
গ) পৃথক নির্বাচনী এলাকা
ঘ) প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন

৪) ভারত সরকার আইন, ১৯০৯-এ মুসলিম প্রতিনিধিত্বের জন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ ধারাটি প্রবর্তিত হয়?
ক) সর্বজনীন ভোটাধিকার
খ) পৃথক নির্বাচনী এলাকা
গ) সরাসরি নির্বাচন
ঘ) সকল আইনসভায় সংরক্ষিত আসন

৫) ভারত সরকার আইন, ১৯০৯-এ প্রবর্তিত সংস্কারগুলি কী নামে পরিচিত?
ক) মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার
খ) মর্লে-মিন্টো সংস্কার
গ) ভারত সরকার আইন
ঘ) রাওলাট আইন

৬) ভারত সরকার আইন, ১৯০৯-এ কোন সংস্থায় ভারতীয় সদস্য-সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে?
ক) ব্রিটিশ সংসদ
খ) আইনসভা
গ) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
ঘ) প্রাদেশিক আইনসভার আসন

৭) ভারত সরকার আইন, ১৮৫৮-এ কোন বৃহত্তর পরিবর্তন আনা হয়?
ক) যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা
খ) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিলুপ্তি
গ) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা
ঘ) দ্বিকক্ষ আইনসভার প্রবর্তন

৮) ভারত সরকার আইন, ১৮৫৮-এ কোন পদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়?
ক) রাজ্যপাল
খ) ভারতীয় রাজ্যের জন্য পৃথক সচিব
গ) ভাইসরয়
ঘ) প্রধান বিচারপতি

৯) সাইমন কমিশন কখন নিয়োজিত করা হয়?
ক) ১৯২৭ সালে
খ) ১৯২৮ সালে
গ) ১৯৩০ সালে
ঘ) ১৯৩৫ সালে

১০) সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে কী মূল সমস্যা যা প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল?
ক) সুপারিশের অভাব
খ) কমিশনে ভারতীয় সদস্যদের অনুপস্থিতি
গ) প্রতিবেদনের বিলম্ব
ঘ) ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের বিরোধিতা

১১) সাইমন কমিশন ভারতের ভবিষ্যৎ-শাসন সম্পর্কে কী সুপারিশ করেছিল?
A) একক কক্ষ আইনসভা
B) পৃথক নির্বাচনী এলাকা
C) একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো
D) ব্রিটেন থেকে সরাসরি শাসন-ব্যবস্থা কায়েম

(এম সি কিউ ধরনের নমুনা প্রশ্নপত্রের উত্তর থাকবে আগামী সংখ্যায়। গত সপ্তাহের উত্তর নীচে দেওয়া হল। এই প্রস্তুতিপর্ব তোমাদের কেমন লাগছে, আরও কী কী বিষয়ে জানতে চাও – আমাদের ইমেল করে জানাও। Email: dasakishor@gmail.com)

গত সপ্তাহের উত্তর
(১ ক) ড. বি আর আম্বেডকর; ২ খ) দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা; ৩ গ) ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন; ৪ খ) ১৯৩৫ সালে; ৫ খ) পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রতিষ্ঠা; ৬ খ) আইনের শাসন; ৭ খ) এটি সকলের জন্য ভোট দেওয়ার অধিকার বাড়ায়নি; ৮ খ) অনুচ্ছেদ ২৩১; ৯ গ) খসড়া কমিটি এবং ১০ খ) এটি বিভিন্ন সাংবিধানিক বিধানের জন্য একটি রেফার)।