স্কুলের খরচ বাড়ছে, ‘কম্পোজিট গ্র্যান্ট’ চেয়ে শিক্ষা দপ্তরের দ্বারস্থ শিক্ষকরা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে চলল, অথচ এখনও বহু স্কুল ‘কম্পোজিট গ্রান্ট’ পায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, কাজকর্ম চালাতে বহু স্কুল কম্পোজিট গ্রান্টের উপরে নির্ভরশীল। এই টাকা এখনও না-পাওয়ায়, সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। ওদিকে মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ বাড়ছে স্কুলগুলোর। তাই কম্পোজিট গ্র্যান্ট চেয়ে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের দ্বারস্থ হলেন শিক্ষকরা। এব্যাপারে শিক্ষা দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন একাংশ শিক্ষকেরা। অবশ্য এখনও পর্যন্ত শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে এবিষয় কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়নি।

শিক্ষকদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ের ৭ মাস অতিক্রান্ত হলেও কম্পোজিট গ্র্যান্টের অর্থ পায়নি বহু স্কুল। ফলে, আর্থিক সংকটের মধ্যে পঠনপাঠন চালাতে হচ্ছে স্কুলগুলোকে।

তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই রাজ্যের স্কুলগুলোতে বহুবিধ প্রকল্প চলছে। রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর ও শিক্ষা দপ্তর থেকে স্কুলগুলোকে এই প্রকল্পগুলো চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় এই প্রকল্পগুলোর দায়িত্ব পেয়েছে স্কুলগুলো। কিন্তু এই প্রকল্পগুলো পরিচালনার খরচ সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।


তাঁদের আরও বক্তব্য, প্রকল্পগুলো চালানোর খরচ, নিজেদের তহবিল থেকেই বহন করতে হয়েছে স্কুলগুলোকে। তার উপর চলতি বছর থেকে স্কুলে স্কুলে সেমিস্টার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সূচনা হয়েছে একাধিক নতুন বিষয়ের। সেই বিষয়গুলো পড়ানোর জন্য অস্থায়ী শিক্ষকও নিয়োগ করতে হয়েছে অধিকাংশ স্কুলকে। শুধু তা-ই নয়, একাদশের প্রশ্নপত্র থেকে শুরু করে এমসিকিউ উত্তরপত্রও নিজের খরচে ছাপাতে হচ্ছে স্কুলগুলোকে। সেক্ষেত্রে বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে তাদের। ফলে, বেশিরভাগ স্কুল সমস্যায় পড়েছে।

উল্লেখ্য, স্কুল পরিচালনার জন্য কম্পোজিট গ্র্যান্ট পায় স্কুলগুলো। রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হয় এই প্রদেয় অর্থ। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষে এখনও সেই গ্র্যান্ট হাতে পায়নি বহু স্কুল। ফলে, স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েছে বেশিরভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে নড়েচড়ে বসেছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন। তাঁদের দাবি, কম্পোজিট গ্র্যান্ট প্রদান করার পাশাপাশি সেই গ্র্যান্টের অর্থও বৃদ্ধি করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে অল পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি চন্দন গড়াই জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের স্কুলগুলোকে ২৪-২৫ অর্থবর্ষের কম্পোজিট গ্র‍্যান্ট বাবদ বরাদ্দ অর্থ দেওয়া হয়নি। এমনকী, অর্থবর্ষের ৭ মাস অতিক্রান্ত হলেও স্কুল পরিচালনায় ব্যবহৃত এই ফান্ডের অর্থ না পেয়ে সমস্যায় পড়েছে বেশিরভাগ স্কুল।

তাঁর বক্তব্য, ছোট ছোট স্কুলগুলো (অধিকাংশ জুনিয়র হাইস্কুল) এই কম্পোজিট ফান্ডের উপর নির্ভর করে থাকে। তাছাড়া যে সকল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা কম, সেই সকল স্কুলগুলোর তহবিলের অর্থ খুবই কম। এছাড়াও বহু সংখ্যক স্কুলের কম্পোজিট গ্র্যান্ট ছাড়া অন্য কোনও ফান্ড পাওয়ার পরিস্থিতি নেই। তাই অবিলম্বে এই ফান্ড প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি সংগঠনের দাবি, মূল্যবৃদ্ধির কারণে পড়ুয়াদের সংখ্যা অনুযায়ী নিদিষ্ট কম্পোজিট গ্র্যান্ডের অর্থ বৃদ্ধি করতে হবে।

অন্যদিকে, এবিষয়ে শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে চলল, অথচ আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলো তাদের প্রাপ্য কম্পোজিট গ্র্যান্ড পেল না ! আমরা শিক্ষা দফতরের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে বিদ্যালয়গুলোর কম্পোজিট গ্র্যান্ট প্রদান করা হোক। কারণ, বহু বিদ্যালয় ঋণ করে কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছে।’

যদিও এপ্রসঙ্গে শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানিয়েছিলেন, ‘কম্পোজিট গ্র্যান্ট, ইউনিফর্ম গ্র্যান্ট এবং স্কুল মেরামতি গ্র্যান্ট রাজ্য ও কেন্দ্র যৌথ ভাবে দেয়। কেন্দ্রের তরফের অংশ মিলছে না। কেন্দ্রকে তাদের অংশ দেওয়ার কথা বার বার বলা হয়েছে।’