• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

‘সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত’ সর্বদা কার্যকর

আজকাল হার্ড ওয়ার্ক এর সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট ওয়ার্ক বলে একটি কথা যুক্ত হয়েছে। হার্ড ওয়ার্ক হচ্ছে দীর্ঘ সময় কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার সংমিশ্রনের ফল। কঠোর পরিশ্রমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় ও শক্তি বিনিয়োগ করতে হয়। 'স্মার্ট ওয়ার্ক' তেমনি দীর্ঘ সময়ের পরিবর্তে অল্প সময়ের মধ্যে কাজটা সম্পন্ন করা।

নিশীথ সিংহ রায়

আমি এই কাগজেই ‘শিক্ষনীয় কিছু জীবন’ বলে এক প্রতিবেদন লিখেছিলাম। যেখানে বিশ্বের ব্যতিক্রমী কিছু মানুষের জীবনী তুলে ধরে ছিলাম। যাঁরা নিজের কাজের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল, একাগ্রতা বা ধৈর্য্যশীল, কঠোর সংকল্প ও তারজন্য জীবনে কতটা নৈতিকতা এবং ত্যাগের পরিচয় দিয়েছিলেন তা দেখিয়ে ছিলাম। আর আজ লিখছি মানব জীবনের ব্যর্থতা বা পরাজয় নিয়ে। কালজয়ী মানুষেরা কেন পরাজিত বা ব্যর্থ হননি বা হন না তা একটু তুলে ধরার চেষ্টা করছি। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষই ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে পারেন কিন্তু সফল মানুষেরা কি করে সেই ব্যর্থতার কাঁটাতার পেরিয়ে নিজেদের সফল করেছেন ও বিশ্ববাসীকে গর্বিত করেছেন তাই লেখার মূল প্রতিপাদ্য। এক্ষেত্রে প্রথমেই বলি জীবনে ‘ব্যর্থতা’ বা ‘পরাজয়’ বলে কিছু হয় না। কাজে বিফল হলে এক হয় তার থেকে আমরা শিখব ও পুনরায় চেষ্টা করব। যাতে পরেরবার আর সেই একই ভুল আর না করি। আর কাজে সফল হলে আমরা জিতব। এগুলি বহু শ্রুত বা ব্যবহৃত শব্দ এবং এই নিয়ে চিন্তাশীল মনীষীরা তাঁদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মতামত এবং বিশ্বে অনেক আদর্শ উদাহরণ দিয়ে গেছেন যেখান থেকে বোঝা যায় ‘ব্যর্থতা’ বা ‘পরাজয়’ তাঁদের সফলতার একটা সোপান মাত্র। চাবিকাঠি মাত্র।

এক্ষেত্রে আমরা আমাদের পাঠ্য বইয়ে অনেক সফল মানুষের জীবনী পড়েছি যেখানে দেখেছি তাঁরা বারংবার ব্যর্থতার পরেও মনোবল না হারিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এবং সফলতা অর্জন করেছেন। এছাড়াও অনেক নীতিগল্পও পড়ি। যেখানে আমাদের দেখানো হয়েছে বারংবার পরাজয় সফলতার চাবিকাটি হতে পারে। তার মানে ব্যর্থতা আসতেই পারে এনিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আর ঘুরিয়ে বললে এটি সফল হবার একটি ধাপ। হ্যাঁ, পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা জীবনে শুধু পরাজয়ের স্বাদই পেয়ে গেছেন। সেক্ষেত্রে কেউ যদি শুধু ব্যর্থতার স্বাদই পেতে থাকে তাহলে আমরা কিভাবে বলবো যে ব্যর্থতা সফলতার একটা ধাপ মাত্র? আর পৃথিবীতে এরকম মানুষ অনেক আছেন যাঁরা শুধুমাত্র ব্যর্থ হতে হতে ক্লান্ত। তাঁরা অনেক চেষ্টা করেও সফলতার অর্জন করতে পারেনি। তাহলে আমরা কি তাঁদের ক্ষেত্রেও বলতে পারি ব্যর্থতা সফলতার সোপান মাত্র? হ্যাঁ, আপাতদৃষ্টিতে বলতে পারি মানুষটি ব্যর্থ এবং তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা সফলতার চাবিকাটি নয়। কিন্ত বাস্তবে এটা সত্য নয়। মানুষটি পরাজিত তাঁর নিজের দোষে। প্রথমেই জানতে হবে তিনি সেই কাজের আদৌও উপযুক্ত কিনা? তিনি যে কাজটির উপযুক্ত নন তার পিছনে অহেতুক সময়, শ্রম বা অর্থ ব্যয় করছেন। সোজা কথায় তিনি মূর্খামির পরিচয় দিচ্ছেন। মানে তাঁর পক্ষে যা অসম্ভব সেই কাজের পিছনে ছুটছেন। এটাও কি বাস্তব সত্য একজনের কাছে যা সম্ভব আর একজনের কাছে তা অসম্ভব? অবশ্যই। এটাই বাস্তব। একজনের কাজে যা সম্ভব অন্যের কাছে তা অসম্ভব। ছোট্ট উদাহরণ একজন পেশাদার কুলি মাথায় দেড়শ কিলো ওজন বইতে পারেন এবং এটা তার কাছে খুবই সাধারণ ব্যাপার। এদিকে যদি একজন অপেশাদার কুলির মাথাতেও ওই একই ওজন দেওয়া হয় তাহলে কি হবে?

ভাবলেও গা শিউরে উঠবে। শুধু দৈহিক ক্ষমতা কেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটা সত্য। একজন বিমান চালাতে পারেন কিন্ত তিনি যে গরুর গাড়িও চালাতে সক্ষম হবেন তা কিন্ত নাও হতে পারে। মানে সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষা থাকলেও সব পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। খুব সাধারণ একটা বুদ্ধির ব্যাপার বলি, দশ তলার ছাদ থেকে নীচে নামার জন্য আমরা কি সরাসরি লাফ দেব? লাফ দিলে যা হবার তা হবেই। আর বাস্তববাদী বা একেবারে সাধারণ বুদ্ধির একজন মানুষও সেই দশতলার ছাদ থেকেই নামবে কিন্ত উপযুক্ত ব্যবস্থা বা প্রতিরোধ নিয়ে। মানে সিঁড়ি, লিফ্ট, এসক্যালেটর এসব ব্যবহার করার কথা ভাববে। এর মানে অতি মূর্খরাই লাফানোর কথা ভাবতে পারে। আর তখন তারা নিজেদের মূর্খতাকে ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করবে। এবার যদি আমরা ঘুরিয়ে বলি তাহলে মানে দাঁড়ায় ‘মূর্খরাই বারবার ব্যর্থতার মুখ দেখে’।

সেজন্য ‘মূর্খামির আর এক নাম ব্যর্থতা’। সেকারণে সবার আগে নিজের দক্ষতা বা ক্ষমতার সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কোন কাজটা আমার পক্ষে উপযুক্ত তা না জানলে জীবনে শুধু ব্যর্থতার পর ব্যর্থতাই আসবে। আর সেটার কারণে সে হীনমন্যতায় ভুগবে। শুধুই মনে হবে আমার দ্বারা কোনো কাজই হবে না। আর এরা, এদের সংস্পর্শের মানুষদের সর্বদা নেতিবাচক কথা বলে নিরুৎসাহী করবে। একারণে পাশ্চাত্য দুনিয়ায় শিশু বয়স থেকেই তার জীবনের চলার পথ নির্ণয় করে তাকে সেদিকে চালিত করা হয়। যাতে সে ভবিষ্যতে নিজের ক্ষমতা বা দক্ষতা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকে। আমরা বলি, পরিশ্রমের অপর নাম সাফল্য। পরিশ্রম করলে সাফল্য আসতে বাধ্য। মানে সাফল্য পেতে গেলে পরিশ্রম করতেই হবে। এটা ঠিক ‘কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই’। কঠোর পরিশ্রম বলতে বোঝায় কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য তার পিছনে অবিরাম লেগে থাকা এবং প্রচেষ্টা করা। এটা অবিরাম লেগে থাকার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের মেলবন্ধন। আপাতদৃষ্টিতে এই কথাটা সত্য হলেও সম্পূর্ণ সত্য নয়। দীর্ঘ সময় এবং কঠোর পরিশ্রমের সাথে আর একটা কথা যোগ হবে তা না হলে কঠোর পরিশ্রম ও দীর্ঘ সময় ব্যয় করলেও ফল বিফলে যেতে বাধ্য। সেটা হলো ওই পরিশ্রমের সাথে ‘সাধারণ বুদ্ধি’ প্রয়োগ। কোন কাজটা তার পক্ষে উপযুক্ত সেটা তাকে জানতেই হবে। এটাই হচ্ছে সাধারণ বুদ্ধি। যাঁর এই ‘সাধারণ বুদ্ধি’ নেই তার পরিশ্রম এবং সময় বিফলে যেতে বাধ্য। এজন্যই বলা হয় নির্বুদ্ধি বা বোকা মানুষের দ্বারা সাধারণত সঠিক কাজ হয় না এবং এটা প্রমাণিত। আগেই বলেছি একারণে মূর্খরাই বারবার ব্যর্থ হয়। তার মানে তারা জানে না তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা বা কোন কাজটা কোন পদ্ধতির দ্বারা করলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছান যায়।

একটা সহজ উদাহরণ যেটা আমরা সর্বদা দিই তা হল এক বোকা মানুষ সারাদিন একটা দশ টন পাথরকে ঠেলে সরাতে না পেরে ভাববে তার পক্ষে কোন কাজ হবে না। এখানে ওই একই কথা সে তার সাধারণ বুদ্ধিটুকুও প্রয়োগ করেনি। কাজটা তার পক্ষে যে অনুকূল নয় সেটাই সে জানে না। এতে হয়তো সে হীনমন্যতায় ভুগবে, ভাববে তার দ্বারা আদৌ কোনো কাজ হবে না। ঠিক যেমন যে মানুষটির অংক বা পদার্থবিজ্ঞান সম্বন্ধে সাধারণ বুদ্ধিটুকু নেই সে আইনস্টাইনের ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ বুঝে যাবে এটা ভাবাও কাল্পনিক। এখানে কিন্ত কোনো পুঁথিগত বিদ্যার কথার বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে শুধুমাত্র তার সাধারণ বা সহজাত বুদ্ধির কথা। যা প্রতিটি মানুষের কমবেশি থাকে। এই জন্যই প্রতিটি মানুষকে আগে নিজেকে জানতে, চিনতে হবে। তার ক্ষমতা, তার দুর্বলতা সবকিছু সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকতেই হবে।

সমাজে সে নিজেকে কি বলে প্রতিপন্ন করছে সেটা বড় বা আসল কথা নয়। আসল কথা হচ্ছে সে নিজের ক্ষমতা বা দুর্বলতা সম্বন্ধে ঠিক জানে কিনা? না জানলে সাধারণ, অসাধারণ কোনো বুদ্ধিই কাজে আসবে না। আজকাল হার্ড ওয়ার্ক এর সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট ওয়ার্ক বলে একটি কথা যুক্ত হয়েছে। হার্ড ওয়ার্ক হচ্ছে দীর্ঘ সময় কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার সংমিশ্রনের ফল। কঠোর পরিশ্রমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় ও শক্তি বিনিয়োগ করতে হয়। ‘স্মার্ট ওয়ার্ক’ তেমনি দীর্ঘ সময়ের পরিবর্তে অল্প সময়ের মধ্যে কাজটা সম্পন্ন করা। দক্ষ পদ্ধতি এবং কৌশলগত দিককে স্মার্ট ওয়ার্কের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়। হ্যাঁ, আধুনিক সময়ে ‘সময়’ একটা বড় ফ্যাক্টর। এখন সময় মেপে কাজ করা হয়। আর এখন কাজ ভিত্তিক মাহিনা এবং সেখানে হার্ড ওয়ার্ক ও স্মার্ট ওয়ার্কের সংমিশ্রন হতে বাধ্য। তাই সেখানে সাধারণ বুদ্ধি থাকাটা আবশ্যিক। যাইহোক না কেন একটা কথা বলি স্থান, কাল, পাত্র ভেদে যারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা সর্বদা সফল হয়। আর তা প্রয়োগ বা চিন্তা করাটাই হচ্ছে ‘সাধারণ বুদ্ধি’।