প্রকাশ মাধ্যমিকের ফল, প্রথম কোচবিহারের চন্দ্রচূড়

সেরা দশে ৫৭

নিজস্ব প্রতিনিধি – অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের৷ ২রা মে, বৃহস্পতির সকালেই ফল প্রকাশ হলো মাধ্যমিক পরীক্ষার৷ এদিন সকাল ৯ টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফল প্রকাশ করেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়৷ এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২ রা ফেব্রুয়ারি এবং পরীক্ষা শেষ হয় ওই মাসেরই ১২ তারিখ৷ এবছর মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় রয়েছে ৫৭ জন পরীক্ষার্থী৷ এবছর মাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করেছে কোচবিহারের রামভোলা হাইস্কুলের ছাত্র চন্দ্রচূড় সেন, প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৩ অর্থাৎ ৯৯ শতাংশ পেয়ে চন্দ্রচূড় উত্তীর্ণ হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানাধিকারী পুরুলিয়া জেলা স্কুলের ছাত্র সাম্যপ্রিয় গুরু, তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২৷ তৃতীয় স্থানে রয়েছে তিনজন, বীরভূমের নিউ ইন্টিগ্রেডেড হাইস্কুলের ছাত্রী পুষ্পিতা বাঁশুরি, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট হাইস্কুলের ছাত্র উদয়ন প্রসাদ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র নৈঋতরঞ্জন পাল, তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯১৷ চতুর্থ স্থানে রয়েছে কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশনের তপজ্যোতি মণ্ডল৷ পূর্ব বর্ধমানের পারুলডাঙা নসরতপুর হাইস্কুলের অর্ঘ্যদীপ বসাকের নাম রয়েছে পঞ্চম স্থানে৷ দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট হাইস্কুলের কৃশানু সাহা, মালদার মোজামপুর হাইস্কুলের মহম্মদ শাহাবুদ্দিন আলি, পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের কৌস্তভ সাহু ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের অলিভ গায়েন, এই চার পরীক্ষার্থীর নাম রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে৷ মেধাতালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে ৭ জন পরীক্ষার্থীর নাম৷ মেধাতালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে ৪ জন পড়ুয়ার নাম৷

সব মিলিয়ে এবার মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় প্রথম ১০-এ রয়েছে ৫৭ জন পড়ুয়া৷ মেধাতালিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ৮ জন, দক্ষিণ দিনাজপুর, পূর্ব বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ৭ জন, বাঁকুড়া, মালদা ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ৪ জন, বীরভূম থেকে ৩ জন, উত্তর ২৪ পরগনা, কোচবিহার ও হুগলি থেকে ২ জন এবং নদিয়া, হাওড়া, পুরুলিয়া ও কলকাতা থেকে ১ জন করে পড়ুয়ারা রয়েছে৷ এবার ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৪১১ জন পড়ুয়া৷ যা গত বছরের তুলনায় ১২ শতাংশের বেশি৷ এবার মাধ্যমিকে পাশের হার সবচেয়ে বেশি উত্তরের কালিম্পংয়ে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, তৃতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর৷ এবার পরীক্ষা দিয়েছিল ৯ লক্ষের বেশি পড়ুয়া, তার মধ্যে মোট পাশ করেছে ৭ লক্ষ ৬৫ হাজার ২৫২ জন ছাত্রছাত্রী৷ গত বছরের তুলনায় পাশের হার বেড়েছে ৮৬.৩১ শতাংশ৷ এবার মাধ্যমিকে মহিলা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল বেশি৷ ফলপ্রকাশের পরই উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এক্স হ্যান্ডেলে টু্যইট করে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷


১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচন৷ এর মধ্যেই ফলপ্রকাশ হলো মাধ্যমিকের৷ ৯০ দিনের মধ্যে ফল ঘোষণার কথা থাকলেও, পড়ুয়াদের অপেক্ষায় ইতি টেনে নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন আগেই ফলপ্রকাশ করলো মধ্যশিক্ষা পর্ষদ৷ অর্থাৎ এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষের ৮০ দিনের মধ্যেই ফল ঘোষণা করা হল৷ ৫১ হাজার ৮৩৮ জন এক্সামিনার ছিলেন এবার৷ প্রত্যেক পরীক্ষা কেন্দ্রেই ছিল কড়া নজরদারি, সিসিটিভির আওতায় ছিল প্রত্যেক কেন্দ্র৷ উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলির মতো এবারও ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে রেজাল্ট দেখার সুযোগ পাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা৷ পর্ষদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে লগ ইন করে মার্কশিট ডাউনলোড করার সুযোগও পায় পড়ুয়ারা৷ বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিট থেকেই অনলাইনে ফল জানার সুবিধা দেওয়া হয়েছে৷ তবে এর জন্য লাগছে রোল নম্বর ও জন্ম তারিখ৷ ফল ঘোষণার দিনই পরীক্ষার্থীরা হাতে পেয়ে যায় মার্কশিট, যেটি তাদের সংগ্রহ করতে হয় নিজ স্কুল থেকেই৷ কৃতি ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের স্বপ্নের উড়ান দিয়েছে৷ ফল প্রকাশের পর প্রত্যেকেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ব্যক্ত করেছে নিজেদের স্বপ্ন৷ কেউ বা হতে চেয়েছে ডাক্তার, কেউ বা করতে চেয়েছে গবেষণা৷ এরই মাঝে প্রথম স্থানাধিকারী চন্দ্রচূড় সেনের কথায় এবং সুন্দর, মার্জিত বাংলা ভাষায় মুগ্ধ হয়েছে গোটা বাংলা৷ উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছরে মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় প্রথম দশের লড়াইয়ে বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল কলকাতা৷ কিন্ত্ত এবার নিজ অবস্থান বদলেছে, তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে কলকাতা৷ পূর্ব মেদিনীপুর প্রতিবারের ন্যায় এবারও দ্বিতীয় স্থানে নিজ অবস্থান বজায় রেখেছে৷ বঙ্গবাসীকে অবাক করে দিয়ে, মেধাতালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে পাহাড়ি জেলা কালিম্পং৷ দিনে দিনে বাড়ছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাশের হারও, যা বাংলার সেকেন্ডারি শিক্ষাব্যবস্থার এক সদর্থক দিক বলেই মনে করছে শিক্ষামহল৷

ছাত্র জীবনের সব চেয়ে বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকে আবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ছাত্ররা মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়ে জেলার মুখ উজ্জ্বল করল৷ এ বছর মেধা তালিকায় আট জন আছেন৷ তার মধ্যে ছ’জনই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র দল৷ পরম্পরা বজায় রেখেছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রবৃন্দ৷ নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের আবাসিক স্কুলের প্রধান কর্ণধার স্বামী ইষ্টেশানন্দ মহারাজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে জানান, তাঁদের স্কুলের প্রথম দশের ছ’জন ছাত্র যথাক্রমে, নৈঋত পাল তৃতীয়, অলিভ গায়েন ষষ্ঠ, আলেখ্য মাইতি সপ্তম, নবম দুজন ঋত্বিক দত্ত ও ঋতব্রত নাথ ও শুভ্র কান্তি জানা দশম স্থান অধিকার করেছেন৷ এদিন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রদের ধারাবাহিক সাফল্যের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ইষ্টেশানন্দ মহারাজ বলেন, এটি একটি আবাসিক স্কুল৷ তপোবনের মতো পরিবেশ৷ ছাত্রদের কারো হাতে মোবাইল থাকে না৷ নিরবিচ্ছিন্নভাবে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা, খেলাধূলা একসঙ্গে মিলেমিশে চলা৷ ছাত্রদের শারীরিক মানসিক বৌদ্ধিক সাংস্কৃতিক বিকাশের পথে নিয়ে যাওয়া৷ একে অপরের সাহায্য নিয়ে একসাথে বড় হওয়া৷ জানা গেল, এবছর জেলার আরো দুজন মেধা তালিকায় নিজেদের স্থান করে নিয়েছে৷ ওদের তৈরি করেছেন সোনারপুর বিদ্যাপীঠ ও সারদা বিদ্যাপীঠ-এর শিক্ষক মন্ডলী৷ এ বছর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল পঁয়ষট্টি হাজার সাতশো সাতজন৷ এর মধ্যে ছাত্র কুডি় হাজার দুশো তেষট্টি ছাত্রী সাঁইত্রিশ হাজার চারশো চুয়াল্লিশ৷ এ খবর বৃহস্পতিবার বিকেলে দৈনিক স্টেটসম্যানকে জানালেন, শাসকদলের শিক্ষা সেলের অজিত কুমার নায়েক ও তপন কুমার মন্ডল৷