নিট-ইউজি ২০২৪: নিখুঁত প্রশ্ন ফাঁসের মূল কারিগর কাটিহারের ডাক্তার শুভম মন্ডল

সিল না ভেঙেই প্রশ্নপত্রের বাক্স খোলায় পারদর্শী

দিল্লি, ২২ জুন: প্রশ্নপত্র বাক্সের সিল ভাঙা নেই, অথচ প্রশ্নপত্র লুট হয়ে গেছে। কিভাবে এই অসাধ্য সাধন সম্ভব? নিট-ইউজি (NEET-UG 2024) পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস বিতর্কের মধ্যেই তদন্ত সংস্থার হাতে উঠে এল একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য! অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীদের চক্ষু চড়কগাছ! জানতে পারেন, এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের নেপথ্যে রয়েছেন ২৭ বছরের এক সিঁধেল প্রশ্ন চোর। তিনি বিহারের কাটিহারের সরকারি ডাক্তার শুভম মন্ডল। এখানকার সরকার পরিচালিত একটি হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন শুভম। তদন্তকারী স্পেশাল টাস্কফোর্স (STF) ৯০০ পাতার চার্জশিটে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উল্লেখ করেছে।

এসটিএফ-এর অভিযোগ, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূলমন্ত্র শুভমের জানা ছিল। ধৃত অন্যান্য অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে শুভমের হদিশ মেলে। এরপর ১৭ মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে তাঁকে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালের নিট পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগেও তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


শুভম মূলত পাটনার বাসিন্দা। তিনি নালন্দা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। শুভমের বন্ধু বিট্টুও ২০২১ সালে পাটনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। ঘটনায় ১৮ অভিযুক্তের মধ্যে মূল পান্ডা রবি অত্রি এবং অন্যতম পান্ডা সরকারি ডাক্তার শুভম মণ্ডল। ইতিমধ্যে এই ১৮ অভিযুক্তের সকলকেই গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। শুভম প্রশ্নপত্র বাক্সের সিল না ভেঙে তালা খুলে ফেলার অব্যর্থ কৌশল আয়ত্ত করেছেন। স্পেশাল টাস্কফোর্স (STF)-এর চার্জশিটে শুভম মণ্ডল ও রবি অত্রি ছাড়াও আর যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা হলেন রাজীবনয়ন মিশ্র, টিসিএস এক্সপ্রেস কর্মী শিবম গিরি, রোহিত পান্ডে, অভিষেক শুক্লা ও দিল্লি পুলিশের কনস্টেবল বিক্রম পাহাল সহ অন্যান্যরা।

জানা গিয়েছে, আমেদাবাদের একটি বাগানবাড়িতে প্রশ্নপত্রের বাক্স রাখা ছিল। সেখান থেকে প্রশ্নপত্রের বাক্সের সিল না ভেঙে বাক্স খোলেন শুভম। এভাবে লুঠ করা প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ফাঁস করে দেয় অভিযুক্তরা। তদন্তে জানা যায়, রাজীব নয়নের পূর্ব পরিচিত শুভম। আবার রবির পূর্ব পরিচিত রাজীবনয়ন। এই রাজীবনয়নই প্রশ্ন ফাঁসের মূল পান্ডা রবির সঙ্গে শুভমের যোগসূত্র তৈরি করে দেয়। পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা যাতে কোনও কিছু বুঝতে না পারে সেজন্য রবি শুভমের সিল না ভেঙে বাক্স খোলার বিদ্যাকে কাজে লাগায়। এরপর সেই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন মোটা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়। এসটিএফ তদন্তে জানতে পেরেছে, কয়েক শো চাকরিপ্রার্থী মানেসরের একটি রিসর্টে যায়।

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কিভাবে বিহারের কাটিহারের ডাক্তার শুভম আমেদাবাদের ওই বাগানবাড়িতে যাওয়ার ছাড়পত্র পেলেন? এস টি এফ-এর চার্জশিটে সেই তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল পান্ডা রবি এব্যাপারে সমস্ত ব্যবস্থা করে রাখেন। শুভমকে পাটনা থেকে আমেদাবাদে যাওয়ার বিমানের টিকিট করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আরও দেওয়া হয় দুই লক্ষ টাকা। ৫ ফেব্রুয়ারি শুভম আমেদাবাদের ওই বাগানবাড়িতে প্রবেশ করে নিজের কৌশল প্রয়োগ করে হাতসাফাই করেন। প্রশ্নপত্রের বাক্সের সিল না ভেঙেই বাক্স খুলে ফেলেন। এরপর কোড ২ প্রশ্নপত্রের ছবি তোলেন। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি ফের একইভাবে সিল না ভেঙে বাক্স খুলে কোড ১ প্রশ্নপত্রের ছবি নেন। তারপর বাক্স অক্ষত অবস্থায় রেখে চলে আসেন। পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থার কর্মকর্তারা ঘুণাক্ষরেও এই চুরির বিষয়টি ঠাহর করতে পারেননি। এদিকে চুরি হওয়া প্রশ্ন এই ১৮ জন অভিযুক্তের চক্রের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্নপত্রগুলি হরিয়ানার মানেসর, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের বাগপত থেকে মধ্যপ্রদেশের রেওয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

গত ১৭ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশ পুলিশে ৬০ হাজার ২৪৪ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেই পরীক্ষায় আবেদন করেন মোট ৪৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর গত ২৫ মার্চ সরকার গোটা পরীক্ষা প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়। পাশাপাশি, এই প্রশ্ন ফাঁসের তদন্ত এসটিএফের হাতে তুলে দেয়। এস টি এফ তদন্তে নেমে এই চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ৪০২ জনকে গ্রেফতার করে। যাঁদের অধিকাংশই বিহার, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। এই তদন্তের অতিরিক্ত চার্জশিট শীঘ্রই জমা দেবে এসটিএফ।