কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ‘জব ফেয়ার’ দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য নিয়েছে শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ করে দেওয়া। আর এই লক্ষ্যের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ‘চাকরি মেলার’ আয়োজন, যা আগামীতে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের পথকে সুগম করবে। সম্প্রতি দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় তিনদিনব্যাপী বার্ষিক অনুষ্ঠান ‘প্রগতি’। এই বার্ষিক অনুষ্ঠানের অভিনব দিক ছিল তিনদিনের কর্মসংস্থান উদ্যোগ, ‘জব ফেয়ার’। ছাত্রছাত্রীদের চাকরির সুযোগ ও সহায়তা পরিষেবা প্রদানের উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য প্রদীপ মজুমদার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শ্রম, আইন ও বিচার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মলয় ঘটকের প্রত্যক্ষ সমর্থন, উৎসাহ ও সার্বিক সহযোগিতায় চাকরি মেলা (Job Fair), খাদ্য উৎসব (Food Festival), মহাবিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকদের সংবর্ধনা দান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ‘অ্যানুয়াল সোশ্যাল ফাংশন’ সমন্বিত এই বার্ষিক অনুষ্ঠান ‘প্রগতি’ আয়োজিত হয়৷

‘প্রগতি’-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও যাঁদের গৌরবময় উপস্থিতি ছিল তাঁরা হলেন দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. দেবনাথ পালিত, দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারপার্সন শ্রীমতি অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, ডেপুটি মেয়র শ্রী অভিজিৎ ঘটক, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক শ্রী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শ্রী দীপঙ্কর লাহা, সিএমইআরআই-এর অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিশ্বজিৎ রুজ, ইএসআই হাসপাতালের প্রসিদ্ধ অর্থোপেডিক ড. উদয়ন চৌধুরী এবং দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন প্রশাসক বোর্ডের সকল সদস্যগণ। সম্মাননীয় অতিথিরা বার্ষিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।


জব ফেয়ার উপলক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা ও পরামর্শ, ই-কমার্স, ম্যানুফ্যাকচারিং, কমিউনিকেশন, হাই টেক গ্রোথ, ব্যাঙ্কিং ও ফিনান্স, হেলথ কেয়ার অ্যাণ্ড লাইফ সায়েন্সেস, ফার্মেসি ইত্যাদি বিভিন্ন সেক্টর থেকে দেশের মোট ২৫টি বেসরকারি কোম্পানির অংশগ্রহণ চাকরি মেলাটিকে সফল হয়ে উঠতে সাহায্য করে। দুর্গাপুর সরকারি কলেজের মোট ৩৫০ জন প্রাক্তনী (২০২১-২০২৪ এই সময়ে স্নাতক স্তরে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী) এই চাকরি মেলায় আগত বিভিন্ন কোম্পানী থেকে চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন। এর পূর্বেও ২০২৪ সালের মে মাসে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যে ‘অন-ক্যাম্পাস’ ও ‘অফ ক্যাম্পাস’ নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তাতে চারটি বেসরকারি কোম্পানিতে মোট ১২০ জন ছাত্রছাত্রী চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছিল।

এই মহাবিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং প্লেসমেন্ট সেলের উদ্যোগে ২০২৪ সালের মে মাস থেকে এখনো পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসের মধ্যে মহাবিদ্যালয়ের মোট ৪৭০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন। কতৃপক্ষের দাবি, এই স্বল্প সময়ে এত বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর বিভিন্ন কোম্পানিতে নিয়োগ ‘জেনারেল ডিগ্রি কলেজের’ একটি রেকর্ড ব্রেকিং পরিসংখ্যান। অনুদীপ ফাউন্ডেশনের সক্রিয় সহযোগিতায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত বিনামূল্যে কমিউনিকেটিভ ইংলিশ, সফট স্কিল, ভাষা দক্ষতা, প্রাথমিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সিভি রাইটিং এবং ইন্টারভিউ প্রশিক্ষণের ফলেই এই ধরনের সাফল্য লাভ সম্ভব হয়েছে।

দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে চাকরি মেলার আয়োজন এবং এই মেলায় অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে অনুদীপ ফাউন্ডেশন তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চাকরি মেলায় শিক্ষার্থীদের তথ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যাঙ্কের কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দুর্গাপুর ইউকো ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা তিন দিনের এই চাকরি মেলায় বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ও আর্থিক ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের অবগত করেন।

বার্ষিক মেগা ইভেন্ট ‘প্রগতি’-র আর একটি উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ ছিল খাদ্য উৎসব (Food Festival)। তিনদিনের এই খাদ্য উৎসবের উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উদ্যোক্তা দক্ষতার বিকাশ ঘটানো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা এই খাদ্য মেলায় মোট ১৪টি খাবারের স্টল দিয়েছিল। উপস্থিত সকলেই স্টলগুলিতে থাকা খাবারের গুণগত মান ও বৈচিত্র‍্যের প্রশংসা করেন।

এছাড়াও কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের পরীক্ষায় কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের স্নাতক (Honours) ও স্নাতকোত্তর স্তরে (রসায়ন, সংরক্ষণ জীববিদ্যা ও ভূতত্ত্ব বিদ্যা) সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকদের ‘উৎকর্ষ’ সম্মান প্রদান করা হয় এই মহাবিদ্যালয় থেকে। পাশাপাশি, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ের স্নাতক (Program) স্তরের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকদের (২০১৯-২০২৪) ‘মেধা পুরস্কারে’ সম্মানিত করা হয়।
কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মহাবিদ্যালয়ের ১০০ জন ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করে তাদের শৈল্পিক দক্ষতার পরিচয় তুলে ধরে। কলকাতার একটি নামী ব্যাণ্ডের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তিনদিনের এই অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।

দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অকুণ্ঠ সমর্থন, সহযোগিতা এবং উৎসাহের ফলেই এই ধরনের অভিনব বার্ষিক অনুষ্ঠান সাফল্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে।