নিশীথ সিংহ রায়
ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরটিকে ভাগীরথী নদী দু-ভাগ করেছে৷ ১৮৬৯ সালে জঙ্গিপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়৷ ২০০১ সালের আগে পর্যন্ত দুপারের যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে ফেরি নৌকাই ভরসা ছিল৷ রাজ্যের অন্যতম ব্যস্ত ফেরিঘাট বলে পরিচিত গাড়িঘাট ও সদরঘাট৷ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করে ২০০১ সালে ভাগীরথী নদীর ওপর সেতু নির্মিত হয়৷ ভূপ্রকৃতির দিক থেকে ভাগীরথীর পূর্বপাড়ের অঞ্চলকে বাগড়ি অঞ্চল ও পশ্চিমদিকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে রাঢ় বলে৷ মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত আম-লিচুর বাগানগুলি এই বাগডি় অঞ্চলের উর্বর ভূমিতে অবস্থিত৷
জঙ্গিপুরের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুপ্রাচীন৷ জঙ্গিপুর মহকুমাকে বাংলা তথা ভারতের মানুষ দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের শহর হিসাবে চেনে৷ মুর্শিদাবাদ থেকে প্রকাশিত প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘জঙ্গিপুর সংবাদ ‘ দাদাঠাকুরের সম্পাদনায় ১৩৪৭ বঙ্গাব্দ বা ১৯৩৯ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে৷ দাদাঠাকুরের ‘বিদুষক’ কিংবা ‘বোতল পুরাণ’ বাংলার ব্যঙ্গ সাহিত্যের উজ্জ্বল সংযোজন৷ এই জঙ্গিপুরের জিনদিঘি গ্রামে বাস করতেন তদানীন্তন সময়ের গ্রামবাংলা কাঁপানো বিখ্যাত কবিয়াল গুমানি দেওয়ান (১৩০২—১৩৮০ বঙ্গাব্দ)৷ কথিত আছে তাঁর কবিগান শুনে বিশ্বকবি মুগ্ধ হয়েছিলেন৷ গুমানি দেওয়ানকে শ্রদ্ধা জানাতে বিগত দশ বছর ধরে সরকারি উদ্যোগে রাজ্য কবিয়াল মেলাটি জিনদিঘি গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়৷ জঙ্গিপুর কলেজের উপকণ্ঠে অবস্থিত ধনপতনগর গ্রাম৷ এই গ্রামেই জন্মেছিলেন প্রবাদপ্রতিম আলকাপ শিল্পী ধনঞ্জয় মণ্ডল ওরফে ঝাঁকসু৷ গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ষাটের দশক জুড়ে গ্রামবাংলা উত্তাল করা লোকনাট্য এই আলকাপ৷ আলকাপ শিল্পকে উৎকর্ষের চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন ঝাঁকসু৷ মুর্শিদাবাদের আরেক ভূমিপুত্র বিখ্যাত ঔপন্যাসিক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ আলকাপ ও আলকাপ শিল্পী ঝাঁকসুকে অবলম্বন করে রচনা করেছেন “মায়া মৃদঙ্গ” উপন্যাস৷ গত চৌদ্দ পনের বছর ধরে আরেকটি ঘটনার জন্য ভারতীয় রাজনীতিতে জঙ্গিপুর আলোচনায় থেকেছে৷ এখান থেকেই ভারত বিখ্যাত রাজনীতিবিদ প্রণব মুখোপাধ্যায় জীবনে প্রথম লোকসভা ভোটে জিতে মাথা উঁচু করে সংসদে প্রবেশ করেছিলেন এবং পরে ভারতের একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতি হিসাবে সসম্মানে দায়িত্ব সামলেছেন৷ সেই জঙ্গিপুরের একমাত্র জেনারেল ডিগ্রি কলেজ জঙ্গিপুর কলেজের বিশাল প্রাঙ্গণে আজ আমরা উপস্থিত৷
জঙ্গিপুর শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা ভাগীরথী নদীর পূর্বপাড়ে চোখজুড়ানো মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে জঙ্গিপুর কলেজের অবস্থান৷ এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী মানুষের অদম্য চেষ্টায় ১৯৫০ সালের আগস্ট মাসে গভর্নমেন্ট স্পন্সরড ইন্টারমিডিয়েট কলেজ হিসাবে এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়৷ জঙ্গিপুর কলেজ তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল৷ ১৯৯৯ সালে জঙ্গিপুর কলেজ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে৷ ন্যাকের মূল্যায়নে বি-ডাবল প্লাস ও গ্রিন অডিট সহ আইএসও সার্টিফায়েড এই কলেজে মেইন বিল্ডিং ও অ্যানেক্স বিল্ডিং মিলিয়ে দুটি পৃথক বিল্ডিং আছে৷
আছে ৬০ আসন বিশিষ্ট একটি ছাত্রাবাস৷ এক সময় পাশাপাশি দুটি ছাত্রাবাস ছিল৷ তখন আশেপাশের জেলাগুলি থেকে, বিশেষত মালদা ও দুই দিনাজপুর থেকে অনেক ছাত্র এই কলেজে পড়াশোনা করতে আসত৷ এখন ব্লকে ব্লকে কলেজ প্রতিষ্ঠার ফলে স্বাভাবিকভাবে ছাত্রাবাসের চাহিদা কমে গেছে৷
কেন্দ্র সরকারের বিশেষ অনুদানে নির্মীয়মান ছাত্রীনিবাসটি অসম্পূর্ণ৷ কলেজের মাননীয়া প্রিন্সিপাল ডক্টর প্রার্থিতা বিশ্বাস জানালেন, ‘গার্লস হস্টেল তৈরির প্রথম কিস্তির টাকার কাজ সম্পূর্ণ করে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পাঠানো হয়েছে৷ দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এলেই খুব শীঘ্রই সেটা সম্পূর্ণ করা যাবে৷’
জঙ্গিপুর কলেজের আশেপাশের প্রায় ১৪টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য উচ্চশিক্ষা লাভের অন্যতম ঠিকানা জঙ্গিপুর কলেজ৷ জঙ্গিপুর যথেষ্ট পুরনো শহর হলেও এলাকার সাধারণ মানুষের প্রধান জীবিকা চাষাবাদ, বিড়ি বাঁধা ও রাজমিস্ত্রির কাজ৷ এক সময় এলাকায় রেশম শিল্পের রমরমা ছিল৷ ছিল পশম ও কাঁসা শিল্পের কাজ৷ সে সব এখন অতীত৷ এখন দক্ষ বিড়ি শ্রমিক ও দক্ষ রাজমিস্ত্রির জন্য দেশজুড়ে জঙ্গিপুরের পরিচিতি৷ স্বাভাবিকভাবে এই কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মূলত এইসব পরিবার থেকে আসে এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে তারা দেশবিদেশের বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে নিজেদের আলোকিত করে চলেছে৷
এই কলেজে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য শাখা মিলিয়ে বর্তমান ছাত্রছাত্রী সংখ্যা প্রায় ন’হাজার৷ ছাত্রছাত্রীদের প্রায় পঞ্চান্ন শতাংশ সংখ্যালঘু পরিবার থেকে, তিরিশ শতাংশ তপসিলি জাতি ও প্রায় পাঁচ শতাংশ তপসিলি উপজাতি ভুক্ত৷ ছাত্রছাত্রীদের প্রায় তিরিশ শতাংশ প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া৷ কলেজের মোট ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ;সেটা প্রায় ৬০ শতাংশ৷ সামগ্রিকভাবে এইসব পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সুদীর্ঘ ৭৪ বছর ধরে এই কলেজ এলাকার শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছে৷
বর্তমানে প্রিন্সিপাল ও লাইব্রেরিয়ানসহ এই কলেজের অধ্যাপক অধ্যাপিকার সংখ্যা ৬৯ জন৷ স্থায়ী ও ক্যাজুয়াল মিলিয়ে শিক্ষাকর্মীর সংখ্যা ৩২৷ পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অঙ্ক, উদ্ভিদবিদ্যা, জীববিদ্যা ও পরিবেশ এই ছয়টি বিষয় নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ৷ বিজ্ঞানের এই ছ’টি বিষয়ে অনার্স বা এনইপি ২০২০ অনুযায়ী মেজর ও মাইনর বিষয় হিসাবে পড়ানো হয়৷ কলা বিভাগে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, অর্থবিদ্যা, ভূগোল ও সংস্কৃত— এই আটটি বিষয়ে অনার্স বা এনইপি ২০২০ অনুযায়ী মেজর ও মাইনর এবং এডুকেশন ও আরবি বিষয় দুটি জেনারেল ও মাইনর বিষয় হিসাবে পড়ানো হয়৷ বাণিজ্য বিভাগে শুধুমাত্র হিসাবশাস্ত্র বিষয়ে অনার্স বা মেজর বিষয় হিসাবে পড়ানো হয়৷
স্নাতক স্তরের পঠনপাঠন শেষ করে বিভিন্ন কারণে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পড়াশোনা করতে পারে না, তাদের জন্য এই কলেজে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও এডুকেশনে এম.এ পড়ার সুযোগ আছে৷ এই কলেজে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের স্টাডি সেন্টার আছে৷ আছে নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সায়েন্স ও আর্টসের একাধিক বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করার সুযোগ৷
জঙ্গিপুর কলেজে ল্যাব-বেসড বিষয়গুলির জন্য পৃথক পৃথক আধুনিক ল্যাবরেটরি আছে৷ মোট আশিটি কম্পিউটার নিয়ে দুটি কম্পিউটার ল্যাব আছে৷ কলেজের অনেকগুলি ক্লাসরুমে অডিও ভিসু্যয়াল সুবিধা ও দুটি স্মার্ট ক্লাসরুম আছে৷ এই কলেজের বটানি বিভাগের তত্ত্বাবধানে একটি ভেষজ উদ্ভিদের বাগান আছে৷
প্রায় পঞ্চাশ হাজার বই ও ই-বুকের সম্ভার নিয়ে আছে একটি অত্যাধুনিক সেন্ট্রাল লাইব্রেরি—যা পশ্চিমবঙ্গের খুব কম কলেজে আছে৷ লাইব্রেরিতে বিভিন্ন বিষয়ের পত্রপত্রিকা,জার্নাল ও ই-ম্যাগাজিন আছে৷ আছে ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের জন্য রিডিং রুম৷
জঙ্গিপুর কলেজের প্রত্যেক ফ্লোরে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আছে পরিচ্ছন্ন টয়লেট৷ মেয়েদের কমনরুমে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন ও ডেস্ট্রয় মেশিন আছে৷ আছে ডে-কেয়ার সেন্টার৷
কলেজে একটি আধুনিক ক্যান্টিন আছে; যেখানে প্রতিদিন ভাত, রুটি, সবজি, মাছ, মাংস বা ডিম সহ সব ধরনের খাবার স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায় এবং যেখানে প্রতিদিন অনেক অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রছাত্রী প্রয়োজনীয় খাওয়া দাওয়া করে৷
বাউন্ডারি ওয়াল দ্বারা সুরক্ষিত কলেজের একটি বিশাল খেলার মাঠ আছে৷ সবুজে ঘেরা এই মাঠে ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত খেলাধূলা করে৷ এছাড়াও কলেজের এনসিসি ইউনিটের ট্রেনিং ক্লাসগুলো মূলত খেলার মাঠে হয়৷ এই কলেজের এনসিসি ইউনিটের বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে অংশগ্রহণ করে এসেছে৷ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলির মধ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তাদের সাফল্য উল্লেখযোগ্য৷
কলেজের এনএসএস ইউনিটটি বহু পুরনো৷ কলেজ ও কলেজের বাইরে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তাদের সেবামূলক কর্মসূচি সম্বছর চালু থাকে৷ প্রত্যেক বছর তারা আশেপাশের দু-তিনটি গ্রামকে দত্তক হিসাবে গ্রহণ করে গ্রামের সার্বিক বিকাশে সহায়তা করে৷ এনসিসি-র নিয়মিত কর্মসূচির মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তদান শিবির, থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা শিবির, স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবির, ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা, ন্যাপকিন বিতরণ, গঙ্গা ও পরিবেশ দূষণ বিষয়ে সচেতনতা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ইত্যাদি৷ এসএসএসের প্রোগ্রাম অফিসার অধ্যাপক বিপ্লব দাস বললেন, “এ বছর বর্ষার আগে কলেজ চত্বর, খেলার মাঠ, ভাগীরথীর পাড়সহ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সহস্রাধিক গাছ লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে৷ আমাদের ইউনিটের ছেলেমেয়েরা শুধুমাত্র গাছ লাগিয়ে দায়িত্ব শেষ করবে না; সেই গাছের পরিচর্যায় তারা সারাবছর যত্নশীল থাকবে৷”
এই কলেজের অভ্যন্তরীণ উৎকর্ষ মূল্যায়ন শাখার নেতৃত্বে ও কলেজ পরিচালন সমিতির অকুণ্ঠ সহযোগিতায় এবং প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অকুণ্ঠ উৎসাহে সিলেবাস কেন্দ্রিক পঠনপাঠনের বাইরে কলেজের বিভিন্ন উপসমিতি নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিরন্তর কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে৷ যেমন, সাংস্কৃতিক উপসমিতি, সেমিনার উপসমিতি, উইমেন্স সেল, ইকু্যয়াল অপরচুনিটি সেন্টার, প্রকাশনা উপসমিতি, আইসিসি (ইন্টারনাল কম্পলেন্ট কমিটি), ইত্যাদি কমিটিগুলি নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, সচেতনতা শিবির, পত্রপত্রিকা প্রকাশ করে থাকে৷ পালনীয় দিবসগুলি অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়৷ অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু পালচৌধুরী নিজে একজন গুণী সংগীত শিল্পী৷ যেহেতু তিনি সাংস্কৃতিক উপসমিতির আহ্বায়ক, ফলে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি গুণমানে খুব উচ্চাঙ্গের হয়৷ কলেজের অভ্যন্তরীণ উৎকর্ষ মূল্যায়ন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডক্টর বাসুদেব চক্রবর্তী বললেন, “পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজ হলেও আমাদের সেরা শক্তি রিসোর্স৷ কলেজের প্রিন্সিপাল ম্যাডাম, লাইব্রেরিয়ান স্যার সহ প্রতিটি বিভাগে অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন অধ্যাপক-অধ্যাপিকা আছেন৷ সেটা হয়তো সব কলেজেই আছে কিন্ত্ত আমাদের বাড়তি স্ট্রেনথ হলো, সেইসব অধ্যাপকদের ৯০ শতাংশ কাজের দিনগুলোতে জঙ্গিপুরে অবস্থান করেন৷ ফলে কলেজের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও একটা বিরাট মেধাশক্তি কলেজের উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারেন৷”
কলেজের প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও ভূগোল বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নিয়মিত এস্কারশান হয়৷ অন্য বিভাগগুলিও নিয়মিত ব্যবধানে শিক্ষামূলক ভ্রমণ ও পিকনিকের আয়োজন করে থাকে৷ এইসব কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের মধ্যে গড়ে ওঠে আন্তরিক সম্পর্ক৷
জঙ্গিপুর কলেজের প্রাক্তনীদের খুব শক্তিশালী সংগঠন ‘জঙ্গিপুর কলেজ অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন’৷ দেশবিদেশের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সফল প্রাক্তনীরা কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং দু-এক বছর পরপর রি-ইউনিয়ন মিলিত হয়৷ এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এলাকার সফল ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানালেন, “জঙ্গিপুর কলেজের সঙ্গে যুক্ত থাকার আনন্দ আমাদের জীবনের অন্যতম বড়ো সুখ৷ কলেজে গেলেই আমরা ছাত্রজীবনের দিনগুলিতে ফিরে যায়৷ সেই জন্য কলেজের উন্নয়নে আমাদের কোনও ভূমিকা থাকলে সানন্দে পালন করার চেষ্টা করি৷ আগামী বছর কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আমাদের বড়ো পরিকল্পনা আছে৷’
কলেজের বাংলা বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ডক্টর নুরুল মোর্তজা জানালেন, ‘১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের আধুনিকতার রূপকার শ্রীভজনকুমার সরকার মহাশয়৷ শ্রী সরকার ২০১২— ২০১৭ সালের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন৷ তিনি ছিলেন স্থানীয় বাঙ্গাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক৷ ভজনবাবুর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও ভালো কাজ করার অদম্য ইচ্ছা এবং তদানীন্তন কমিটির সদস্যদের সমবেত উদ্যোগে কলেজের খোলনলচে পাল্টে আক্ষরিক অর্থে আধুনিক রূপ লাভ করে৷ প্রিন্সিপালসহ বর্তমান পরিচালন সমিতির সম্মানীয় সদস্যগণ সেই ধারা অব্যাহত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷’
চলতি বছরের শেষের দিকে এই কলেজে তৃতীয় দফার ন্যাক ভিজিট৷আগামী বছর ৭৫ বছর পূর্তি৷ সবমিলিয়ে কলেজে সাজসাজ আবহ৷প্রিন্সিপাল, অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মী — সবাই খুব ব্যস্ত৷ সেই সূত্র ধরে শিক্ষক সংস্থার সম্পাদক অধ্যাপক তারক মণ্ডল জানালেন, এ বছর প্রবল গ্রীষ্ম সত্ত্বেও আমরা ছুটি নিইনি৷ কলেজের স্বাভাবিক পঠনপাঠন অব্যাহত রেখে যথাসম্ভব প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা করে চলেছি৷ সেই জন্য শিক্ষক সংস্থার সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই৷”
জঙ্গিপুরে না এলে, এই কলেজে এসে সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করলে সত্যিই জীবনের একটা বড়ো অভিজ্ঞতা অপূর্ণ থেকে যেত৷ একটি কলেজের প্রিন্সিপাল, অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মী, বর্তমান ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তনীরা যে কত আন্তরিক হতে পারে, শুধু কাজের জায়গা হিসাবে নয়, ভালোবেসে আপন করে নিলে একটি প্রতিষ্ঠান যে কত শ্রীমণ্ডিত হয় তা দেখতে হলে আপনাকে একবার জঙ্গিপুর কলেজ যেতে হবে৷